আজ নাগাসাকি দিবস। ৭৯ বছর আগে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে ১৯৪৫ সালের ৯ আগস্ট জাপানের নাগাসাকি শহরে পারমাণবিক বোমা ফেলে মিত্র বাহিনী। শহরের ক্যাথলিক গির্জার ঠিক ওপরে ফেলা এ বোমায় সেদিনই ৭০ হাজারের বেশি নাগরিক প্রাণ হারায় এবং দীর্ঘমেয়াদি সময়ে নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছিল আরও অনেক বেশি।
এর তিন দিন আগে ৬ আগস্ট (১৯৪৫) জাপানের হিরোশিমা শহরেও বোমা নিক্ষেপ করেছিল তারা। বিধ্বস্ত হয়েছিল ওই শহরও। হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে যে পারমাণবিক বিস্ফোরণ হয়েছিল, তা আজও সর্বকালের ইতিহাসে সবথেকে কলঙ্কিত একটি ঘটনা হয়ে রয়েছে।
এই দুই শহরে প্রাণে বেঁচে যাওয়া অনেককেই দীর্ঘকাল ধরে সইতে হয়েছে নানা রকম শারীরিক ও সামাজিক প্রতিকূলতা। মাত্র তিন দিনের ব্যবধানে চালেনো এই আণবিক বোমা হামলার ভয়াবহতা এবং সেই ভয়াবহ পরিণতি এড়িয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে বিশ্বজুড়ে জনমত সৃষ্টি ও প্রচারে অবশ্য নাগাসাকির চেয়ে হিরোশিমার নামই অনেক বেশি উচ্চারিত হতে শোনা যায়। আণবিক বোমা যে মর্মান্তিক পরিণতি নাগরিক জীবনে নিয়ে এসেছিল, সেসব কাহিনির বর্ণনায়ও হিরোশিমা অনেক বেশি উপস্থিত। নাগাসাকির তিন দিন আগে বিশ্বের প্রথম শহর হিসেবে হিরোশিমার বোমা হামলার পরিণতি সহ্য করাই এর প্রধান কারণ। তাই বলে নাগাসাকির ক্ষয়ক্ষতি এবং ধ্বংসের বিস্তৃতি কিন্তু হিরোশিমার চেয়ে কোনো অংশেই কম ছিল না।
নাগাসাকিতে ব্যতিক্রমী একটি উদ্যোগ হচ্ছে, শহরের কেন্দ্রস্থলে গড়ে ওঠা শান্তি পার্ক। পার্কের পরিচিত প্রতীক হলো, ১৯৫৫ সালে এ হামলার দশম বার্ষিকীতে সেখানে স্থাপন করা ১০ মিটার উঁচু এক ভাস্কর্য। এক হাত প্রসারিত করে এবং অন্য হাত আকাশের দিকে সোজা উঁচু করে ধরে রেখে যে ভাস্কর্য একই সঙ্গে পরমাণু অস্ত্রের হুমকি, শান্তি ও স্থিতিশীলতার প্রয়োজনীয়তার কথা বলছে। ভাস্কর্যটির নকশা করেছেন সেইবো কিতামুরা। জাপান ও বিশ্বের অন্যান্য দেশের মানুষের কাছ থেকে পাওয়া অর্থসহায়তায় এটি তৈরি করা হয়।
এই ভাস্কর্যকে ঘিরে গড়ে ওঠা উদ্যানটি হলো নাগাসাকির শান্তি উদ্যান। উদ্যানটির আন্তর্জাতিক আকার দেওয়ার জন্য ১৯৭৮ সালে সেখানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রতি শান্তি ভাস্কর্য স্থাপনের আহ্বান জানিয়েছিল নাগাসাকি নগর কর্তৃপক্ষ। সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে একই বছর প্রথম সেখানে শান্তির প্রতীক ভাস্কর্য স্থাপন করে পতুর্গালের পোর্তো নগরী। পোর্তোর সঙ্গে নাগাসাকির রয়েছে সিস্টার সিটি বা সহোদরা শহর চুক্তি। পতুর্গিজরাই ছিল প্রথম বিদেশি, নাগাসাকিতে যারা প্রথম গড়ে তুলেছিল বাণিজ্য ঘাঁটি। যদিও অল্প কিছুকাল পরই সেখান থেকে তাদের বিতাড়িত করা হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে আরও প্রায় ১৫টি দেশ ও শহর সেখানে ভাস্কর্য স্থাপন করায় নাগাসাকির শান্তি উদ্যান পেয়েছে ভিন্ন এক আন্তর্জাতিক চেহারা।