আব্বার কথা কি বলবো! কৈশোর পর্যন্ত কতটুকুই-বা তার সঙ্গ পেয়েছি? আব্বা অর্ধেকটা জীবন প্রবাসে কাটিয়েছেন। মানে, জীবনের মধ্যখানের প্রায় কুড়ি বছর। তারপর যখন আব্বাকে কাছে পাওয়ার সময় হলো তখন আবার আমি পরবাসী। আব্বাকে নিয়ে লিখতে হলে প্রথমেই বলতে হয়, আব্বা খাঁটি কৃষক। চৈত্রের রোদে পোড়া তামাটে বর্ণের কৃষক। সেই কৃষক এখনো লালপুরে ধান বুনে, পাট জাগ দেয়। গাভীর দুধ দোহান, বিহান বাজারে আলু, ডাটা বিক্রি করেন। এমন একজন কৃষকের ছেলে আমি দেশ-বিশ্ব পরিক্রমার খবরের পেছনে ছুটি। আমার ভেতরে প্রোথিত আছে সেই খাঁটি কৃষকের রক্ত। আমি ভাবি, তার হেঁটে যাওয়া পথই আমার অনুসরণীয়।
প্রবাসে কাটানো কুড়ি বছর আগেও কৃষক, কুড়ি বছর পরেও তিনি কৃষক। আর মধ্যখানের কুড়িতে তিনি ছিলেন পরোক্ষ কৃষক। প্রবাসে কি তিনি খুব ভালো ছিলেন? পড়ালেখা জানেন না। এক সময় প্রবাস জীবন তার কাছে হয়তো বিষাদময়ই হয়ে উঠেছিল। তাইতো চিঠিতে লিখলেন: ‘আমি ক্লান্ত। প্রবাস জীবন আর ভালো লাগে না।’ কৃষকের সন্তান হলেও কীভাবে যেন মাঝে মাঝেই কথক হয়ে উঠতেন আব্বা। অন্তত আমার চোখে তো বটেই। পেশাগত কারণেই হোক, কিংবা শখের বসেই হোক, শিল্প সংস্কৃতির সংশ্রব কিছুটা হলেও পেয়েছি আমি। কিন্তু কেন জানি আমার কাছে আব্বাই পৃথিবীর বড় দার্শনিক, বড় কাহিনীকার।
আব্বার প্রবাস জীবন শুরু হয়েছে আমার জন্মের বছরদেড়েক পর থেকে। দুই বছর পরপর তিন কী চার মাসের জন্য পেতাম। যখন বুঝতে শিখেছি আব্বাকে ওই, ওই সময়টুকুর জন্যই কাছে পেয়েছি। আব্বা দেশে আসতেন, আমরা তিন ভাই, আমাদের অসম্ভব আদর করতেন। আমি ছোটবেলা থেকে কারও কথা তেমন শুনতাম না। একটু নাছোড়বান্দা ধরনের। যৌথ পরিবার। আবার কৃষি কাজও চলতো সমান তালে। কিন্তু আমি কোনো কাজ করতাম না। এই নিয়ে আমার দাদি; আব্বা দেশে এলে নালিশ করতেন। আব্বা বলতেন, ‘ধরে নাও এই আমাদের লজিং মাস্টার।’ একবার আব্বা এক রমজানের ঈদের আগে দেশে এলেন। আব্বার সঙ্গে নদীতে গোসল করতে গেলাম ঈদের দিন সকালে। তখন সম্ভবত আমি ফোর কি ফাইভে পড়ি; আব্বা আমার গায়ে সাবান দিয়ে ডলে দিয়ে বললেন, ‘যা এবার ডুব দিয়ে আয় পানি থেকে।’ আমার স্মৃতিতে তা যেন এখনো অমলিন। কৈশোরে খুব বেশি স্মৃতি না থাকায় একটু আধটু যেটুকুই আব্বাকে কাছে পেয়েছি, সেটুকুতেই কেমন এক অপার্থিব মায়ায় যেন আব্বা আমাকে বেঁধে রেখেছেন। আর আমার কাছে তো সেই সবই এখন পৃথিবীর সবচেয়ে দামি সময়।
