পৃথিবীতে অনেক জনপ্রিয় বই রয়েছে। কিন্তু প্রকাশের আগেই তুমুল জনপ্রিয়তা পাওয়া বই একটিই! আর সেটি হচ্ছে ফ্লাইং ফিশিং নামের একটি বইটি। যেটি খসড়া তৈররি আগেই লন্ডনে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলো। এর পেছনে রয়েছে ‘ইয়েলো পেজেস’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা।
১৯৯৪ সালে ওয়াশিংটনে যাত্রা শুরু করে ই-কমার্স ওয়েবসাইট আমাজন। এসব ওয়েবসাইট আসার আগে লোকদের কাছে জনপ্রিয় ছিলো পত্রিকা। পত্রিকা বা টিভি ছাড়া অন্য কোন মাধ্যম ছিলো না বিজ্ঞাপনের জন্য। লন্ডনে একই সময়ে যাত্রা শুরু করে ‘ইয়েলো পেজেস’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। যারা পত্রিকার পাতা জুড়ে শুধু বিজ্ঞাপন ছাপতো প্রতিষ্ঠানের নাম ও যোগাযোগের নম্বরসহ। যেন কোন গ্রাহক চাইলেই বিজ্ঞাপনের জন্য দেওয়া জিনিস সহজেই ক্রয় করতে পারে।
১৯৮৩ সালে ইয়োলে পেজেস যাত্রা শুরু করার পর নিজেদের বিজ্ঞাপন হিসেবেই একটি ভিডিও প্রচার করতে থাকে ব্রিটেনের বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে। বিজ্ঞাপনে দেখা যায় একজন বয়স্ক ব্যক্তি একটি বই খুঁজছেন বই মার্কেটে। তবে কোন দোকানেই পাচ্ছেন না কাঙ্খিত সেই বই। বইয়ের নাম ফ্লাই ফিশিং : মেমোরিস অফ অ্যাঙ্গলিং ডেস; লেখক জে. আর. হার্টলি। সব দোকান খোঁজা শেষে বাড়ি ফিরতেই বৃদ্ধের দিকে হলুদ রঙের একটি পত্রিকা এগিয়ে দিলেন তার সন্তান। সেই পত্রিকায় লেখা ইয়েলো পেজেস। সেখানে রয়েছে ফ্লাই ফিশিং বইয়ের বিজ্ঞাপন। নিচে রয়েছে যোগাযোগের নাম্বর। ফোন দিয়ে বৃদ্ধ বললেন তার ঠিকানা। জিজ্ঞেস করা হলো কার নামে যাবে বইটি? বলা হলো তার নাম জে. আর. হার্টলি। বিজ্ঞাপনটিকে অভিনয় করেছিলেন করেছিলেন অভিনেতা নরম্যান লুমসডেন।
এই বিজ্ঞাপন প্রচারের পর কয়েকগুণ বিক্রি বেড়ে যায় ইয়োলো পেজেসের। তবে ইয়োলো পেজেসের চেয়ে গ্রাহকদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে ফ্লাই ফিশিং : মেমোরিস অফ অ্যাঙ্গলিং ডেস’ বইটি। বইটি বাসায় অর্ডার করতে অসংখ্য মানুষ যোগাযোগ করতে থাকে ইয়োলো পেজেসে। জানতে চায় প্রকাশক ও লেখকের ঠিকানা। কিন্তু কি করে সেই বই গ্রাহককে দেবে ইয়োলে পেজেস? তখনোতো কোন অস্তিত্বই নেই এই বইয়ের। শুধুমাত্র বিজ্ঞাপনের জন্য মনগড়া একটি বইয়ের বিজ্ঞাপন দিয়ে রীতিমতো বিপাকেই পড়ে যায় ইয়োলো পেজেস কর্তৃপক্ষ।
এরপর ইয়োলে পেজেস কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে নেওয়া হয় বই ছাপানোর সিদ্ধান্ত। ফিশিং বিশেষজ্ঞ মাইকেল রাসেল ছদ্মনামে লিখে ফেলেন ফ্লাই ফিশিং : মেমোরিস অফ অ্যাঙ্গলিং ডেস নামের বই। বইটি প্রকাশ প্রায় ১৯৯১ সালে। যে বই বিক্রির জন্য দরকার ছিলো না কোন বিজ্ঞাপন কারণ গত ৭-৮ বছরে এই বইয়ের আলাদা একটি ফ্যানব্যাজ গড়ে উঠেছিলো। এরপরও বইটির অধিক প্রচার করতে প্রকাশক স্ট্যানলি পল অভিনেতা নরম্যান লুমসডেনকে দিয়ে করেছিলেন প্রচার। প্রকাশক সাহিত্যের আড্ডায় নিজেকে জে. আর. হার্টলি বলে দাবি করতেন এবং ভক্তদের দিতেন অটোগ্রাফ।
প্রকাশ হওয়ার পর কয়েকমাসের মধ্যেই বিক্রি হয় ১ লক্ষ ৩০ হাজার কপি। অর্জন করে নেয় বেস্ট সেলার তকমা। এর পরিমাণ বিক্রি হচ্ছিলো যে প্রকাশককে আটবার করতে হয় এর পুনর্মুদ্রণ পাঠক সমালোচক সবাই এই বইয়ের রেটিং দিয়েছিলো ৮ এর উপরে। এখনো এই বইয়ের সর্বশেষ রেটিং ৯। তবে এমন কারচুপি করে বই বিক্রি করায় অনেকেই নিন্দা করেছেন প্রকাশক ও ইয়োলো পেজেসের।