সাতসতেরো

বিলুপ্তপ্রায় বানিয়াতি দোকানে শৈশবের ঘ্রাণ

ছবিতে যে দোকান দেখতে পাচ্ছেন এসব দোকান এখন খুব একটা দেখা যায় না। এসব দোকানে ঢুকলে আলাদা একটা ঘ্রাণ পাওয়া যায়। সেই ঘ্রাণ শৈশরের কথা মনে করিয়ে দেয়। একদিন জামালপুর শহরের ভেতর দিয়ে যেতে যেতে মেইন রোডের পাশেই পাশাপাশি এই দুইটি দোকান দেখে ভাবলাম দোকানে একটু ঢু মেরে যাই। ছোটবেলায় এমন অনেক দোকান দেখেছি। এই দোকানগুলোতে বিভিন্নরকম আয়ুর্বেদিক/কবিরাজি ওষুধ তৈরির প্রয়োজনীয় উপাদানগুলো পাওয়া যেত। তারপরে গৃহস্থলির কাজে নিত্য ব্যবহার্য জিনিসপত্রও মিলতো, যেমন হাতে বোনা দড়ি।  এখন অটোমেটিক মেশিনে তৈরি হয় দড়ি। তা ছাড়া এখন আর আগের মতো কবিরাজ নেই, তাই ওষুধ তৈরির উপাদানগুলোও খুব একটা বেচা-বিক্রি হয় না। পরিস্থিতি যা দাঁড়িয়েছে কিছুদিন পরে হয়তো এই ধরনের দোকানই আর দেখা যাবে না! 

চলতে চলতে যখন এমন দোকানের দেখা পেয়েই গেলাম, তাই কাছ থেকে দেখার সুযোগ হারাতে চাইনি। প্রথমে ঢুকলাম অনিল চন্দ্র দাস-এর দোকানে। দোকানদার হাসিমুখে অভ্যর্থনা জানালেন। কথা বলে জানতে পারলাম, বেচা কেনা একেবারে কমে এসেছে।  তার দোকানের ভেতরে গুছিয়ে রাখা একটা একটি বিছানা রাখা। এর কারণ জানতে চাইলে তিনি জানালেন, বিয়ে করেননি, দোকানই তার ঘর, বাড়ি। ২৪ ঘণ্টা তিনি দোকানেই থাকেন। বয়সের ভারে নুইয়ে পড়া মানুষটি একে একে দোকানের বয়ামগুলো দেখিয়ে জানাতে লাগলেন কোন বয়ামে কি আছে। যষ্ঠি মধু থেকে কালিজিরা, ত্রিফলা থেকে আমলকি গুড়া সব পাওয়া যায় এখানে। অনিল চন্দ্র দাসের মতোই সেগুলো হারানো দিনের সৌন্দর্য ভেতরে লুকিয়ে ধূসর হয়ে পড়ে আছে।

এরপরে গেলাম শান্তি রঞ্জন দাস এন্ড সন্স-এ। শান্তি রঞ্জন দাস বংশ পরম্পরায় এই ব্যবসা টিকিয়ে রেখেছেন। তাদের পরিবারের ব্যবসায়ের বয়স প্রায় আড়াইশো বছরের। শান্তি রঞ্জন চাপা অভিমানের স্বরে বললেন, শহরের রাস্তাটা বাড়ানো হচ্ছে দোকানগুলো ভাঙা পড়তে পারে। এ কথা হয়েছিল ২০২৩ সালের নভেম্বরে, তারপরতো বেশ কিছুদিন চলে গেলো।

এই নিয়ে যখন লিখতে বসলাম তখন মনে হলো একবার খোঁজ নেই কেমন আছেন অনিল চন্দ্র দাস। খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম গতকালই অনিল চন্দ্র দাস মারা গেছেন। তার রেখে যাওয়া বানিয়াতি দোকানটিও হয়তো একদিন তারই মতো চিরতরে হারিয়ে যাবে! এভাবে এক একটি দোকান হারাতে থাকলে বাংলার ঐতিহ্য থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাবে বানিয়াতি ব্যবসা।