সাতসতেরো

দেবব্রত চক্রবর্তী বিষ্ণুর তিন কবিতা

তোমার জন্য শিলালিপি

কোন বোধের বেদনায় তুমি কবি হয়ে উঠেছ তোমার এমন প্রশ্নে বিস্ময়বোধক চিহ্ন এঁকেছি বহুবার বলেছি, প্রতি মুহূর্তে বিষাদ নিয়ে আনন্দের দিকে ছুটে যাই মানুষগুলোর মাঝে অ+মানুষ খুঁজতে তাদের দুর্গন্ধের মাঝে প্রকৃত মানুষের নিঃশ্বাসেও সরে না দুর্গন্ধ। 

নিজেকে নিঃশেষ করে অন্যকে অশেষ করবে কীভাবে তোমার এমন প্রশ্নে যতিচিহ্ন দিয়ে বহুবার বলেছি যা কিছু বিলীন হচ্ছে অস্বাভাবিক দৈন্যের গ্রাসে  জীবনের নিত্যগতির ফাঁকে যা কিছু হারিয়ে যায় এ নিয়ে কষ্ট পুষে নষ্টের অধ্যায় দীর্ঘ করা নিরর্থক। 

অকালপ্রয়াত কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর কাছ থেকে  বিষণ্ন সুন্দর ধার করে রেখেছিলাম সেই কবে আনন্দের ভেতর দুঃখ নয় বরং দুঃখের ভেতর আনন্দ কথা বলুক অনর্গল, এই প্রার্থনা জানিয়েছি অমলিন সবুজের কাছে আপাতত তুমি সেই শিলালিপি পাঠ করো। 

বিষাদের বিসর্জন 

আজ সন্ধ্যায় অপ্রাপ্তিগুলো ঝেড়ে ফেলে স্থির করলাম প্রতিক্ষণ আনন্দ নিয়ে আর কখনও বিষাদের দিকে যাবো না  কখনও না, কিছুতেই না। 

তোমরা আমার স্বজন, কাতর আত্মার আশ্রয়, নিরাশ্রয়ী গৃহীর গৃহ  বরং আরও একটু স্পষ্ট করে বলি, আড়ষ্টতার জাল ছিঁড়েই বলি  তোমাদের নির্মাণের ভাঁজে ভাঁজে গচ্ছিত রেখেছি সুখস্মৃতিগুলো  জানি, খুব করেই জানি; অগোচরে তোমরা তা খরচ করবে না কখনও  তোমাদের অনুভূতির স্পর্শে দুঃসময়ের কার্নিশ থেকে দুঃখরেখাগুলো মুছে গেছে।  

তোমরা অনাবিল আনন্দ, মায়াময় আকুলতা, পরার্থে ব্যাকুল  আমার কাছে যারা জানতে চেয়েছে, ওদের ধম্ম কী গো?  বলেছি, শিকড় দিয়ে মাটি আঁকড়ে থাকা, ওদের ধম্মকম্ম শুধুই সৃজনরেখা তোমরা যোজন যোজন পথ পেরিয়ে সৃষ্টি-নির্মাণের আরামদায়ক সমন্বয় সময়ের বৈরী স্রোতেও রূপান্তরের আশায় প্রতিনিয়ত অনুশীলনে উজানমুখী  প্রেমময়, বন্ধুত্বপূর্ণ ও মনোমুগ্ধকর সম্পর্ক, নিরন্তর কথোপকথন।    আমার সকল অনুভূতি যখন সরলরেখায় চলছিল   আর সব আনন্দ হেঁটে যেত বিষাদের দিকে অবিরত তখনই তোমরা শেখালে নির্মোহ অনুভূতির নামই ভালোবাসা  আর তাই আজ সন্ধ্যায় স্থির করলাম   আনন্দ নিয়ে আর কখনও বিষাদের দিকে যাবো না  কখনও না, কিছুতেই না।

 

বহুমাত্রিক জ্যোতির্ময়ী

পুরুষতান্ত্রিক সমাজ তোমার নাম দিয়েছে অর্ধাঙ্গিনী মিছিলে মিছিলে তোমার পায়ের ধুলা হয়ে  আমি তোমার নাম দিয়েছি শ্রেষ্ঠাঙ্গিনী।

তোমাকে পাওয়ার পর দীর্ঘ পরমায়ুর প্রত্যাশা বেড়ে যায় তোমার সবুজ জমিনে পাথরচাঁপা সাদা কষ্ট নিংড়ে আমিও পেয়েছি দুঃখ উদযাপনের শক্তি ভালোবাসার বিস্তীর্ণ আকাশ দিয়েছ এবার কিছু নান্দনিক কষ্ট দাও। 

বড্ড অকিঞ্চিৎকর লোক আমি আমার স্বপ্নের স-এর নিচে ব-ফলা নেই সব মর্মস্পর্শী গল্পই উৎকৃষ্ট মনে হয় আমার কাছে এত ভালোবাসা শুধু লাজুক ও ঋণীই করেনি জীবনের নানা মেরুকরণের সমীকরণে জেনেছি তুমি বহুমাত্রিক জ্যোতির্ময়ী।