সাতসতেরো

মেহেদী কি জানে আজ মা দিবস?

আজ সড়কে একটি প্রাণও ঝড়েনি— এমন একটি খবর একদিন শিরোনাম হবে, আমাদের দেশে এও কি সম্ভব? সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ক্রল করলে একটি ছবি বার বার চোখের সামনে ভেসে উঠছে। একবার এড়িয়ে গেলেও আরেকবার এড়ানো যাচ্ছে না। ময়মনসিংহের ভালুকায় সড়ক দুর্ঘটনায় মা নিহত হয়েছেন। কিন্তু বেঁচে গেছে দেড় বছর বয়সি শিশু মেহেদী হাসান।

ওর মা হয়তো ওকে আরও অনেক নামে ডাকতেন। সব মা তাই করে। আদরমাখা একটা নাম থাকে তার সন্তানের। কপালে চুমু এঁকে দিতে দিতে সেই নাম ধরে ডাকেন মা। তাহলে মেহেদীর আর কী নাম ছিল? আমরা জানি না সে নাম। কোনোদিন জানবও না। মেহেদীও আর সেই মধুর ডাক শুনতে পাবে না। ভুলে যাবে মায়ের মুখ। হয়তো ওর মনের কোণে একগুচ্ছ শুকনো ফুলের মতো জমা থাকবে মায়ের স্পর্শ, আদর আর ভালোবাসা।

মেহেদী বৃষ্টিতে ভিজবে, তাকে মা বলবেন না ‘বাবা ঘরে আয়’। মেহেদীর শরীরজুড়ে অদৃশ্যে লেপ্টে থাকবে মায়ের স্পর্শ। পথে পথে চলতে চলতে মেহেদী যখন দেখবে ওর সহপাঠী, বন্ধু মায়ের কোলে ঝাঁপিয়ে পড়ছে তখন ওর মনে হবে মা তো এমনই। কিন্তু সে আর মাকে পাবে না। বৃষ্টি এলে মাটি ভিজে সোদা গন্ধ বিলাবে, মেহেদী তার মায়ের শরীরের ঘ্রাণ পাবে না কোনোদিন! ওর মায়ের গহনাগুলো অন্য কারও নাকে, কানে শোভা বাড়াবে। কিন্তু মেহেদীর জন্য অপেক্ষা করছে মা-হীন ম্লান, ধূসর এক শৈশব।

মা-হীন শৈশবে বাড়ির আমগাছটায় মুকুল আসবে, পূর্ণিমার আলো ছড়িয়ে পড়বে; মেহেদীর দুই চোখে গাঢ় গভীর ঘুম আসবে; এভাবে ঘুমাতে দেখে ওর মা আর আনন্দে হু হু করে কাঁদবে না। কিন্তু মেহেদীকে বাঁচতে হবে, হাসতে হবে, কাঁদতে হবে। মেহেদী যেন সব মানুষের ভালোবাসা পায়। ও যেন অনেক বড় মানুষ হয়; এটুকুই প্রার্থনা।

সড়কে মৃত্যুর খবর আমাদের মন ও মগজ স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করতে করতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। মেহেদী বড় হবে, মেহেদীর আজ যে অপূরণীয় ক্ষতি হলো তার দায় কেউ নেবে না। আমরা এই ছবি ভুলে যাব। আবার নতুন কোনো মেহেদী আমাদের সামনে চলে আসবে। এমন অসহায়ত্ব ভুলিয়ে দেবে আমরা মানুষ, নিরাপদ মৃত্যুর অধিকার আমাদের থাকা উচিত।