আব্বার কাছে আমরা ভাইয়েরা ছিলাম নরম, কোমল। যেন ফুলের শরীর, টোকা লাগলেই ব্যথা পাবো। আব্বা কোনোদিন আমাদের কাউকে মারধর করেননি। কেমন জানি একটা আলতো করে জীবন কাটিয়ে দিলেন ছেলেদের কাছে। ওই অর্থে কোনো ক্ষোভ বা রাগও কখনো দেখাননি আমাদের সঙ্গে। অন্য ভাইদের কথা বাদই দিলাম, আমি ছেলেবেলায় ছিলাম বেশ চঞ্চল। আবার বড় হয়ে আব্বার অনেক টাকা পয়সা নষ্ট করেছি। তারপরও আব্বা নির্মোহভাবে আমাকে আশ্রয় প্রশ্রয় দিয়ে গেছেন। এখনো দিচ্ছেন। এই জন্যই কিনা দীর্ঘ প্রবাস জীবন কাটালেও, আমার পুরো জীবনকে আচ্ছন্ন করে আছেন তিনি। ঠিক এখনো।
সম্ভবত চিঠি যুগের শেষ প্রজন্ম আমরা। আব্বা চিঠি লিখতেন আম্মাকে। আমাদের (ভাইদের) কথাও লিখতেন। তখন যৌথ পরিবার আমাদের, চাচার কাছেও লিখতেন। আবার আব্বার কাছ থেকে কেউ দেশে আসলে অডিও রেকর্ড করে পাঠাতেন। সেই ঘণ্টাব্যাপী অডিও ক্যাসেট পরিবারের সবাই মিলে বসে বসে শুনতাম। এখন মনে হলে হাসি পায়। আব্বা কাকাকে বলতেন, ‘হামিদ ওলাইশ্শার খেতের ধান কেমন হয়েছে?’ আব্বা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সংসারের কথা বলতেন। কীভাবে উন্নতি করতে হবে সে কথা বলতেন। নাম ধরে ধরে সবার কথা বলতেন। একবার এমনই এক ক্যাসেটে আব্বা বললেন, তিনি যখন কাকার পাঠানো চিঠিতে জানলেন দুইশো মণ ধান হয়েছে, তখন তার সেকি আনন্দ! থাকতেন মালয়েশিয়ায়। বাসা থেকে সাইকেলে কর্মস্থলে যেতেন। দুইশো মণ ধান হয়েছে মনে হলে সাইকেলের গতি এমনিতেই বেড়ে যেত। আসলে কৃষকের সন্তান তো, প্রবাসে টাকা উপার্জন করলেও কৃষিই তো একমাত্র ভাবনা। সে ভাবনাকে কখনোই মন থেকে মুছে ফেলেননি। কীভাবে চাষবাস করলে লাভবান হওয়া যাবে চাচাকে আব্বা বলতেন। খুব কষ্টসাধ্য এবং কঠিন হলেও আব্বা ফোন করতেন তখন। ছয়মাস কি তিনমাস পর পর আব্বা ফোন করতেন। তখন আম্মাকে জেলা শহরে যেতে হতো কথা বলার জন্য। টিএন্ডটিতে ফোন করতেন। এলাকার এক পরিচিত ব্যবসায়ীর টিএন্ডটি ফোন ছিল নরসিংদী শহরে, আমি আম্মার সঙ্গে গেলাম একবার। সময় আগেই দেওয়া থাকতো। সে এক বিশাল ব্যাপার! ঢাকা থেকে এক্সটেনশন নাম্বারে সম্ভবত সংযোগ দেওয়া হতো। ওই বার যে কি খুশি আমার, আব্বার কণ্ঠ শুনলাম ফোনে। কী বলেছিলাম আজ আর মনে নেই।
তিন ভাইয়ের মধ্যে আমি একমাত্র একটু পড়াশোনা করেছি। আমি যেবার মেট্রিক পাস করলাম, আব্বার সেকি খুশি! প্রবাসে বন্ধুদের দাওয়াত করে খাইয়েছেন শুনেছিলাম। আব্বা কিছুটা আবেগপ্রবণও। একবার এক ঈদে আমি প্যান্ট-শার্ট জুতা সবই কিনেছি। তারপরও আবার পাঞ্জাবির বায়না ধরলাম। আম্মা দিবেন না। আম্মা মিতব্যায়ী মানুষ, ভবিষ্যৎ ভাবা লোক। আম্মার কথা প্রয়োজনের বেশি দরকার নাই। ছেলে পাঞ্জাবী চেয়েছে কিন্তু পাচ্ছে না, এই কথা শুনে আব্বা রাগ করলেন। বললেন, ‘এতো কষ্ট করে প্রবাসে থাকি কেন, ছেলেদের শখ আহ্লাদ পূরণ করার জন্যইতো।’
