‘The Greatest Show on Earth’-আসলেই তাই, কাতারের লুসাইলের আর্জেন্টিনা-ফ্রান্স ফাইনাল যেন থ্রিলার মুভিকেও হার মানিয়েছে। প্রতি মুহূর্তেই ম্যাচের বাঁক বদলেছে প্রতি মিনিটে। শ্বাসরুদ্ধকর টাইব্রেকারে গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্তিনেজের নৈপুণ্যে শিরোপা জিতলো আর্জেন্টিনা। ৩৬ বছর পর শিরোপা খরা ঘুচলো আকাশি-নীলদের।
গত ২০ নভেম্বর ত্রিশ মিনিটের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান দিয়ে শুরু হয় কাতার বিশ্বকাপ। দেশটির স্থানীয়দের সঙ্গে পারফর্ম করেন বিটিএসের সদস্য জাংকুক, কাতারের গায়ক ফাহাদ আল কুবাইসি, ফিফা বিশ্বকাপের শুভেচ্ছাদূত ঘানিম আল মুফতাহ, ও কাতারের আরেক গায়ক দানা। এর মাধ্যমেই আল বাইত স্টেডিয়ামে পর্দা উঠেছিলো কাতার বিশ্বকাপের। রোববার (১৮ ডিসেম্বর) আর্জেন্টিনা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মধ্য দিয়ে এর সমাপ্তি হলো।
২০২২ সালে চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা
দেখার হবে আবার চার বছর পর বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনের অন্যতম সেরা আসর ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপ। বিশ্বের অলি-গলি আন্দোলিত হয় বিশ্বকাপে। ফুটবলপ্রেমীরা মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে উপভোগ করেন বিশ্বকাপ। সম্প্রতি ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো প্রস্তাব করেছিলেন, দুই বছর পরপর বিশ্বকাপ আয়োজনের। যদিও তার সেই প্রস্তাব আলোর মুখই দেখেনি। দুই বছর নয় আগের নিয়মে চার বছর পরই অনুষ্ঠিত হবে বিশ্বকাপ। গত ৩১ মার্চ ২০২২ কাতারের দোহায় অনুষ্ঠিত ৭২তম ফিফা কংগ্রেস শেষে সাংবাদিকদের এই তথ্য জানিয়েছেন ফিফা সভাপতি ইনফান্তিনো।
ইতিহাসে প্রথম শীতকালে বিশ্বকাপ মধ্যপ্রাচ্যে এর আগে কখনো ফুটবল বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়নি। ফিফার অঙ্গীকার ছিলো ২০৩০ সালের আগে মেজর একটি টুর্নামেন্ট মধ্যপ্রাচ্যে হবে। সে অনুযায়ী নানা প্রতিকূলতা আর প্রতিবন্ধকতার সঙ্গে লড়াই করে কাতার প্রথমবারের মতো আয়োজক হয় বিশ্বকাপের। শুধু কি তাই, ১৯৩০ থেকে ২০১৮, আগের বিশ্বকাপের ২১টি আসরই আয়োজিত হয়েছিলো গ্রীষ্মকালে। অর্থাৎ মে থেকে জুলাই- এর মধ্যে। কিন্তু ব্যতিক্রম হচ্ছে কাতার বিশ্বকাপ। বিশ্বকাপের ৮৮ বছরের ইতিহাসে এবারই প্রথম অনুষ্ঠিত হলো শীতকালে বিশ্বকাপ (নভেম্বর-ডিসেম্বর ২০২২)।
সারা বিশ্ব মাতে ফুটবলে ফুটবল নিয়ে চার বছর পরপর সারা দুনিয়া এককাট্টা হয়ে উৎসবে মাতে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। সারা বিশ্ব ফুটবল–জ্বরে আক্রান্ত ছিলো। কার হাতে উঠবে ফিফা বিশ্বকাপের সোনালি ট্রফি, তা নিয়ে ছিলো জল্পনা কল্পনা। লুসাইল আইকনিক স্টেডিয়ামে রোববার (১৮ ডিসেম্বর) যা হয়ে গেলো, তাকে কী বলবেন? মহানাটক, মহকাব্য নাকি অন্যকিছু? যা কিছু কল্পনাকে ছাড়িয়ে যায়-তাকে নিয়ে কী বলা যায়? বিশ্বক্যাপী ফুটবলপ্রেমীরা দেখলেন অন্যরকম এক ফাইনাল। যে ম্যাচে মেতেছিলেন ফুটবলপ্রেমীরা।
