তিনি খুব সকালে বেরিয়ে পড়েন। ঘরে অসুস্থ স্ত্রী, একটা অগোছালো মেয়ে। নিজে রেঁধে-খেয়েই বেরিয়ে পড়েন। বাসে ঝুলতে ঝুলতে পাড়ি দেন কাজের উদ্দেশ্যে। অফিসে গিয়ে দৌড়াদৌড়ি, মেধার পরিশ্রম তো আছেই।
ক্লান্ত শরীরে বাড়ি ফেরেন। কোনোদিন স্ত্রীকে সুস্থ দেখলে তার ক্লান্তি কাটে। আবার কোনোদিন তাকে অসুস্থ হয়ে বিছানায় শুয়ে থাকতে দেখে মালিককে প্রশ্ন করেন, ‘পৃথিবীর সব দুর্দশা কী আমার জন্যই এসেছে?’
মেয়েটা অবুঝ, আবার মাঝে মাঝে অনেকটা বুঝেও ফেলে। স্ত্রীর অসুস্থতার দুশ্চিন্তা মাঝে মাঝে মেয়ের ওপর ঝাড়েন। ছোট ভুলেই অনেক বকাঝকা করে বসেন। পরে খুব কষ্ট হয়। বলেন, ‘মা, তুই না বুঝলে কী করে হবে!’
তার কাজটাও মৌসুমী কাজ, কিছু বিশেষ সময় আছে যখন কাজের বড় বড় ঢেউ তীরে ঝাপটে পড়ে। তখন মেয়ে-বৌ এর মুখ থেকে বের হওয়ার আগেই জিনিসটা হাজির। কোনোকিছুতেই না করেন না।
আজকাল কাজে ভাটা পড়েছে, দেরিতে অফিস যান জলদি ফিরে আসেন। কাউকে বুঝতে দেন না কতটা টানাপোড়েন চলছে। শুধু অসুস্থ স্ত্রী আর অবুঝ মেয়েটাই বোঝে। তারাও তেমন ঘাঁটায় না তখন। যখন একা থাকেন তখন খুব হাহাকার কাজ করে।
নিজেদের মৌলিক চাহিদা মেটাতে যেখানে হিমশিম খেয়ে যান তিনি। সেখানে পরিবার পরিজন জেঁকে ধরেন একাজ ওকাজের জন্য ধার-দেনা চাইতে। কেউ কখনো একশ টাকার বাজার করে আনে না তখন।
তবুও তিনি চুপচাপ হেঁটে যান ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত শরীরে দুটো হাত ধরে। জটিলতাগুলো পার করেন তাদের আগলে রেখে।
সবার সাহায্যে নিবেদিত প্রাণ। বিশ্বাস রাখেন মালিকে, দৃঢ় বিশ্বাস। মাঝে মাঝে ছোট বাচ্চা হয়ে যান। অল্প কথায় হাসতে থাকেন বাচ্চাদের মত খিলখিল করে। কী নিষ্পাপ সে হাসি!
যেদিন তিনি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালের বিছানায় শুয়েছিলেন- মেয়েটা খুব কেঁদেছিল। আর বলেছিল, ‘মালিক, আব্বুকে এভাবে বিছানায় পড়ে থাকতে দেখতে আর ইচ্ছে হচ্ছে না।’
এরপর যেদিন অল্পদিনের জন্য চিকিৎসার প্রয়োজনে দেশের বাইরে গিয়েছিলেন, মেয়েটা সেদিন নিঃশব্দে কেঁদেছে। ফেরার দিন তাকে আসতে দেখে মনে হয়েছে- যক্ষের ধন হেঁটে আসছে। এই মানুষটার ভেতর আছে এক পৃথিবী মায়া, মমতা, স্বকীয়তা, যত্ন আর অফুরন্ত ভালোবাসা।
মেয়ের আত্মবিশ্বাস হয়ে মিশে থাকেন। স্ত্রীর ভরসা হয়ে শক্ত করে আঁকড়ে রাখেন। ঢাকা/সনি