তাসনুভা হায়দার শাহ সিমেন্টের ডেপুটি ম্যানেজার (ব্র্যান্ড মার্কেটিং) পদে দায়িত্ব পালন করছেন। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশোনা করে এই প্রতিষ্ঠানেই শুরু হয় তার পেশাজীবন। কর্মজীবনে বৈচিত্রময় কাজ তিনি উপভোগ করেন। তিনি মনে করেন মার্কেটিংয়েও নারীর নিজের দক্ষতা প্রমাণের সুযোগ রয়েছে। এই বিশ্বাস থেকে তিনি নিজেও কাজ করছেন ব্র্যান্ড ডেভেলপের জন্য প্রোডাক্ট ও টেকনিক্যাল ইস্যু নিয়ে। এ কাজে নিজেকে দারুণভাবে প্রমাণ করেছেন তাসনুভা! কাজ করতে গিয়ে ডিজিটাল এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্র্যান্ড কমিউনিকেশনে তার সম্পৃক্ততা আরও বৃদ্ধি পায়।
তাসনুভা হায়দার বলেন, ‘মিডিয়াতে ব্র্যান্ডিং বা ওভারঅল ব্র্যান্ড কমিউনিকেশন ও ডিজিটাল কন্টেন্ট, থিমেটিক ও ক্রিয়েটিভ বিষয়গুলোতে কাজ করতে পেরে ভালো লাগছে। আমি প্রতিষ্ঠানে কিছুটা হলেও অবদান রাখতে পারছি। ব্র্যান্ডকে ভালোবেসে এবং প্রতিষ্ঠানের গোল অনুযায়ী কাজ করতে করতে এগিয়ে চলেছি।’
মার্কেটিংয়ের সঙ্গে যুক্ত প্রতিটি ক্ষেত্রে কাজের সুযোগ পাওয়া এবং সেই অনুযায়ী দক্ষতা প্রমাণের সুবাদে তাসনুভা হায়দার আজ এই পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করছেন। ব্র্যান্ড মার্কেটিংয়ে সাফল্য পেতে হলে নিজস্ব আগ্রহ ও চোখ-কান খোলা রাখার পাশাপাশি ‘আউট অব দ্যা বক্স’ চিন্তা-ভাবনা জরুরি বলে মনে করেন তাসনুভা। তিনি বলেন, ‘আউট অব দ্যা বক্স চিন্তা-ভাবনা করতে পারলে এটা এক্স ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করে।’
তাসনুভা জানান, অফিসে সহকর্মীদের সহযোগিতা এবং সিনিয়রদের গাইড লাইন পেয়েছেন তিনি। পরিবার থেকে সাপোর্ট পেয়েছেন। এ জন্য প্রথমে ‘ধন্যবাদ’ দিতে চান তার মাকে। মায়ের কাছে কন্যাসন্তান রেখে অফিসের কাজ করেন তাসনুভা। রাত করে বাড়ি ফিরতে হয় বলে কখনো বরের কাছে কৈফিয়ত দিতে হয়নি। এটা যেমন স্বস্তির, একইভাবে অফিস থেকে নারী কর্মীদের গাড়ি সার্ভিস দেওয়া হয়; এই নিয়মকেও আশীর্বাদ মনে করেন তিনি।
তাসনুভা বলেন, ‘কোম্পানির রুলস অনুযায়ী নারী হিসেবে আমি বা আমরা বেশ কিছু সুযোগ পাই। যেমন মাতৃত্বকালীন ছুটি। এই ছুটি আমার প্রয়োজন। এটা কিন্তু বাড়তি সুবিধা চাওয়া বা পাওয়ার বিষয় নয়। আবার আমাদের কোম্পানিতে মেয়েদের জন্য গাড়ি সার্ভিসের সুযোগ আছে। এই সুযোগ কেন তৈরি করতে হলো? তার কারণ মার্কেটিংয়ে কাজ করলে অনেক সময় রাত করে বাড়ি ফিরতে হয়। অনেক সময় রাত ১১টা পর্যন্তও কাজ করতে হয়। আমাদের সমাজ তো এমন জায়গায় নেই যে রাত ১১টার সময় একটি মেয়ে একা নিরাপদে ঘরে ফিরতে পারবে। এখন যদি বলি, আমি স্বাধীন, আমি সাহসী; এই বলে ওই সময়ে একা অফিস থেকে বেরিয়ে পড়লে সেটা দুঃসাহসের পর্যায়ে পড়বে। সামাজিক পরিস্থিতি আমাদের পরিবার, সমাজ, অফিস এবং নিজেদের বুঝতে হবে।’
নারী কর্মীকে গাড়ি সার্ভিস দেওয়াটা বাড়তি সুবিধার পর্যায়ে পড়ে না বরং অফিসের দায়িত্বশীলতার মধ্যে পড়ে বলে মনে করেন তাসনুভা।
আপনি যখন কাজ শুরু করলেন তখন থেকে এখন পর্যন্ত মার্কেটিং সেক্টরে নারীর অংশগ্রহণ কেমন দেখতে পাচ্ছেন? এ প্রশ্নের জবাবে তাসনুভা বলেন, ‘এখনও এই জায়গাটা খুব চ্যালেঞ্জিং। কিন্তু যারা কাজ করছেন তারা খুব ভালো করছেন। তারপরও মার্কেটিং পেশায় আসতে নারীরা কম আগ্রহী। এই জায়গায় পরিবর্তন আনতে হলে একদিকে কোম্পানিগুলোকে নারীর জন্য নিরাপদ কর্ম পরিবেশ তৈরি করত হবে, অন্যদিকে নারীর প্রতি ইতিবাচক সামাজিক মনোভাব তৈরি হতে হবে।’
তাসনুভার মতে, বড় কোম্পানিগুলো নারীর জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরিতে তৎপরতা দেখাচ্ছে। আবার ছোট কোম্পানিতেও এই সুযোগ থাকতে পারে। যেমন একটি আর্কিটেক্ট ফার্ম, সেখানে হয়তো চার-পাঁচজনের মধ্যে এক-দুইজন নারী কাজ করতে পারেন। এখানে নারীর জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরিতে মালিকের ‘ভিশন’ গুরুত্বপূর্ণ।
বড় বড় কোম্পানিগুলো নারীবান্ধব অনেক নিয়ম-কানুন তৈরি করছে। তাছাড়া বড় কোম্পানিতে কাজ করলে গ্রুমিংয়ের অনেক সুযোগ থাকে বলেও মনে করেন তাসনুভা হায়দার।
অফিসগুলোতে নারীকে যেন হেয় হতে না হয় এ জন্য নারীর নিজেরও কিছু করণীয় আছে বলে মনে করেন তিনি। তাসনুভা বলেন, ‘পার্সোনালি আমার যিনি বস তিনি নারীদের অনেক সম্মান করেন। তার অর্থ এই নয় যে, কাজের ক্ষেত্রে আমি কোনো ছাড় পেয়েছি। পারস্পরিক বোঝাপড়া তৈরিতে দুই পক্ষেরই ভূমিকা পালন করতে হয়। আমার বস যখন একজন পুরুষ কলিগকে কিছু বোঝান তখন আমিও বুঝি যে এই ভুলটা করা যাবে না। এটা কিন্তু বায়াসনেস না।’
‘নারী- এই পরিচয় ভুলে যাওয়ার বা পাশ কাটানোর কোনো কারণ দেখি না।’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘Women are really special.’