চিকিৎসক রোগীকে চিকিৎসাসেবা দেবেন এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু পাশাপাশি পুঁথি লিখে, গান গেয়ে বিভিন্ন বিষয়ে মানুষকে সচেতন করবেন এমন খুব কমই চোখে পড়ে। ব্যতিক্রম এই কাজটি করছেন জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক, চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম অচিনপুরী। তার গ্রামের বাড়ি সিলেট জেলার বিশ্বনাথে।
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে জনসচেতনতা বাড়াতে জহিরুল ইসলাম ৮টি গান এবং পুঁথি লিখেছেন। এর মধ্যে কয়েকটি গান রয়েছে করোনাযোদ্ধা অর্থাৎ চিকিৎসকদের উৎসাহ দিয়ে মনোবল বাড়ানোর জন্য। গানগুলো তিনি নিজেই গেয়েছেন এবং নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেল ‘শ্রীহট্টে’ প্রকাশ করেছেন। ইতোমধ্যেই তার একটি গান ১২ লাখ দর্শক ইউটিউবে দেখেছে। এভাবে তার গান মানুষের মধ্যে করোনা প্রতিরোধে ভূমিকা রাখছে বলে অনেকে মনে করেন। বাংলাদেশ পুলিশও এই শিল্পীর গানগুলো সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষে ব্যবহার করছে।
গান গেয়ে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সচেতনতা সৃষ্টির ভাবনা কীভাবে এলো? প্রশ্ন করতেই জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের দেশের মানুষ অসচেতন। এই উদ্বেগ থেকেই আমি করোনা নিয়ে গান গাইতে শুরু করি। কারণ এ দেশের সাধারণ মানুষ সংগীত ভালোবাসে। এরপর গানগুলো যখন ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশ করতে শুরু করি, ভালো সাড়া পাই। সামাজিক সংগঠনগুলো করোনা সচেতনতা তৈরিতে আমার গান ব্যবহার করেছে। ফেনী পুলিশ, সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ এবং গাজীপুর পুলিশও একইভাবে গানগুলো ব্যবহার করছে। আমি ভালো ফিডব্যাক পেয়েছি।’
জহিরুল ইসলাম মানুষকে সচেতন করতে জারি গান বেছে নিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘জারিগান গ্রামবাংলার ঐতিহ্য, গ্রামের মানুষের আত্মার খুব কাছের সুর। আমার টার্গেট ছিল গ্রামবাংলার সহজ সরল, স্বাস্থ্য বিষয়ে অসচেতন মানুষ। এ কারণে গানগুলোতে শেকড়ের সুর এবং দেশীয় বাদ্য ব্যবহার করেছি।’
জহিরুল ইসলামের এই প্রচেষ্টা নতুন নয়। দেশের বিভিন্ন কঠিন পরিস্থিতিতে আগেও তিনি গান লিখেছেন। তার গানে গণমানুষের করণীয়, সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ, সামাজিক অসঙ্গতি উঠে এসেছে। যে কারণে শ্রোতারা তাকে ‘বাস্তব গানের শিল্পী’ বলেন। জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, সঠিক সময়ে সঠিক গানের মাধ্যমে জাতিকে দিক নির্দেশনা দেওয়া যায়।’
বাবা ছিলেন মরমী গানের সাধক। জহিরুল ইসলামের রক্তে গানের টান ছেলেবেলা থেকেই। বাউল গান, মুর্শিদী গান, সুফি গান শুনে বড় হয়েছেন। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে তিনি গান শেখেননি। পারিবারিকভাবেই গানের চর্চা করেছেন। তিনি বলেন, ‘ছাত্রজীবনে অনেক গান শুনেছি। মাঝে মাঝে প্যারোডি গান বানাতাম। প্রথম গান লিখি ১৯৯২ সালে। তবে ২০১০ সাল থেকে সিরিয়াসলি গান লিখছি।’
জহিরুল ইসলাম এখন পর্যন্ত দুইশ গান লিখেছেন। নিজের গানে নিজেই সুর বাঁধেন। এই চিকিৎসক ও শিল্পী মনে করেন, গান দেশ ও মানুষ গড়ার হাতিয়ার। সফল, উন্নত, মানবিক দেশ গড়তে সংগীত ভূমিকা রাখতে পারে। তিনি সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন।
ঢাকা/তারা