মেসিকে বিশেষ গাউন পরিয়ে দেন কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ
ফুটবল কি নিছকই খেলা! ফুটবল বিশ্বকাপ মানেই বাংলাদেশে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা। এই দুই দেশের সমর্থন বেশি বাংলাদেশে। বিশ্বকাপ আসলেই বড় বড় পতাকা বানানোর ধুম পড়ে। প্রচুর বিক্রি হয় দুই দলের জার্সি, পতাকা। বিক্রি বাড়ে টেলিভিশনের। খেলা দেখতে অনেকেই নিজেদের ব্যক্তিগত কাজ বন্ধ রাখেন। এ সময় খেলার উন্মাদনায় অনেক অপরাধও কমে যায়। এছাড়া এতে দেশের অর্থনীতিও চাঙা হয়। ফুটবলপ্রেমী, সংগঠক ও সাবেক ফুটবলার হুমায়ূন কবীর বলেন, বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনের সেরা আসর ফুটবল বিশ্বকাপ। বিশ্বের অলি-গলি আন্দোলিত হয় বিশ্বকাপে। ফুটবলপ্রেমীরা মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে উপভোগ করেন খেলা। ফুটবল শুধু এখন আর খেলা নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে ব্যবসা-বাণিজ্য, রাজনীতি, অর্থনীতি, বিভিন্ন দেশের বন্ধুত্বসহ অনেক বিষয়।
ফুটবল পছন্দ করেন সবাই ফুটবল খেলা পছন্দ করেন না- এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। উন্মাদনা। ফুটবল উন্মাদনা। সারাবিশ্বের সব দেশের মতো আমরাও জাতি হিসেবে ফুটবল প্রিয়। শিশু-কিশোর থেকে যুবক-বৃদ্ধ সবাই খেলাটাকে পছন্দ করে। বিশ্বকাপ, ইউরো কিংবা কোপা আমেরিকা সবকিছুতেই যেন উন্মাদনার কমতি থাকে না। রাত জেগে খেলা দেখা ফুটবল প্রিয় দর্শকদের জন্য অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। আর বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা মানেই আমাদের রাতের ঘুম শেষ।
সৌদি আরবের কোচ হার্ভে রেনার্ডের কথাই সত্যি হলো কাতার বিশ্বকাপের শুরুর সঙ্গে শেষটা অন্তত মেলাতে চাইবে না আর্জেন্টিনা। কারণ বিষাদের শুরুর পর শেষটা যে কেবল রোমাঞ্চের। তবে ‘পচা শামুকে পা কাটার পর’ রোমাঞ্চের এ মঞ্চ প্রস্তুত করতে কম বেগ পেতে হয়নি মেসিদের। সৌদি আরবের কাছে হেরে শুরু করা এ টুর্নামেন্টে পরের প্রতিটি ম্যাচকেই ‘ফাইনাল’ হিসেবে নিয়েছিলেন স্ক্যালোনির শিষ্যরা। যার ফল এখন তারা চ্যাম্পিয়ন। বিশ্বকাপ মিশনে আর্জেন্টিনা তাদের প্রথম ম্যাচ খেলে ২২ নভেম্বর, সৌদি আরবের বিপক্ষে। শুরুতে এগিয়ে গিয়ে পরে ২ গোল হজম করে ওই ম্যাচ ২-১ গোলে হারে মেসিরা। যা ছিল এবারের বিশ্বকাপের প্রথম অঘটন। তবে ওই ম্যাচের পর সৌদি আরবের কোচ হার্ভে রেনার্ড বলেছিলেন, এই আর্জেন্টিনাই বিশ্বকাপ জিতবে। তার কথাই যেন প্রায় একমাস পর সত্যি হলো।
