সাতসতেরো

আহলান সাহলান, মাহে রমজান

বছর ঘুরে মানবতার মুক্তির বার্তা নিয়ে এলো মাহে রমজান। প্রতিটি মুমিনের কাছে এ মাস বহু প্রতীক্ষিত। পাপ-পঙ্কিলতার পাঁকে নিমজ্জিত হয়ে খেই হারিয়ে ফেলা মুমিন এ মাসের প্রীতিতে ঈমানি আলোয় আবারো বলিয়ান হয়ে ওঠে। তার হৃদয়ে আশার শতদল প্রস্ফূটিত হয়। সে শাশ্বত ইসলামের সুশীতল শান্ত-নিবিড়-ছায়াকুঞ্জে আশ্রয় পেতে মহান রবের নিকট নিজেকে সঁপে দেয়। তাই আমরা এ মাসকে স্বাগত জানাতে সম্মিলিত কণ্ঠে বলে উঠি- আহলান সাহলান, মাহে রমাযান। আল্লাহ তা’আলা কতই না চমৎকার ভাষায় বলেছেন, অর্থাৎ-‘রমজান মাস, যে মাসে কুরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে, মানুষের জন্য সৎপথের প্রদর্শনকারী, সরল-সঠিক পথ স্পষ্টকারী এবং সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী হিসাবে। (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৮৫)

এ মাসের দিবসসমূহে প্রতিটি নর-নারীকে মহান আল্লাহ রোজা রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। বলেছেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে যেভাবে তোমাদের পূর্বসূরীদের ওপর ফরজ করা হয়েছিল, যেন তোমরা মুত্তাকি (আল্লাহভীরু) মানুষে পরিণত হতে পারো।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৮৩)

বিখ্যাত সাহাবী সালমান ফারসী রা. বলেন, প্রিয় নবী সা. শাবান মাসের শেষ তারিখে একটি বক্তৃতা দেন। তিনি বলেন, হে লোক সকল! তোমাদের মাথার উপর ছায়াস্বরূপ একটি মর্যাদাশীল মোবারক মাস আসছে। যার মধ্যে শবে কদর নামে একটি রাত আছে যা সহস্র মাস হতে উত্তম। আল্লাহ তা’আলা রোজা তোমাদের ওপর ফরজ করেছেন এবং রাত জাগরণ অর্থাৎ তারাবিহ পড়াকে তোমাদের জন্য পুণ্যের কাজ দিয়াছেন। যে ব্যক্তি এই মাসে কোনো নফল আদায় করল সে যেন রমজানের বাইরে একটি ফরজ আদায় করল। আর যে এই মাসে একটি ফরজ আদায় করল সে যেন অন্য মাসে ৭০টি ফরজ আদায় করল।

নবীজি সা. আরও বলেন, এটা ধৈর্যের মাস। ধৈর্যের বিনিময় হলো জান্নাত। এ মাসে মানুষের সাথে সহানুভূতি প্রদর্শনের মাস। এই মাসে মুমিনের রিজিক বৃদ্ধি করে দেওয়া হয়। যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে, সে ব্যক্তির জন্য এ কাজ গুনাহ মাফ ও জাহান্নামের শাস্তি হতে মুক্তির কারণ হবে। সাথে সাথে রোজাদারের সাওয়াবের সমতুল্য সাওয়াব সে ব্যক্তি লাভ করবে। সেই রোজাদারের সাওয়াব বিন্দুমাত্রও কমবে না। সাহাবারা রা. জিজ্ঞাসা করিলেন, হে আল্লাহর নবী সা. আমাদের মধ্যে অনেকেরই এই সামর্থ্য নাই যে, সে অপরকে ইফতার করাবে অর্থাৎ পেট ভর্তি করে খাওয়াবে। নবীজি সা. বললেন, পেট ভর্তি করে খাওয়ানো জরুরি নয়। যে ব্যক্তি কাউকে একটি খেজুর দ্বারা ইফতার করাবে আল্লাহ তা’আলা তাকেও উক্ত সাওয়াব প্রদান করবেন। (বায়হাকি)

বিশ্বনবী সা.-এর এ হাদিসে মাহে রমজানের গুরুত্বপূর্ণ অনেকগুলো বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। এ সকল মর্যাদাগুলো অর্জন করতে হলে আমাদের উদ্যোগী হতে হবে। শরঈ ওজর ব্যাতীত কোনো ক্রমেই রোজা ছাড়া যাবে না। সব ধরনের পাপাচার থেকে বিরত থাকতে হবে। ২০ রাকাত তারাবি আদায়ে যত্নবান হতে হবে। সাহরির সময় উঠে তাহাজ্জুদ নামাজে অভ্যস্ত হতে হবে। ইফতারির সময় দোয়া কবুলের সময়। পরিবারের সবাইকে নিয়ে দোয়ার আয়োজন করতে হবে। সমাজের অসহায়দের প্রতি সহযোগিতার হাত প্রসারিত করতে হবে। 

আমাদের প্রকৃত হিসাবের খাতা থেকে পাপ মোচন করতে কুরআন সুন্নাহর আলোকে এ মাসের শুরুতেই আমাদের পথ নকশা করতে হবে। সে অনুযায়ী আমল করতে হবে। তবেই মিলবে ইহকালীন শান্তি আর পরোকালীন মুক্তি। আল্লাহ তা’আলা আমদের তাওফিক দিন। আমিন। প্রয়োজনীয় মাসআলা: রোজার ফরজ ৩টি: ক. রোজার নিয়ত করা খ. সব ধরনের পানাহার থেকে বিরত থাকা গ. স্ত্রী সহবাস থেকে বিরত থাকা।

নিয়তের অর্থ সংকল্প করা। বাংলায় এভাবে বললেই চলবে যে, ‘আমি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে রোজার নিয়ত করলাম।’ নিয়ত মুখে উচ্চারণ করা জরুরি নয়। মনে মনে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করলেই চলবে। সাহারির সময়ই নিয়ত করা উত্তম। তবে অর্ধদ্বিবসের পূর্বে অবশ্যই নিয়ত করতে হবে। এরপর নিয়ত করলে রোজা হবে না। প্রতিটি রোজার জন্য পৃথক পৃথক নিয়ত করতে হবে। রাতে নিয়ত করার পর সাহরির শেষ সময়ের পূর্ব পর্যন্ত সব ধরনের পানাহার কিংবা স্ত্রী সহবাসে রোজার ক্ষতি হবে না।