বর্তমান বিশ্বে কোনো খেলার আসরই ফুটবল বিশ্বকাপের মতো এতোটা জনপ্রিয় না- কথাটা বললে হয়তো ভুল বলা হবে না। তার উপর এবারের বিশ্বকাপ আয়োজিত হতে যাচ্ছে তেলের খনিসমৃদ্ধ ধনী দেশ কাতারে। স্বাভাবিকভাবেই এবারের আয়োজন নিয়ে ফুটবলপ্রেমীদের মধ্যে উত্তেজনা একটু বেশি কাজ করছে। শুধু উত্তেজনাই নয়, আলোচনা-সমালোচনাও কিন্তু কম হচ্ছে না।
সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো কাতার বিশ্বকাপে কী করা যাবে, আর কী করা যাবে না- সেই ফর্দ। এবারই প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ আয়োজিত হতে যাচ্ছে সম্পূর্ণ মুসলিম একটি দেশে। তাই অন্যান্যবারের চেয়ে এবারের নিয়ম-কানুন, বিধি-নিষেধগুলো একটু অন্যরকম। গুটিকয়েক নিয়মে শিথিলতা আনলেও সম্পূর্ণ মুসলিম দেশ হিসেবে কাতার অনেক কিছুর জন্যই নিজেদের নিয়ম পরিবর্তন কিংবা পরিমার্জন করেনি। নিষিদ্ধের ঘেরাটোপে এবারের বিশ্বকাপের আয়োজন কীভাবে হবে চলুন জেনে নেয়া যাক।
মুসলিম দেশ হওয়ায় নারীর পোশাকের শালীনতার উপর জোর দেয়া হয়েছে এবারের বিশ্বকাপে। পশ্চিমা ধাঁচের শর্ট স্কাট বা লো কাট টপস অথবা খুব পাতলা ফিনফিনে কাপড়ের তৈরি পোশাকের উপর দেয়া হয়েছে নিষেধাজ্ঞা। অর্থাৎ শরীর দেখা যায় এমন পোশাক গ্রহণযোগ্য হবে না। তবে ঢিলেঢালা প্যান্ট বা ট্রাউজার পরতে বাধা নেই।
পরিচয় পর্বের স্বাভাবিক ভদ্রতার অংশ হিসেবে হ্যান্ডশেক করতে চেয়ে যদি অপর প্রান্ত থেকে সাড়া না পান তবে এ নিয়ে মন খারাপ করা যাবে না। কারণ, কাতারে বিপরীত লিঙ্গের কারো সঙ্গে হাত মেলানোর প্রচলন খুব কম। যে কোনো শক্তিবর্ধক বেভারেজ বা কোমল পানীয়র পরিবর্তে যথাসম্ভব বেশি পানি পান করতেই আপনাকে উৎসাহিত করা হবে। কারণ, বিশ্বকাপ চলাকালীন কাতারের তাপমাত্রা থাকবে প্রায় ৪০ ডিগ্রী সেলসিয়াস। তাই পানিশূন্যতা থেকে বাঁচতে প্রতিদিন অন্তত দুই লিটার পানি পান করার প্রয়োজন হবে। খাবার যথাসম্ভব ডান হাত দিয়ে খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। কারণ মুসলিম দেশগুলোতে বাম হাতের ব্যবহার কেবলমাত্র ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতার কাজে ব্যবহার করা হয়।
নারীর পোশাকের শালীনতার উপর জোর দেয়া হয়েছে এবার বিশ্বকাপে
কাতারের স্থানীয় কোনো পরিচিত ব্যক্তি বা দর্শকের সামনে কখনো এমনভাবে বসবেন না যাতে আপনার জুতা তার মুখের সম্মুখে থাকে। এতে তারা অপমানিত বোধ করেন।
কাতার বিশ্বকাপে মদ্যপানের উপর রয়েছে বেশ কড়াকড়ি। কাতারে লাইসেন্সড হোটেল ও রেস্তোরাঁয় মদ বিক্রি করা হয়। কিন্তু তা ক্রয় করতে লাইসেন্স লাগে। বিশ্বকাপ উপলক্ষে আগত দর্শকদেরর জন্য অবশ্য এ ব্যাপারে কিছুটা ছাড় দিয়েছে কাতার সরকার। তারা লাইসেন্স ছাড়াই অনুমোদিত জায়গাগুলো থেকে সব ধরনের অ্যালকোহল ক্রয় করতে পারবে। তবে প্রকাশ্যে বা পাবলিক প্লেসে মদ্যপান করা যাবে না। বিশ্বকাপ উপলক্ষে স্টেডিয়ামের পাশের রেস্তোরাঁগুলোতেও এ ব্যবস্থা থাকবে। খেলা শুরুর আগের তিন ঘণ্টা ও খেলা শেষের পরের এক ঘণ্টা এসব রেস্তোরাঁ বা দোকান থেকে ক্রেতা মদ কিনতে পারবেন।
কাতারের রাতের সময়গুলো নিশ্চিন্তে উপভোগ করতে পারেন। বিশ্বের নিরাপদ শহরগুলোর মধ্যে একটি হলো কাতার। সারা রাত সেখানে বহু রেস্তোরাঁ ও নন অ্যালকোহলিক নাইটক্লাবগুলো খোলা থাকে। তবে বিকিনি পরে বিচে অবস্থান করা যাবে না। কারণ, কাতার বিশ্বকাপে পোশাকের শালীনতার উপর বেশ জোর দেয়া হয়েছে। তবে হোটেলের ব্যক্তিগত পুলে বিকিনি পরায় নিষেধ নেই।
এছাড়া, প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ আয়োজন করায় কাতার দেশটিতে আসা ফুটবলপ্রেমীদের জন্য বেশ কিছু সুবিধাও দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। কাতার সরকার ‘হায়া’ নামের একটি বিশেষ সুবিধা চালু করেছে। বিশ্বকাপ দেখতে আসা নাগরিকরা এই সুবিধাটি ভোগ করতে পারবেন। তবে এ জন্য তাদেরক নিজেদের জন্য রিজার্ভ করা হোটেলের তথ্যের সত্যতা যাচাইয়ের কাগজপত্র ও বিশ্বকাপের অন্তত একটি ম্যাচের বুকড করা টিকেটের কপি দেখাতে হবে। তাহলে তারা কিছু বিশেষ যানবাহনে ফ্রি চলাচল করার সুবিধা পাবেন। শুধু সুবিধার জন্যই নয়, দেশটিতে ও দেশটির স্টেডিয়ামগুলোতে ঢুকতে হলেও আপনাকে ‘হায়া’ কার্ডটি দেখাতে হবে। এ বাধ্যবাধকতা শুধু প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য। কাতারে থাকতে হলে আপনাকে হোটেল ভাড়া বাবদ ভালো রকমের এমাউন্ট গুণতে হবে। তাই কাতার আগন্তুকদের জন্য বিশেষ অফিসিয়াল হোটেল চালু করেছে, যেগুলোতে থাকতে হলে আপনাকে প্রতি রাতের জন্য গুণতে হবে ৮০ ইউরো তথা প্রায় ৮ হাজার টাকা। তুলনা করলে ওই দেশ অনুযায়ী বেশ সস্তায় আপনি এখানে থাকতে পারছেন। সব মিলিয়ে বলা যায় যে, বিশ্বকাপ উপলক্ষে সবাইকে স্বাগত জানাতে পুরোপুরি প্রস্তুত কাতার।