এ যেন স্বপ্নের ছবি পর্যন্ত মিলে যাওয়া কিছু ছবি চিহ্ন রেখে যায়। কিছু ছবি চিরস্মরণীয় হয়। নতুনদের স্বপ্ন দেখায়। ম্যারাডোনার ১৯৮৬ বিশ্বকাপ জয়ের পর কাঁধে চেপে শিরোপা উচিয়ে ধরার ছবি তেমনই এক আইকনিক মুহূর্ত। তার মতো শিরোপা জয়, তার মতো শিরোপায় চুমু আঁকা, তার মতো করে বিশ্বকাপ উচিয়ে ধরার স্বপ্ন লিওনেল মেসিও শৈশব থেকেই দেখেছেন। দেখেছেন কোটি ভক্ত। ওই স্বপ্ন ১৮ ডিসেম্বর ২০২২ রাতে পূরণ হয়েছে লিওনেল মেসির। লুসাইল স্টেডিয়ামে ফাইনালে ফ্রান্সকে টাইব্রেকারে হারিয়েছে মেসির আর্জেন্টিনা। ওই জয়ের পর শিরোপা নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন মেসি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে ভিডিও সাড়া ফেলেছে তাতে দেখা গেছে, কী মায়ায় শিরোপা ছুঁয়ে, কী আদরে চুমু এঁকেছেন তিনি।
বিশ্বকাপের উন্মাদনায় এক মাসে ১২ মৃত্যু বিশ্বকাপ ফুটবল উন্মাদনার খেসারতে জীবন দিয়ে দিলেন ১২ জন। ফুটবল নিয়ে তর্ক-বিতর্কের জের ধরে সংঘর্ষে, পতাকা টানাতে গিয়ে ছাদ থেকে পড়ে কিংবা বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে, খেলা দেখার সময় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ১২ জন মারা গেছেন। এদের বেশির ভাগই কিশোর ও তরুণ। [সূত্র: প্রথম আলো, ১৪ ডিসেম্বর ২০২২]।
৫৬ বছরের রেকর্ড ভাঙলেন এমবাপে কিলিয়ান এমবাপে বিশ্বকাপের ফাইনালে করেছেন হ্যাটট্রিক। কিন্তু তার সেই কৃতিত্ব শেষ পর্যন্ত ম্লান হয়ে গেছে ট্রফি জিততে না পেরে। ট্রফি জিততে পারেননি সত্যি, কিন্তু বিরল এক রেকর্ডবুকে নিজের নাম তুলে ফেলেছেন এমপাপে। ১৯৬৬ সালের বিশ্বকাপ ফাইনালের পর, এই প্রথম কোনো বিশ্বকাপ ফাইনালে গোলের হ্যাটট্রিক। সেই হ্যাটট্রিকের দাবিদার কিলিয়ান এমবাপে। ৬৬-তে ইংল্যান্ডের জিওফ হার্স্টের এই রেকর্ড ছিলো। ৫৬ বছরে কেউ ভাগ বসাতে পারেনি সেই রেকর্ড। এমবাপে পারলেন। তবে ফুটবলপ্রেমীরা বলছেন, এমবাপের বয়স কম। সামনে তার আরও সম্ভাবনা আছে যদি তিনি নিজেকে আরও পরিণত করতে পারেন।
কাতার বিশ্বকাপে (২০২২) কে কী পেলেন চ্যাম্পিয়ন : আর্জেন্টিনা। রানার্স আপ : ফ্রান্স। সোনার বল : লিওনেল মেসি। সোনার বুট : কিলিয়ান এমবাপে। সোনার গ্লাভস : এমিলিয়ানো মার্টিনেজ। বিশ্বকাপের সেরা তরুণ তারকা : এনজো ফের্নান্দেজ। বিজয়ী আর্জেন্টিনার পুরস্কার মূল্য : ৪২ মিলিয়ন ডলার (৪ কোটি ২০ লক্ষ ডলার)। রানার্স আপ ফ্রান্সের পুরস্কার মূল্য : ৩০ মিলিয়ন ডলার (৩ কোটি ডলার)।
কাতার বিশ্বকাপের সেরা তারকারা
