সাতসতেরো

গানের আকাশে এক অবিস্মরণীয় নক্ষত্র

বিখ্যাত অনেক বাংলা গানের গীতিকার ও সুরকার পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়ের চলে যাওয়ার দিন আজ। ১৯৯৯ সালের ৭ সেপ্টেম্বর তিনি হুগলি নদীতে লঞ্চ থেকে লাফ দিয়ে মৃত্যুবরণ করেন।

‘কে প্রথম কাছে এসেছে’, ‘আজ মন চেয়েছে আমি হারিয়ে যাব’, ‘নিঝুম সন্ধ্যায় ক্লান্ত পাখিরা’ কিংবা ‘আমি শ্রী শ্রী ভজ হরি মান্না’-এর মতো বিখ্যাত গানগুলো তারই লেখা। বাংলা গানের ইতিহাসে অন্যতম সেরা ও কালজয়ী গীতিকার তিনি। এ ছাড়া সুরকার হিসেবেও তার সৃষ্টি কালের গণ্ডি পেরিয়েছে।

তার লেখা বিখ্যাত গানগুলোর মধ্যে রয়েছে- আকাশপানে চেয়ে চেয়ে, আজ আবার সেই পথেই দেখা হয়ে গেল, আজ মন চেয়েছে আমি হারিয়ে যাব, আমার বলার কিছু ছিলো না, আমার ভালোবাসার রাজপ্রাসাদে, আমি ফুল না হয়ে কাঁটা হয়েই বেশ ছিলাম, আমি মিস্ ক্যালকাটা, আয় খুকু আয় খুকু আয়, এক বৈশাখে দেখা হলো দু'জনার, ও কেনো এতো সুন্দরী হলো, ওগো বৃষ্টি আমার চোখের পাতা ছুয়ো না, ক’ফোঁটা চোখের জ‍ল ফেলেছ,  কতদিন পরে এলে একটু বসো, নিঝুম সন্ধ্যায় পান্থ পাখিরা, মরি মরি একী লজ্জা, সুন্দরী গো দোহাই দোহাই মান করো না, আবার হবে তো দেখা, সুন্দরী গো দোহাই দোহাই, দীপ ছিলো শিখা ছিলো, পৌষের কাছাকাছি রোদ মাখা, সে আমার ছোট বোন, যে ক্ষতি আমি নিয়েছিলাম মেনে, অমর শিল্পী তুমি কিশোর কুমার, তোমায় জানাই প্রণামসহ আরও অনেক গান।

পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্ম ১৯৩৪ সালের ২ মে। পশ্চিমবঙ্গের হাওড়ায় তার জন্ম। বাবা কান্তিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন নির্বাক চলচ্চিত্রের অভিনেতা। 

সাংস্কৃতিক পরিবারে জন্ম ও বেড়ে ওঠার সুবাদে ছোট বেলা থেকেই পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভেতরে এই জগতের প্রতি ভালোবাসা ও আগ্রহ জন্মে। এ কারণে নাটক, সাহিত্য ও সঙ্গীতকলার সঙ্গে ছিলো তার আত্মিক সম্পর্ক।

মাত্র ১৭ বছর বয়সেই চলচ্চিত্রে গান লিখেছিলেন পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়। সরোজ মুখোপাধ্যায়ের ‘অভিমান’ সিনেমায় তার লেখা প্রথম গান প্রকাশ হয়। এরপর ধীরে ধীরে তিনি ইতিহাস গড়েছেন গানের ভুবনে। উপমহাদেশের কিংবদন্তি সঙ্গীতশিল্পী মান্না দে’র সঙ্গে তিনি জুটি বেঁধে বহু শ্রোতাপ্রিয় গান উপহার দিয়েছেন। এক সময় মান্না দে-পুলক বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন তুমুল জনপ্রিয় জুটি। মান্না দে’র গাওয়া প্রেমের গানগুলোর মধ্যে সিংহভাগই পুলকের রচিত।

বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে পুলক বন্দ্যোপাধ্যায় চার হাজারের বেশি গান লিখেছেন। তার লেখা ও সুরে গান গেয়েছেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, মান্না দে, গীতা দত্ত, লতা মঙ্গেশকর, আশা ভোশলে, হৈমন্তী শুকলা, শ্যামল মিত্র, ভূপেন হাজারিকা, আরতী মুখোপাধ্যায়সহ অনেক বিখ্যাত শিল্পী। সেসব গান এখনো শ্রোতাদের মনে জায়গা দখল করে আছে। আর থেকে যাবে যুগ যুগ ধরে।

অভিমান বুকে বেঁধে নিজের হাতেই নিজের জীবন শেষ করে দিয়েছিলেন পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু তার অমর সৃষ্টিকর্মের মাধ্যমে তিনি এখনো বেঁচে আছেন গানের আকাশে এক অবিস্মরণীয় নক্ষত্র হয়ে।