সাতসতেরো

কেমন আছে রজনীকান্ত সেনের বাস্তুভিটা

কবি, গীতিকার ও বিপ্লবী নেতা রজনীকান্ত সেন। পঞ্চকবিদের একজন তিনি। কান্তকবি নামেও পরিচিত। দেশের প্রতি ভালোবাসা ছিল অগাধ। দেশপ্রেমে মগ্ন ছিলেন এই কবি। নিজেস্বতাকে ভালোবাসার অনুপ্রেরণা পাওয়া যায় তার লেখায়। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের পর রজনীকান্ত সেনের কবিতা হয়ে উঠেছিল বিপ্লবীদের স্লোগান। ১৩ সেপ্টেম্বর, ১৯১০ সালে মাত্র ৪৫ বছর বয়সে ক্ষণজন্মা এই কবির মৃত্যু হয়। কবির মৃত্যুর পর তার বংশধরেরা পূর্ববঙ্গেই দীর্ঘদিন বসবাস করেছেন। এরপর চলে গেছেন ওপার বাংলায়। রজনীকান্তের বাড়ি, ঘর, উঠান, পুকুর সবই এখন অন্য মানুষের ভোগ দখলে। 

মনে আছে, রজনীকান্ত লিখেছিলেন ‘বাবুই পাখিরে ডাকি বলিছে চড়াই’- কবিতাটি? এই কবিতা আমাদের শৈশবের পাঠ পরিক্রমা সমৃদ্ধ করেছে। পাবনায় গিয়ে তার বাড়ির খোঁজে গেলাম। 

বেলকুচি শহরের আগেই হাতের ডানদিকে প্রায় দুই আড়াই কিলোমিটার ভেতরে গেলেই সেন ভাঙ্গাবাড়ির দেখা পাওয়া যায়। বেলকুচি সদর রাস্তা সেখান থেকে কবি রজনীকান্ত সেন সড়ক দিয়ে যেতে হয়। এই পথ ধরে যেতে যেতে মনে মনে গাইতে থাকলাম রজনীকান্তের লেখা গান ‘(আমি) অকৃতী অধম বলেও তো, কিছু কম করে মোরে দাওনি!’।

গন্তব্যে পৌঁছে খুঁজে পেলাম রজনীকান্ত সেনের বাড়ি। দেখি শেওলাপড়া, ভাঙা প্রাচীর পড়ে রয়েছে। আর আছে একটি পুকুর। বাকি সব জায়গায় বেদখল হয়ে গেছে। যে যেভাবে পারছে সে সেভাবে সেন পরিবারের জায়গা ভোগ-দখল করছে। ওই সব জায়গাতে যারা বসবাস করছেন তারা অকপটে স্বীকার করেন— সেনরা জায়গাজমি বিক্রি করে ভারতে চলে যাননি।

এই সব জায়গা এখন যারা ভোগ দখল করছেন তারা কেউ ক্রয়সূত্রে এই জমি পাননি বরং যে যেভাবে পারছেন দখল করে নিয়েছেন। সেনদের জায়গাতেই প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে স্থানীয় বাজার এবং ইউনিয়ন পরিষদের কার্যালয়। আর প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে কবি রাজনীকান্ত স্মৃতি ও সার্বজনীন পূজা মন্দির।

উঠানের মতো একটু খোলা জায়গা পড়ে রয়েছে। সেখানে দেখলাম একজন বসে কুলা বানাচ্ছেন। কেউ ধান শুকাচ্ছেন। কেউ কেউ আয়েশী সময় কাটাচ্ছেন।

ফিরে আসার সময় মনে হলো রোদ, বৃষ্টি ঝড়ে এই বাড়ির ধ্বংসাবশেষ একেবারে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। কেউ দেখার নেই, এতে যেন কারোরই কিছুই করার নেই।