বিশ্বকাপের ইতিবৃত্ত ১৯৩০ বিশ্বকাপ (উরুগুয়ে-আর্জেন্টিনা) ১৯৩০ সালে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ আয়োজন করা হয়। ঘরের মাঠে ফাইনালে উঠে যায় আয়োজক দেশ উরুগুয়ে। ফাইনালে তারা প্রতিপক্ষ হিসেবে পায় আর্জেন্টিনাকে। ৬ গোলের সেই ম্যাচে আর্জেন্টিনাকে ৪-২ গোলে হারিয়ে প্রথম বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয় উরুগুয়ে।
১৯৩৪ বিশ্বকাপ (ইতালি-চেকোস্লোভাকিয়া)
বিশ্বকাপের দ্বিতীয় আসরের ফাইনালে ওঠে ইতালি ও চেকোস্লোভাকিয়া। রোমাঞ্চকর সেই ফাইনালে নির্ধারিত সময়ে ১-১ গোলে সমতা থাকে। ৭১তম মিনিটে গিয়ে গোল করে চেকোস্লোভাকিয়াকে এগিয়ে নেন পুচ। ১০ মিনিট পর ইতালিকে সমতায় ফেরান অর্সি। ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে, যেখানে গোল করে ইতালিকে শিরোপা এনে দেন শিয়াভিও।
১৯৩৮ বিশ্বকাপ (ইতালি-হাঙ্গেরি) টানা দ্বিতীয়বারের মতো ফাইনালে ওঠে ইতালি। শিরোপার লড়াইয়ে হাঙ্গেরিকে প্রতিপক্ষ হিসেবে পায় তারা। উত্তেজনায় ঠাসা সেই ম্যাচে হয় ৬ গোল। গোল বন্যার ম্যাচে হাঙ্গেরিকে ৪-২ গোলে হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট জেতে ইতালি।
১৯৫০ বিশ্বকাপ (উরুগুয়ে-ব্রাজিল) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে ১৯৪২ ও ১৯৪৬ সালে বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়নি। ১২ বছর পর ১৯৫০ সালে আয়োজন করা হয় বিশ্বকাপের চতুর্থ আসর। এই আসরটি রাউন্ড রবিন লিগ পদ্ধতিতে হওয়ায় ছিল না কোনো আনুষ্ঠানিক ফাইনাল ম্যাচ। শিরোপার লড়াইয়ে মুখোমুখি হয় উরুগুয়ে ও ব্রাজিল। প্রথমে পিছিয়ে পড়েও সেলেসাওদের ২-১ গোলে হারিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয় উরুগুয়ে।
১৯৫৪ বিশ্বকাপ (পশ্চিম জার্মানি-হাঙ্গেরি) সুইজারল্যান্ডে অনুষ্ঠিত এই বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো ফাইনালে ওঠে পশ্চিম জার্মানি। তাদের প্রতিপক্ষ ছিলো হাঙ্গেরি। রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে ৩-২ গোলের জয়ে শিরোপা উৎসবে মাতে পশ্চিম জার্মানি।
১৯৫৮ বিশ্বকাপ (ব্রাজিল-সুইডেন) ঘরের মাঠের বিশ্বকাপে ফাইনালে উঠে সুইডেন। কিন্তু দ্বিতীয়বারের মতো ফাইনালে ওঠা ব্রাজিলের গতিময় ফুটবলের সামনে কুলাতে পারেনি তারা। তাদের জালে গোল বন্যা বইয়ে দেয় সেলেসাওরা, তুলে নেয় ৫-২ গোলের বিশাল জয়।
১৯৬২ বিশ্বকাপ (ব্রাজিল-চেকোস্লোভাকিয়া) এই বিশ্বকাপে ব্রাজিল উঠে যায় ফাইনালে। শিরোপার লড়াইয়ে তাদের সামনে পড়ে চেকোস্লোভাকিয়া। দ্বিতীয়বারের মতো ফাইনালে ওঠা দলটি ব্রাজিলের ছন্দময় ফুটবলের সামনে টিকতে পারেনি। ৩-১ গোলের জয়ে দ্বিতীয়বারের মতো শিরোপা উৎসবে মাতে লাতিন আমেরিকা অঞ্চলের দেশটি।
কাতার বিশ্বকাপে ৫৬ বছরের রেকর্ড ভাঙলেন এমবাপে
