নাট্যকার মমতাজউদদীন আহমদ এর পঞ্চম প্রয়াণ দিবস আজ। ২০১৯ সালের ২ জুন নাট্যাঙ্গনের এই অনন্য মহীরুহকে আমরা হারিয়েছিলাম।
তিনি ছিলেন বহুমুখী প্রতিভা সম্পন্ন কিংবদন্তী নাট্যকার। তিনি একাধারে নাট্য নির্দেশক, অভিনেতা, ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, অনুবাদক, গবেষক এবং ভাষা সংগ্রামী। তিনি স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের নাট্য আন্দোলনে পথিকৃৎ।
পূর্ব পাকিস্তানের নাট্য আন্দোলন দিয়ে তার শুরু, এরপর ভাষা আন্দোলন, ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, মুক্তিযুদ্ধ, গ্রুপ থিয়েটার আন্দোলন, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন- সব আন্দোলনেই তিনি প্রথম সারিতে ছিলেন। তিনি বাংলাদেশে নাটককে এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছেন। বাংলা নাটকের এই কিংবদন্তি স্রষ্টার হাত ধরে স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের নাটক প্রাণ ফিরে পেয়েছিলো। বাংলা নাটক যতোদিন থাকবে, এই বাংলা ভাষা থাকবে যতোদিন, এই বাংলাদেশ যতোকাল রবে, ততোদিন মমতাজউদদীন আহমদ চির স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
মমতাজউদদীন আহমদের জন্ম ১৯৩৫ সালের ১৮ জানুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের মালদহ জেলার হাবিবপুর থানার আইহো গ্রামে। তার বাবা কলিমুদ্দিন আহমদ ও মা সখিনা বেগম। মমতাজউদদীন আহমদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সূচনা হয় মালদহের আইহো জুনিয়র স্কুলে পাঁচ বছর বয়সে। তাদের পরিবার ছিলো নাট্যপ্রেমী ও সংস্কৃতিবান। মালদহ জেলায় জন্মগ্রহণ করলেও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ভোলাহাট উপজেলায় তার শৈশব অতিবাহিত করেন। ২০১৯ সালের ২ জুন তিনি ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। তার ইচ্ছানুযায়ী নিজ জেলা ভোলাহাট উপজেলার নিজ গ্রামে তাকে দাফন করা করা হয়।
১৯৬৪ সালে তিনি চট্টগ্রাম কলেজের বাংলা বিভাগের শিক্ষক হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে শিক্ষকতা শুরু। মুক্তিযুদ্ধের সময় এখানেই কর্মরত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধকালে তিনি লিখেন নাটক ‘স্বাধীনতা আমার স্বাধীনতা' ও ‘এবারের সংগ্রাম'।
মুক্তিযুদ্ধের পর একে একে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা ও সংগীত বিভাগের অধ্যাপনা করেছেন। শিক্ষক হিসেবে তিনি ছিলেন অসম্ভব জনপ্রিয়। ছাত্ররা তার ক্লাস মিস করতে চাইতো না। পরবর্তীতে ১৯৭৭-৮০ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে গবেষণা ও প্রকাশনা বিভাগের পরিচালক ছিলেন মমতাজউদদীন আহমদ।
স্বাধীনতার এক যুগ পরে এসে তিনি লিখেন বিখ্যাত নাটক ‘সাতঘাটের কানাকড়ি'। এরপর ‘কী চাহ শঙ্খচিল' ও ‘রাজা অনুস্বরের পালা'। এ দুটি নাটক পশ্চিমবঙ্গের রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচিতে তালিকাভুক্ত হয়েছিল।
লিখেন ‘ক্ষত বিক্ষত', ‘রঙ্গপঞ্চাদশ', ‘প্রেম বিবাহ সুটকেশ", ‘জমিদার দর্পণ', ‘হৃদয় ঘটিত ব্যাপার স্যাপার' এর মতো অসাধারণ সব নাটক। কেবল মঞ্চেই নয়, লিখেন টেলিভিশনের জন্যও। লিখেন ‘দখিনের জানালা’, ‘এই সেই কণ্ঠস্বর’, ‘সহচর’, ‘কূল নাই কিনার নাই’ ইত্যাদি।