সাতসতেরো

পৌষসংক্রান্তি, সাকরাইন উৎসবে মেতে ওঠার দিন আজ

প্রচণ্ড শীতে কাঁপিয়ে দিয়ে বিদায় নিচ্ছে পৌষ। আজ পৌষ মাসের শেষ দিন। আর পৌষের শেষ দিন মানেই বাঙালীর ঐতিহ্যবাহী পৌষসংক্রান্তি। 

এই দিনে আজ পুরান ঢাকা মেতেছে সাকরাইন উৎসবে। এ উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ ঘুড়ি উড়ানো। উৎসবকে মাথায় রেখে টানা এক সপ্তাহ ধরেই ছিলো পুরান ঢাকার অধিকাংশ গলিতে আর খোলা ছাদে থাকে সুতা মাঞ্জা দেওয়ার ধুম। 

পুরান ঢাকার ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে প্রতি বছরের মতো এবারও আকাশে নানা রঙের কয়েক লাখ ঘুড়ি উড়ানো হবে। সকাল থেকেই ছাদে ছাদে শুরু হয়েছে ঘুড়ি ওড়ানো। ছোট বড় সবার অংশগ্রহণে মুখরিত প্রতিটি বাড়ির ছাদ। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়বে উৎসবের রঙ। আর আকাশে বাড়বে ঘুড়ির সংখ্যা। সকালের তুলনায় বিকেল উৎসব পরিপূর্ণতা লাভ করে। ছাদে চলে গানবাজনা আর খাওয়া-দাওয়া। সে সঙ্গে আনন্দ আরও এক ধাপ বাড়িয়ে দেয় ঘুড়ির কাটাকাটি খেলা। ঘরে ঘরে তৈরি হয় মুড়ির মোয়া, বাখরখানি আর পিঠা বানানোর ধুম। 

পুরান ঢাকার গেণ্ডারিয়া, মুরগীটোলা, ধুপখোলা, দয়াগঞ্জ, যাত্রাবাড়ী, সূত্রাপুর, কাগজিটোলা, বাংলাবাজার, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, কলতাবাজার, ধোলাই খাল, নারিন্দা, শাঁখারি বাজার, রায়সাহেব বাজার, তাঁতী বাজার, সদরঘাট এবং লালবাগ এলাকার মানুষ এ উৎসবে দিনব্যাপী ঘুড়ি উড়াবে। সারাদিন ঘুড়ি উড়ানোব পরে হয়তো সন্ধ্যায় পটকা ফুটবে, আবার ফানুসও উড়বে। কারণ, প্রতি বছরের চিত্র এমনটাই। 

পৌষসংক্রান্তির আরেক নাম মকর সংক্রান্তি। এটি বাঙালি সংস্কৃতিতে একটি বিশেষ উৎসবের দিন হিসেবে পরিগণিত। পৌষসংক্রান্তি-তে মূলত নতুন ফসলের উৎসব ‘পৌষ পার্বণ’ উদযাপিত হয়। নতুন ধান, খেজুরের গুড় এবং পাটালি দিয়ে বিভিন্ন ধরনের ঐতিহ্যবাহী পিঠা তৈরি করা হয়, যার জন্য প্রয়োজন হয় চালের গুঁড়া, নারিকেল, দুধ আর খেজুরের গুড়। 

এই তিথি হিন্দুবিশ্বাসে অতি পবিত্র। এদিন পুণ্যস্নান পূজা ইত্যাদি থাকে। পাশাপাশি ঘরে ঘরে থাকে খাদ্য সংক্রান্ত এক বিশেষ লোকাচারও। তা হল পিঠেপুলি তৈরি। তিন দিন ধরে এই সময়ে ঘরে ঘরে হরেক পিঠে তৈরি করেন বাঙালি মেয়েরা। পিঠের তালিকা দীর্ঘ। তবে ঘরোয়া রান্নাবান্নার জ্ঞানের অভাবে একালে হারিয়ে গিয়েছে তার অনেকগুলিই। এখনও যেগুলো টিকে রয়েছে, সেগুলি হলো সেদ্ধপিঠে, দুধপুলি, মালপোয়া ইত্যাদি।