১৯৬৬ বিশ্বকাপ (ইংল্যান্ড-পশ্চিম জার্মানি) ঘরের মাঠে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে ফাইনালে উঠে ইংল্যান্ড। প্রথমবারের মতো শিরোপার লড়াইয়ে তাদের সামনে বড় বাধা হিসেবে হাজির হয় পশ্চিম জার্মানি। শুরুতে পিছিয়ে পড়েও রোমাঞ্চকর সেই ফাইনালে ৪-২ গোলের জয়ে শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট জেতে ইংলিশরা।
১৯৭০ বিশ্বকাপ (ব্রাজিল-ইতালি) মেক্সিকোয় অনুষ্ঠিত এই বিশ্বকাপে চতুর্থবারের মতো ফাইনালে ওঠে ব্রাজিল। ততদিনে দুটি বিশ্বকাপ জিতে নেওয়া ফুটবল পাগল দেশটির ফাইনালে মুখোমুখি হয় ইতালির। ৪-১ গোলের জয়ে তৃতীয় শিরোপা ঘরে তোলে সেলেসাওরা।
১৯৭৪ বিশ্বকাপ (পশ্চিম জার্মানি-নেদারল্যান্ডস) ঘরের মাঠে বিশ্বকাপে দাপট দেখায় জার্মানি, উঠে যায় ফাইনালে। আগের দুই প্রচেষ্টায় ব্যর্থ হলেও এবার আর সোনালী শিরোপা হাতছাড়া করেনি তারা। উত্তেজনায় ঠাসা ফাইনালে নেদারল্যান্ডসকে ২-১ গোলে হারিয়ে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের ট্রফি উঁচিয়ে ধরে জার্মানি।
১৯৭৮ বিশ্বকাপ (আর্জেন্টিনা-নেদারল্যান্ডস) প্রথম বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলা আর্জেন্টিনা দীর্ঘদিন ফাইনালে উঠতে পারেনি। ৪৮ বছর পর ঘরের মাঠে বিশ্বকাপের ফাইনালে ওঠে আলবিসেলেস্তেরা। এই আসরেও ফাইনালে ওঠে আগের আসরে রানার্স আপ হওয়া নেদারল্যান্ডস। এবারও তাদের স্বপ্নভঙ্গ হয়। অতিরিক্ত সময়ে গড়ানো ম্যাচে ৩-১ গোলে জিতে প্রথমবারের মতো সেরার মুকুট জেতে আর্জেন্টিনা।
১৯৮২ বিশ্বকাপ (ইতালি-পশ্চিম জার্মানি) স্পেনে অনুষ্ঠিত এই বিশ্বকাপের ফাইনালে ওঠে ইতালি ও পশ্চিম জার্মানি। ইতালি ৩-১ গোলে জিতে তৃতীয়বারের মতো শিরোপা ঘরে তোলে।
১৯৮৬ বিশ্বকাপ (আর্জেন্টিনা-পশ্চিম জার্মানি) এই বিশ্বকাপ ম্যারাডোনার অনন্য ফুটবল প্রদর্শনীতে চিরভাস্বর হয়ে আছে। আগের আসরের রানার্স আপ পশ্চিম জার্মানি এবারও ফাইনালে ওঠে। উত্তেজনায় ঠাসা এই ফাইনালে শেষ হাসি ম্যারাডোনার আর্জেন্টিনা। ৩-২ গোলে জিতে দ্বিতীয়বারের মতো শিরোপার স্বাদ নেয় তারা।
১৯৯০ (পশ্চিম জার্মানি-আর্জেন্টিনা) এই বিশ্বকাপের ফাইনালেও আগের দুই দলকে দেখে ফুটবল দুনিয়া। দুর্দান্ত ছন্দে থাকা পশ্চিম জার্মানি ও আর্জেন্টিনার শিরোপার লড়াইয়ে মুখোমুখি হয়। প্রতিশোধের নেশায় মরিয়া জার্মানি এবার আর্জেন্টিনাকে হতাশায় ডুবিয়ে শিরোপা জিতে নেয়। রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে পেনাল্টি থেকে গোল করে ম্যারাডোনার আর্জেন্টিনাকে ১-০ গোলে হারিয়ে দেন আন্দ্রেয়াস ব্রেহমে।
১৯৯৪ বিশ্বকাপ (ব্রাজিল-ইতালি) যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ দিয়ে দীর্ঘদিনের অপেক্ষা ফুরায় ব্রাজিলের। ২৪ বছর পর বিশ্বকাপের ফাইনালে ওঠে ব্রাজিল। ইতালিও ফাইনালের টিকেট কাটে ১২ বছর পর। অপেক্ষা ফুরাতে মরিয়া দুই দলের লড়াই হয় সমানে সমান। কিন্তু নির্ধারিত ৯০ মিনিট গোলশূন্যই থেকে যায়। অতিরিক্ত সময়েও জালের ঠিকানা পায়নি কোনো দল। টাইব্রেকারে গিয়ে কপাল পোড়ে ইতালির। পেনাল্টি শুট আউটে ৩-২ গোলে জিতে শিরোপা উৎসবে মাতে ব্রাজিল।
