সাতসতেরো

ধরিত্রী তুমি আজ কেমন আছো?

সেই কবে ১৯৭০ সালের ২২শে এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান শহরগুলোতে প্রায় ২ কোটি মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছিল। মানুষের যা খুশি তাই কর্মকাণ্ডে আমাদের একমাত্র থাকার জায়গা পৃথিবীটার যে করুণ অবস্থা -তার প্রতিবাদে। তাহলে ভাবুন, তারও অর্ধশত বছর পর আমাদের পৃথিবীর আজ কি অবস্থা! কোনো ডাটা কোনো গবেষণাভিত্তিক প্রতিবেদনের প্রয়োজন নেই। আজকের খবরের কাগজটাই দেখুন, দেশের স্কুল কলেজগুলো বন্ধ। তীব্র তাপ প্রবাহ চলছে। শুধু বাংলাদেশে নয়, অনেকগুলো দেশে। মরুর দেশে বন্যা হচ্ছে, বরফপড়া কমে গরম পড়ার সময়ে হঠাৎ তুষার পড়ছে, হঠাৎ দাবানলে জঙ্গল পুড়ছে। ভূগোলের আবহাওয়া তছনছ হয়ে যাচ্ছে।

মানুষ প্রকৃতির সাথে তাল মেলাতে পারছে না। প্রকৃতিও হয়তো আর আমাদের বাড়াবাড়ি মেনে নিতে পারছে না।  চিকিৎসাবিদ্যা যেমন উন্নত হচ্ছে, তেমনি নিত্যনতুন অসুখ-বিসুখও বাড়ছে। করোনা গেলো বেশি দিন নয় কিন্তু আমরা ইতিমধ্যে সেসব দিনের বিভীষিকা ভুলতে বসেছি। চারদিকে যুদ্ধ-যুদ্ধ ভাব দেখে কী বোঝা যায়, মাত্র কয়েকবছর আগে আমরা বিনা রক্তপাতে কতো মানুষ হারিয়েছি? অথচ মহামারি শেষ হতেই আমরা রক্তারক্তিতে লিপ্ত হয়েছি। পৃথিবী অসহায় হয়ে দেখছে। পৃথিবী যদি কথা বলতে পারত, তবে কী বলতো?

এখন পর্যন্ত পৃথিবী একমাত্র গ্রহ যেখানে প্রাণ আছে! পৃথিবীর বাইরে থেকে পৃথিবীকে দেখার সৌভাগ্য হয়তো আমাদের কারোরই হবে না। দেখা গেলে বোঝা যেত- সৌরজগতে এই ছোট সবুজ গ্রহটাই সবচে সুন্দর। মানুষ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা AI তৈরি করতে পেরেছে। কৃত্রিম, আসল নয়। এখনও আমরা নিশ্বাস নেবার জন্য অক্সিজেনের উপর নির্ভরশীল যা গাছ থেকেই আসে। করোনা মহামারিতে ভালো থাকার জন্য যে ভিটামিন সি, ভিটামিন ডি’র কথা বলা হয়েছে, তার সবই প্রকৃতি থেকেই আসে। মানুষ করোনার ওষুধ আজও বের করতে পারেনি। অক্সিজেন, খাবার পানি, সূর্যের আলো – এখনও বিনা পয়সায় প্রকৃতি থেকেই পাওয়া যায়। বিনা পয়সায় পাই বলেই কি এতো অবজ্ঞা?

পৃথিবীর নীরব, নিরীহ, প্রকৃতি আমাদের মাতৃসম। গাছ কাটি, নদী ভরাট করি, পাহাড় কেটে বিলাস কুঞ্জ বানাই, বন্যপ্রাণীদের সাথে যা-তা আচরণ করি, প্লাস্টিক দিয়ে মাটি প্রায় ঢেকে ফেলেছি। আমাদের অসহায় ধরণীমাতা চেয়ে চেয়ে সহ্য করেন, কিছুই বলেন না। কিন্তু সমস্ত সহ্যের সীমা পার হয়ে গেলে কখনো কখনো অতিবন্যা ,অতিখরা, অতিবৃষ্টি, অতিমারি, মহামারিও আসে। আমরা কাতর হই, মারা পড়ি, বসুন্ধরাকে ভালবাসার শপথ করি। বিপদ কেটে গেলে আবার সব ভুলে যাই, আবার আগের চেয়েও বেশি বাড়াবাড়ি করি। স্রষ্টার তৈরি ইকো সিস্টেমে হাত দেওয়ার ভয়ংকর স্পর্ধা প্রকৃতি ভালভাবে নেওয়ার কথা না। আর প্রকৃতির প্রতিশোধের সাথে মানুষ কোনো-কালেও পেরে ওঠেনি।

পৃথিবীতে ৮.৭ মিলিয়ন প্রজাতি আছে, তার থেকে মানুষ প্রজাতি গায়েব হয়ে গেলে এই ধরিত্রীর কিছুই যাবে আসবে না, বরং প্রকৃতি আরও সবুজ আরও রঙিন হয়ে উঠবে, সব প্রাণী আরও আনন্দে বিচরণ করবে। পৃথিবীর কিন্তু আমাদের প্রয়োজন নেই, বরং আমাদেরই এই পৃথিবী ছাড়া যাওয়ার জায়গা নেই। নিজের সম্পদগুলোর যেমন যত্ন নেই, তার এক শতাংশ যত্নও যদি আশেপাশের গাছপালা পশুপাখি খাল বিল নদীর নিতাম- জীবন অনেক সুখের হতো। প্রকৃতিবন্দনা কোনো বিলাসিতা কিংবা সাহিত্য নয়, বরং আমরাই প্রকৃতি। এখান থেকেই এসেছি, এখানেই মিশে যাবো। যে গাছের ফল , নদীর পানি আমরা খাই, তা ঘণ্টা তিনেক পর আমার মধ্যে মিশে আমি হয়ে যাই। তাই পানি ,মাটি,বাতাসের বিশুদ্ধতা প্রকৃতির স্বার্থে নয়, বরং আমাদের নিজের স্বার্থেই দরকার।  Mother Earth আমাদের নিজের মায়ের চেয়েও অল্পে খুশি, তিনি বেশি কিছু চান না। আমরাই বরং ভুলে যাই –There is No planet B!!