সাতসতেরো

প্রাকৃতজনের গবেষক যতীন সরকারের ৮৮তম জন্মদিন আজ

যতীন সরকারকে বলা হয়, প্রাকৃতজনের গবেষক। 'প্রাকৃতজন' শব্দের অর্থ নিতান্ত সাধারণ মানুষ।প্রগতিবাদী এই চিন্তাবিদের ৮৮তম জন্মদিন আজ।

যতীন সরকার ১৯৩৬ সালের ১৮ আগস্ট নেত্রকোনা জেলার চন্দপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।আজীবন তিনি ময়মনসিংহে থেকেছেন এবং প্রধানত নাসিরাবাদ কলেজে বাংলা বিভাগে অধ্যাপনা করেছেন। তার রচিত গ্রন্থসমূহ তার গভীর মননশীলতা ও মুক্তচিন্তার স্বাক্ষর বহন করে। ১৯৬০-এর দশক থেকে তিনি ময়মনসিংহ শহরের সকল সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত ছিলেন। তিনি অসাধারণ বাগ্মিতার জন্য জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। ১৯৬০ এর দশকের শেষের দিকে, সরকার ময়মনসিংহের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন। তার উপস্থিতি শহরে প্রতিটি সাহিত্যিক, সাংস্কৃতিক ও শিক্ষামূলক প্রোগ্রামে অনিবার্য ছিলো।

যতীন সরকার প্রান্তিক জীবন-অভিজ্ঞতা-ঋদ্ধ, গণমানস-সচেতন লেখক। যতীন সরকার সেই বিরলপ্রজ লেখক, যার তৃতীয় নয়ন আছে এবং ওই তৃতীয় নয়নের আলো ফেলে তিনি সর্বসাধারণের বোধাতীত জগৎকে স্পষ্ট করে দেখতে পান কিংবা সর্বসাধারণের চোখে যা ‘পরিত্যাজ্য’, তিনি এর মধ্যেও দেখতে পান অপার সম্ভাবনা।

যতীন সরকারের লেখা প্রথম বই ‘সাহিত্যের কাছে প্রত্যাশা’ প্রকাশিত হয়েছিল তার পঞ্চাশোর্ধ্ব বয়সে। যতীন সরকারের রচনার একদিকে আছে সমাজ, ধর্ম, দর্শন, রাজনীতি-অর্থনীতি সম্পর্কে বিশ্লেষণ; অন্যদিকে আমাদের লৌকিক জীবনের মর্মান্বেষণ এবং বিস্মৃতপ্রায় সাহিত্যকে নতুন করে উপস্থাপনের সফল প্রচেষ্টা। 

তার আত্মকথনমূলক অনবদ্য দুটি গ্রন্থ-‘পাকিস্তানের জন্মমৃত্যু দর্শন’ এবং ‘পাকিস্তানের ভূত দর্শন’। এ দুই গ্রন্থে যতীন সরকার ব্রিটিশ শাসিত পূর্ববঙ্গ, পাকিস্তান শাসিত পূর্ব বাংলা এবং স্বাধীন বাংলাদেশ—এই তিন পর্যায়ের, তিন কালের মহাসাক্ষী হিসেবে ইতিহাস বর্ণনায় প্রবৃত্ত হয়েছেন।

১৯৮৫ সালে বাংলা একাডেমি কর্তৃক প্রকাশিত আরেকটি বই-‘বাংলাদেশী কাভিগান’। তার আরো কিছু বই হচ্ছে- ‘সাহিত্যের কাছে প্রত্যাশা’, ‘বাঙ্গালী সমাজতন্ত্র ঐতিহ্য’, ‘সাংস্কৃতিক সংগ্রাম’, ‘মানব মন’, ‘মানব সপ্ন এবং সমাজ বিপ্লব’, ‘আমাদের সাংস্কৃতিক দিগ-দিগন্ত’, ‘সিরাজউদ্দিন কাশিমপুর’, ‘গল্পে গল্পে বয়ান’ এবং ‘দিগন্ত নতুনবাধ ও বিজন্মচেতনা’।

১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় তার বয়স ছিল ১১ বছর মাত্র। এই বয়সের কোনো বালকের পক্ষে রাজনীতির ঘোরপ্যাঁচ অনুভব করতে পারার বিষয়টা কঠিন বৈকি। নিতান্ত শিশু বয়সেই তিনি দার্শনিক (দর্শন করার ক্ষমতাপ্রাপ্ত মানুষ) হয়ে উঠেছিলেন। কলকাতা থেকে প্রকাশিত অর্ধ সাপ্তাহিক আনন্দবাজার, সাপ্তাহিক মোহাম্মদী, দৈনিক যুগান্তর, সাপ্তাহিক দেশ ইত্যাদি পত্রিকার নিয়মিত পাঠক ছিলেন তিনি এবং ওই সব পত্রিকা পড়েই সমকালীন রাজনীতির গতি-প্রকৃতি সম্পর্কে সচেতন হয়ে উঠেছিলেন। 

তিনি স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার, বাংলা একাডেমি পুরস্কারসহ অনেক পুরস্কার লাভ করেন।