১৯৯৮ বিশ্বকাপ (ফ্রান্স-ব্রাজিল) এই বিশ্বকাপে ফরাসী সৌরভে মুখরিত হয়ে ওঠে ফুটবল দুনিয়া। নান্দনিক ফুটবল খেলে ফাইনালে ওঠে দিদিয়ের দেশমের ফ্রান্স। ফাইনালে ব্রাজিলকে রীতিমতো উড়িয়ে দেয় ফ্রান্স। কিংবদন্তি জিনেদিন জিদানের জাদুতে অসহায় হয়ে পড়ে সেলেসাওরা।
২০০২ বিশ্বকাপ (ব্রাজিল-জার্মানি) প্রথমবারের মতো এশিয়াতে আয়োজিত হয় বিশ্বকাপ। যৌথভাবে ফুটবল মহাযজ্ঞ আয়োজন করে দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান। এবার ব্রাজিলের দাপট দেখে ফুটবল দুনিয়া। সাম্বার তালে তালে ফুটবলমোদীদের মাত করে রাখেন রোনালদো, রিভালদো, কার্লোসরা। ফাইনালে জার্মানিকে ২-০ গোলে হারিয়ে রেকর্ড পঞ্চমবারের মতো শিরোপা জেতে ব্রাজিল।
রাজধানী বুয়েনস আইরেসের রাস্তায় আর্জেন্টাইনদের বাঁধভাঙা উল্লাস
২০০৬ বিশ্বকাপ (ইতালি-ফ্রান্স) এই বিশ্বকাপের ফাইনালটি বিভিন্ন কারণে স্মরণীয়। এই ফাইনালে ইতালির মর্তো মাতেরাজ্জিকে মাথা দিয়ে ঢুস দিয়ে লাল কার্ড দেখেন জিনেদিন জিদান। নির্ধাতি সময়ে দুই দলের পক্ষে এই দুজনই গোল দেন। সমতায় শেষ হওয়া ৯০ মিনিটের পর অতিরিক্ত সময়েও থাকে একই ব্যবধান। টাইব্রেকারে ফ্রান্সকে ৫-৩ গোলে গোলে হারিয়ে চতুর্থবারের মতো শিরোপা জেতে ইতালি।
২০১০ বিশ্বকাপ (স্পেন-নেদারল্যান্ডস) এই বিশ্বকাকে তিকি তাকায় ফুটবল দুনিয়াকে মাত করে রাখে স্পেন। ইউরো চ্যাম্পিয়নরা শৈল্পিক ফুটবলে ফাইনালে ওঠে। শিরোপার লড়াইয়ে তাদের দেখা হয় দুর্দান্ত ছন্দে থাকা নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে। তুমুল উত্তেজনার ম্যাচে অবিরত আক্রমণ পাল্টা আক্রমণ হলেও নির্ধারিত ৯০ মিনিট গোলশূন্য থেকে যায়, ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। ১১৬তম মিনিটে আন্দ্রেস ইনিয়েস্তার গোলে ১-০ গোলের জয়ে প্রথমবারের মতো শিরোপার স্বাদ নেয় স্পেন।
২০১৪ (জার্মানি-আর্জেন্টিনা) এই আসরে আর্জেন্টিনা ২৪ বছর পর ফাইনালে ওঠে। শিরোপার লড়াইয়ে লিওনেল মেসির দলের দেখা হয় জার্মানির বিপক্ষে। মেসির জাদুমাখা পারফরম্যান্সের পরও হতাশায় ডুবতে হয় আর্জেন্টিনাকে। নির্ধারিত সময়ে কোনো দলই জালে বল পাঠাতে পারেনি। অতিরিক্ত সময়ে বদলি হিসেবে নামা মারিও গোটশে ১১৩তম মিনিটে গোল করে জার্মানির ১-০ গোলের জয় নিশ্চিত করেন। চতুর্থবারের মতো শিরোপা উল্লাসে মাতে জার্মানি।
২০১৮ বিশ্বকাপ (ফ্রান্স-ক্রোয়েশিয়া) ১২ বছর পর বিশ্বকাপের ফাইনালে ওঠে ফ্রান্স। তাদের সঙ্গী ক্রোয়েশিয়া। পুরো আসরজুড়ে দারুণ ফুটবল খেলা ক্রোয়াটরা শেষ লড়াইয়ে কুলিয়ে উঠতে পারেনি। হেরে যায় ৪-২ গোলে।