আব্বা জীবনে দুহাতে টাকা কামাইছেন। দুহাতে খরচও করেছেন। রক্ত পানি করা টাকা কাজেও লাগিয়েছেন। আব্বার কামানো টাকার সবচেয়ে বেশি নষ্ট করেছি আমি। আমার ঢাকায় থাকা, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা সব খরচ দিয়েছেন। সেগুলো তেমন ছিল না। কিন্তু আমি স্টুডেন্ট ভিসায় সাইপ্রাস গেলাম। এমন সময় গেলাম যখন আব্বার প্রবাস থেকে ফেরার পালা। আমার বিদেশ যাওয়ার টাকাটা আব্বার অনেকটা শেষ সম্বল ছিল। টাকাটা নষ্ট হওয়ায় আব্বা অর্থনৈতিক মন্দায় পড়েন। মাসে ৫০/৬০ হাজার টাকা কামানো মানুষটা একেবারে শূন্য হয়ে গেলেন হঠাৎ। নগদ টাকার সংকটে পড়ে গেলেন। কোনো স্থায়ী সম্পদ বিক্রির পক্ষে না আব্বা। কিন্তু এই যে শূন্য হয়ে গেলেন তা নিয়ে এখন পর্যন্ত আব্বাকে কোনোদিন আফসোস করতে দেখিনি, রাগ করতে দেখিনি। উল্টো আব্বাকে দেখেছি সব সময় আমাকে নিয়ে গর্ব করেন। আমার দুইটা বই প্রকাশ হয়েছে এ নিয়েও আব্বাকে গর্ব করতে দেখেছি। গর্বে আব্বার বুক টান হতে দেখেছি। আব্বা বই দুইটির নামও ঠিকভাবে জানেন না। শুধু জানেন তার ছেলের দুটি বই প্রকাশ হয়েছে। ব্যাস এই টুকুতেই আব্বার গর্ব। জানি না কোন কারণে আমার মতো ব্যর্থ ছেলের জন্য কোনোদিন দুঃখ পাননি আব্বা। হা-হুতাশ করেননি। শুধু দিয়ে গেছেন দুহাত ভরে।
আব্বা কখনো কখনো সংসারের আর্থিক অবস্থা নিয়ে আমার সঙ্গে কথা বলেন। অন্য দুই ছেলের দোষ ত্রুটির কথা বলেন। আমি চাই না জেনেও আমার কাছে সব হিসাব দেন। এক সময় এসে মনে হতো আব্বা বুঝি আমার ব্যাপারে কিছুটা পার্সিয়াল আচরণ করছেন। আমি জানতাম আব্বা আমার মেজ ভাইকে বেশি ভালোবাসেন। সব সন্তানের জন্যই বাবা-মা সমান। কিন্তু অনেক সময় এমনও তো হয়, কোনো সন্তানের প্রতি একটু বেশি টান কাজ করে। ঠিক তেমনি ভাবতাম। মেজ ভাইকে আব্বা খুব আদর করতেন। বড় ভাইকে তার চেয়ে একটু কম। সব চেয়ে কম আমাকে। এটা আমার ধারণা ছিল। কিন্তু না সবার প্রতিই আব্বার একই রকম ভালোবাসা। তবে আমি পড়াশোনা করেছি বলে হয়তো একটু বেশি গুরুত্ব দেন আমাকে।
