সাতসতেরো

ভাইরাল ‘আসকে আমার মন ভালো নেই’—এর নেপথ্যে কে

‘আসকে আমার মন ভালো নেই’— এই ডায়লগ এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল। সব শ্রেণী-পেশার নেটিজনদের কাছে এটি বেশ পরিচিত। ভালো হোক মন্দে, কথা একটাই— ‘আসকে আমার মন ভালো নেই’। এমনটি পরীক্ষা হলেও এই ভাইরাল টপিক ঢুকে পড়েছে। সাধারণত সোশ্যাল প্লাটফর্মে কিছু ভাইরাল হলে, তৎক্ষণাৎ এটার ক্রিয়েটর খুঁজতে থাকি আমরা। আর ‘আসকে আমার মন ভালো নেই’ কন্টেন্টটি যেহেতু অডিও ভার্সন, সেহেতু নেটবাসীদের ব্যাপক আগ্রহ— এর স্রষ্টা কে? 

এই অডিও কন্টেন্টে যে ব্যক্তির কণ্ঠে ‘আসকে আমার মন ভালো নেই’ ফুটে উঠেছে, তার নাম হান্নান আহমেদ উৎস। বয়স ২৬, চট্টগ্রামের বাসিন্দা। তিনিই সেই মানুষ, যার ‘মন ভালো নেই’ শুনে সবার মন ভাল হয়ে যায়। ভাইরাল ‘আসকে আমার মন ভালো নেই’— এর স্রষ্টার পরিচয় কী? কীভাবে তার মাথায় এমন আইডিয়া এলো— সেগুলোই আজ জানাবো।

কাজী হান্নান আহমেদ উৎস ‘আসকে আমার মন ভালো নেই’ ছাড়া আরও কিছু ‘প্রাঙ্ক কল’ বা মজার অডিও কন্টেন্ট বানিয়েছেন। যেগুলো এর আগেও ব্যাপক ভাইরাল হয়েছিল। 

উৎস একজন সাবেক সেনা কর্মকর্তার সন্তান। আগে থেকেই তিনি বিভিন্ন মানুষের কণ্ঠ নকল করতেন। প্রাঙ্ক কলের মাধ্যমে বোকা বানাতে উস্তাদ তিনি। তবে উৎস যার কণ্ঠ নকল করে ‘আসকে আমার মন ভাল নেই’ বা ‘তৈ আই কিত্তাম’— এর মত আরও কন্টেন্ট বানিয়েছেন; সেই মানুষটি কিন্তু বাস্তবেই আছেন। 

উৎস তার এলাকার এক পানরসিক মানুষের কণ্ঠ নকল করে এসব কন্টেন্ট তৈরি করেন। তবে তার যে শুরু থেকেই এমন চিন্তা ছিল, কন্টেন্ট বানিয়ে ভাইরাল হবেন— এমনটা কিন্তু নয়। তিনি এক পানওয়ালার কণ্ঠ নকল করে একটি অডিও রেকর্ড বন্ধুদের মেসেঞ্জারে ফান হিসেবে পাঠিয়েছিলেন। এরপর সেই অডিও ভাইরাল হয়ে যায়। এরপর আরও কিছু অডিও রেকর্ড করে পাঠান তিনি। 

তবে উৎস’র করা কন্টেন্টগুলো অনেকেই নিজের নামে পেজে চালিয়ে দেয়। এরপর তিনি ইউটিউবে ফেসবুক পেজ খুলেন। নাম ‘চিটাইংগে টিভি’। ২০১৮ তে চ্যানেল খুললেও ২০২০ সালে সাবস্ক্রাইবার বাড়ে সবচেয়ে বেশি। ‘হোসেন মিস্ত্রি’র সঙ্গে প্রাঙ্ক কলের কন্টেন্টে তার ইউটিউবে এক রাতে লাখ সাবস্ক্রাইবার বেড়ে যায়। এর মধ্যে এক লাখ সাবস্ক্রিপশনের জন্য ইউটিউব কর্তৃপক্ষ থেকে পেয়েছিলেন সিলভার-প্লে বাটন। এ পর্যন্ত চ্যানেলটিতে প্রায় ৪০টি কনটেন্ট আপলোড করা হয়েছে। এর মধ্যে একাধিক রেকর্ড বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। কিছু কিছু কনটেন্ট দেশের বাইরেও দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছে।

প্র্যাঙ্ক কলগুলোতে স্ল্যাং বা কটুকথা ব্যবহার প্রসঙ্গে উৎস বলেন, চট্টগ্রামের মানুষজন একটু গালাগালি করি। তবে বর্তমানে এসব ছাড়াই কল রেকর্ড তৈরি করছি। কারণ প্রথম দিকে আমাদের দর্শক ছিল যুবকরা। এখন সমাজের সব শ্রেণীর মানুষ এসব রেকর্ড শোনেন। তাই সবার কথা চিন্তা করে স্ল্যাং শব্দগুলো বাদ দিচ্ছি।

উৎস’র কন্টেন্টগুলোর বিশেষত্ব হচ্ছে— এগুলো কখনোই স্ক্রিপ্টেট থাকে না। কাজিন অথবা ফ্রেন্ডদের সাথে বসে হুটহাট এসব অডিও রেকর্ড করা হয়। তাৎক্ষণিক মাথায় যা আসে, সেটা বলেই অডিও রেকর্ড করেন তারা। 

মজার বিষয় হলো— ‘আসকে আমার মন ভালো নেই’ কন্টেন্ট উৎস যেদিন বানিয়েছিলেন; সেদিন একটা কারণে তার মন আসলেই অনেক খারাপ ছিল। 

উৎস বলেন, ‘ডরাইল্ল্যা ভূত নামে আমি ১৫ পর্বের একটি ওয়েব সিরিজ নির্মাণ করি। ওয়েব সিরিজটি ১৫, ১৪, ১৩, ১২.. একদম পেছন থেকে শ্যুট করা। যখন এক নম্বর পর্বে এসেছি, তখন জানতে পারি মাঝখানের একটি পর্বের শুটিং-ই করিনি আমরা। এটি আমাদের প্রথম কাজ ছিল। তখন মনটা খারাপ হয়ে যায়। ফটিকছড়িতে শ্যুট করেছি। নতুন করে করাও সম্ভব না। এজন্য আমার মন ভাল ছিল না। কাজিন ফাহাদ বিন ওয়াহিদ সাকিবকে বিষয়টি বলি। এরপর এই কন্টেন্ট বানানোর প্ল্যান আসে, যেটা এখন ভাইরাল।’  

উৎস পড়াশোনার পাশাপাশি পার্টটাইম চাকরি করতেন। এরপর সেই চাকরি ছেড়ে ব্যবসার চিন্তা করেছেন। সেই চিন্তার মধ্যেই তার মাথায় এলো ইউটিউব ভাবনা। তারপর ব্যবসার দিকে যায়নি। ফোকাস দেয় ইউটিউবে। ভবিষ্যতে সে ইউটিউব কন্টেন্ট নিয়েই থাকতে চায়। আর এসবে উৎস ইউটিউবার সালমান মুক্তাদিরকে নিজের আইডল মনে করেন।