ইতিহাসে কয়েকটি ভয়াবহ বন্যা হয়েছে চীনে। অবিরাম বৃষ্টি ও তুষারপাতের কারণে ১৯৩১ সালের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ইয়াংজি ও হুয়াই নদীর পানি উপচে ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা হয়। এতে ১০ লাখ এমনকি অনেকের মতে ৪০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। ১৯৩৮ সালে চীনেরই ইয়েলো রিভারের বন্যায় প্রায় ৮ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়।
বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা হয় ১৯৭৪ সালে। মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বন্যার কারণে সরকারি হিসেবে ২৮,৭০০ জন মারা যায়। তবে বেসরকারি হিসেবে কলেরা, ডায়রিয়াসহ নানা রোগ ও দুর্ভিক্ষে এ সংখ্যা প্রায় ১৫ লাখ ছাড়িয়েছিল।
বাংলাদেশ বরাবরই বন্যাপ্রবণ দেশ। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে বন্যার আগ্রাসনে দেশে উত্তর,মধ্যাঞ্চলে ব্যাপক ক্ষতি হয়। তবে সাম্প্রতিক সময়ে সিলেট,সুনামগঞ্জসহ প্রায় ২০টি জেলায় বন্যার যে ভয়ংকর রূপ দেখা গেছে, তা প্রায় দেড়শ’ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ। গত কয়েকদিনে বন্যায় মারা গেছে অর্ধ শতাধিক,পানিবন্দি হয়ে আছে লাখ লাখ মানুষ।
সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশেও বন্যার হার বেড়ে গেছে। চলতি বছরেই হয়েছে অনেক ক্ষতিকর বন্যা।
ভারতের বন্যা: মূলত ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে বন্যা হয়। এবারো তাই হয়েছে। ভারতের আসাম ও মেঘালয়ে চলতি মাসের বন্যা ও ভূমিধসে মারা গেছে শতাধিক মানুষ। প্রায় ৫০ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
চীনের বন্যা: ৬০ বছর পর চীনে বড় ধরনের বন্যা দেখা দিয়েছে। মে মাসের শেষ দিক থেকে জুন মাসজুড়ে অবিরাম বৃষ্টিতে বন্যার কারণে অন্তত ৩২ জন মারা গেছে। দেশটির দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলের কয়েকটি প্রদশে থেকে লাখ লাখ মানুষকে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে উদ্ধারকর্মীরা। এ পর্যন্ত ২৫০ মিলিয়ন ডলারের বেশি সম্পদ ক্ষতি হয়েছে জানা গেছে।
ব্রাজিলের বন্যা: প্রচন্ড বৃষ্টির কারণে চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারিতে ব্রাজিলের পেট্রোপলিস মিউনিসিপালিটিতে বন্যা ও ভূমিধসে অন্তত ২৩১ জনের মৃত্যু হয়।
অস্ট্রেলিয়ায় বন্যা: অবিরাম বৃষ্টিতে অস্ট্রেলিয়ার সাউথ ইস্ট কুইন্সল্যান্ড ও নিউ সাউথ ওয়েলসে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিলের ৭ তারিখ পর্যন্ত কয়েক দফা বন্যায় মারা গেছে অন্তত ২২ জন। ক্ষতি হয়েছে ২.৫ বিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলারের সম্পদ।
সাউথ আফ্রিকায় বন্যা: ভারী বর্ষণের কারণে সাউথ আফ্রিকার কাওয়া জুলু নাটাল প্রদেশে এপ্রিলের ৮ থেকে ২১ তারিখ পর্যন্ত ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়। এতে অন্তত ৪৩৫ জন মারা যায়। ক্ষতি হয় ১৭ বিলিয়ন র্যান্ড (১.৫৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) সম্পদ।
আফ্রিকার আরো বন্যা: ২৩ এপ্রিল রুয়ান্ডায় বন্যা ও ভূমিধসে অন্তত ১১জন মারা যায়। ২৫ থেকে ২৭ এপ্রিল ডি আর কঙ্গোতে বন্যায় মারা গেছে অন্তত ৯ জন। একই সময়ে তানজানিয়ায়াতে বন্যায় মারা গেছে ৫ জন।
এছাড়া প্রচুর বৃষ্টিপাত, বরফ গলে যাওয়ার কারণে সম্প্রতি কানাডার মেনিটোবা প্রদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ডাকোটা ও মিনেসোটায় বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে বন্যা দেখা দেয়।