আব্বার ইচ্ছা ছিল আমি যেন সরকারি চাকুরে হই। কিন্তু তা আমি হতে পারিনি। আমি সরকারি চাকরিতে গেলে আব্বা হয়তো সবচেয়ে বেশি খুশি হতেন। সুখি হতেন। সন্তান হিসেবে আমার কাছে আব্বার প্রত্যাশা বেশি ছিল। আমি সেই প্রত্যাশার ধারে কাছেও যেতে পারিনি। এই নিয়ে আব্বার দুঃখ কোনোদিন আমাকে বুঝতে দেননি সেই অর্থে। কিন্তু আমি জানি, আমার বর্তমান জীবন নিয়ে আব্বা ভীষণরকম কষ্ট পান কখনো কখনো। আমার পেশাটাকে তিনি ভয় পান। আমি টের পাই। বলেন না। বলতে পারেন না। আমাকে নিয়ে তার চিন্তা হয়। দুয়েকবার আম্মার সঙ্গে বলেছেন সে কথা। বলেছেন টাকা পয়সা খরচ করেও একটা ভবিষ্যৎ করতে পারলো না ছেলেটা। আম্মা আমাকে এসব বলেছেন। আমি লুকিয়ে বাবার এই দুঃখের নদীটাকে ছোঁয়ার চেষ্টা করি। দেখতে ইচ্ছে করে আব্বার না বলা সেই শূন্যতার শরীর। কি করে আব্বা এতোকিছুর পরও এই ব্যর্থ ছেলেটাকে এতো ভালোবাসেন, প্রশ্রয় দেন। খুব জানতে ইচ্ছে করে।
অতি সম্প্রতি আমাদের যৌথ পরিবারটা আবার ভাঙলো, আমার ভাইয়েরা যে যার মতো হয়ে গেলেন। আব্বা যেন হঠাৎ একটা বড় ধাক্কা খেলেন। কারণ আমি জানি আব্বা ছেলেদের এক সঙ্গে রাখার কত চেষ্টা করেছেন। মন থেকে কতভাবে চেয়েছেন সবাই যেন এক সঙ্গে থাকে। আমার সঙ্গে সে নিয়ে কথাও বলেছেন। আব্বা কতটুকু কষ্ট পেলেন তা কেউ দেখলো না। একটা যৌথ পরিবারকে টেনে এতদূর আনলেন। কিন্তু ভাঙন ঠেকাতে পারলেন না। নিজের দায়িত্ব পালনে কোনোদিন অবহেলা করেননি। তারও একযুগ আগে একমাত্র ভাইয়ের (আমার চাচার সঙ্গে) সঙ্গেও ভিন্ন হতে চাননি আব্বা। তখনো পারেননি, এখনো পারেননি। আব্বার জীবনে এটাই সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা। তারপরও কারও প্রতি আব্বার কোনো অনুযোগ অভিযোগ নেই যেন। প্রত্যেকের প্রয়োজনের সময়ে ভরসা হয়ে দাঁড়িয়ে যাচ্ছেন।
সংসার তো জোয়ার ভাটায় ভরা এক জীবন। আব্বার জীবনটাও তেমনি। নিজের জীবনে অনেক কিছু দেখেছেন, এতোদূর পথ হেঁটেছেন। আব্বাকে আমরা কমই চিনতে পেরেছি বলে মনে হয় আজকাল। এই যেমন, আমরা তিন ভাই সব সময় চাইতাম কিছু জমি বিক্রি করে জেলা শহরে বাড়ি করতে। আব্বা কখনো রাজি হননি। জমি তিনি কোনোভাবেই বিক্রি করতে রাজি না। আমি আমার জীবনের পথ চলতে গিয়ে এখন টের পাই, কেন আব্বা জমি বিক্রি করতে রাজি হন না। আমিও এখন আর জমি বিক্রি করতে চাই না। বরং আমি যত ভালো কিছুই, যত টাকাই উপার্জন করি না কেন, কিংবা ঢাকায় বাড়ি-গাড়ি করলেও এক সিকি জমিও বিক্রি করতে চাই না। আমি ফিরতে চাই শেকড়ে। আজ না হয় কাল। যে শেকড় আমার কৃষক বাবা নিজের হাতে, খুব যত্নে বুনেছেন লালপুরে। আমি বুঝে গেছি আমাকে শেকড়ে ফিরতেই হবে। আব্বা যেমন ফিরেছেন দীর্ঘ প্রবাস জীবনের ইতি টেনে। এখন বাড়ি গেলে আব্বাকে দেখি, ভাবি কত ভাঙা গড়ার ভেতর দিয়ে গেছেন এই মানুষটা। তারপরও যেন তার গায়ে কোনোকিছুর আঁচড় লাগেনি এতটুকু।
আমি জানি আব্বা কোনোদিন এই লেখা পড়বেন না। আমি এও জানি কোনো বাবা দিবসেই আব্বাকে বলবো না, আব্বা আজ পৃথিবীতে একটি দিন, যে দিনটি বাবা দিবস হিসেবে পরিচিত। জড়িয়ে ধরে বলবো না, আপনাকে অনেক ভালোবাসি আব্বা। আব্বাকে কোনোদিন অবশ্য জড়িয়ে ধরিনি। তবুও আব্বাই একমাত্র আশ্রয় আমার। এখনো যা-ই করি, যেখানেই যাই, ভাবি আব্বা আছেন। মনের কোথায় জানি আব্বা আমার খুঁটি হয়ে আছেন। আলাদা একটা ভরসা কাজ করে। আলাদা একটা সাহস। বড় হলাম, সংসারী হলাম, চাকরি করি। এটা সেটা নানা সমস্যার ভেতর দিয়ে জীবন যাপন করি। কিন্তু যখনই ভাবি আব্বা তো আছেন, তখন যেন সব নিরাশা আশা হয়ে উঠে। ঘোরতর অমাবস্যা ঘুঁচে যায়। আব্বা যেন বিশাল এক বটবৃক্ষ, আমি তার ছায়ায় দাঁড়িয়ে আমার হাপিত্যেষের জীবন চাঙ্গা করি, ক্লান্তি দূর করি। পথ চলার রসদ যোগার করি, শক্তি সাহস সঞ্চয় করি। আব্বা আপনি চিরদিন এমনই থাকেন, এমন বটবৃক্ষ হয়ে আমার ঘোরতর অমানিশার কালে।
ইদানীং যখন কোনো কারণে, বিশেষ করে অর্থনৈতিক কারণে মন খারাপ হয়, তখন আব্বার কথা মনে পড়ে। আব্বার জীবনের ফেলে আসা দিনের কথা মনে পড়ে। প্রায় অর্ধেক জীবন কত টাকা হাতিয়ে জীবন গেছে আব্বার। আবার এখন প্রায় শূন্য হাত নিয়ে জীবন পার করছেন। যেন কোথাও কোনো দুঃখ নেই, আফসোস নেই, জীবন এমনই। জীবনের প্রতি কোনো খেদ নেই। বলতে গেলে, প্রায় সারাদিনই মেতে থাকেন চাষবাস নিয়ে। যেন তিনি কেবল বুনতে জানেন স্বপ্নের বীজ, ফসল। কিন্তু আমি তো বুঝি আব্বার বুকের অতল তলের না বলা কষ্টের কথা। আবুল হাসানের ‘চামেলী হাতে নিম্নমানের মানুষ’ আমার প্রিয় কবিতার একটি। তার চেয়ে বেশি প্রিয় তার এই কয়টি লাইন-
‘এখন তিনি পরাজিত, কেউ দ্যাখে না একলা মানুষ
চিলেকোঠার মতন তিনি আকাশ দ্যাখেন, বাতাস দ্যাখেন
জীর্ণ ব্যর্থ চিবুক বিষণ্ন লাল রক্তে ভাবুক রোদন আসে,
হঠাৎ বাবা কিসের ত্রাসে দু'চোখ ভাসান তিনিই জানেন!
একটি ছেলে ঘুরে বেড়ায় কবির মতো কুখ্যাত সব পাড়ায় পাড়ায়
আর ছেলেরা সবাই যে যার স্বার্থ নিয়ে সরে দাঁড়ায়
বাবা একলা শিরঃদাঁড়ায় দাঁড়িয়ে থাকেন, কী যে ভাবেন,
প্রায়ই তিনি রাত্রি জাগেন, বসে থাকেন চেয়ার নিয়ে
চামেলী হাতে ব্যর্থ মানুষ, নিম্নমানের মানুষ!’
লেখক: সংবাদমাধ্যম কর্মী
ঢাকা/তারা