‘এসো শারদ-প্রাতের পথিক/ এসো শিউলি বিছানো পথে...।’ এভাবে ঋতু শরৎকে কামনা করেছেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম।
শ্রাবণ শেষে ভাদ্রের প্রথম দিন আজ। বাংলা ঋতু বৈচিত্রে ভাদ্র-আশ্বিন এ দুই মাস শরৎকাল। শরৎ শুভ্রতার ঋতু। শরৎ প্রকৃতিকে যে মোহনীয় রূপ-রসে সাজায়। নীল আকাশের সাদা মেঘ নিয়ে আসে কোমল আনন্দের বারতা। শরৎ মানেই নীল আকাশ, পেজা তুলোর মতো মেঘের ওড়াউড়ি। পথের ধারে, নদীর তীরে কিংবা দিগন্ত বিস্তৃত মাঠে কাশবনের সনে আকাশের মিতালি।
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন- ‘আজ ধানের ক্ষেতে রৌদ্রছায়ায় লুকোচুরি খেলা রে ভাই, লুকোচুরি খেলা/ নীল আকাশে কে ভাসালে সাদা মেঘের ভেলা রে ভাই লুকোচুরি খেলা।’
শরতের প্রধান প্রতীক কাশফুল। অবশ্য শিউলি, শেফালি, হাসনাহেনা, কামিনী এসব এই শরতেরই ফুল। শরতে এসব ফুলের গন্ধে পরিবেশে সৃষ্টি হয় এক অন্যরকম সুশোভিত আবহ। যা মনকেও প্রফুল্ল করে তোলে।
শরৎ এলে মনতো একটু ব্যাকুল হবেই। রাজধানীর কাশফুলপ্রেমীদের এই শরতে দেখা যাবে আশেপাশে নদী তীরে কিংবা কোনো দিগন্ত জোড়া মাঠে কাশফুলে মগ্ন হতে। প্রকৃতিতে চঞ্চল হতে, আনন্দ কুড়াতে। আর এদের জন্যই মাঠে মাঠে শোভা বাড়াতে ব্যাকুল অপেক্ষায় সবুজ কাশবন। সময়ের সঙ্গে নদীর কূল ঘেঁষে ফুটতে শুরু করবে গুচ্ছ গুচ্ছ কাশফুল। দোল খাবে মৃদুমন্দ বাতাসে। নিজের অজান্তেই মানুষের মনে তখন বয়ে যাবে ভিন্ন রকম আনন্দের ঝিলিক।
কেউ কেউ মনে করেন- শরৎ মানেই উদাসী মন। শরৎ মানেই দিগন্ত বিস্তৃত অবারিত শান্তির মুহূর্ত। তাই হয়তো বাংলা সাহিত্যের পরতে পরতে শরৎ-বন্দনা দেখতে পাওয়া যায়।
শরৎ-বন্দনায় কবি কালীদাস লিখেছেন, ‘প্রিয়তম আমার, ঐ চেয়ে দেখ, নববধূর ন্যায় সুসজ্জিত শরৎকাল সমাগত।’
পল্লীকবি জসীম উদ্দীন লিখেছেন- ‘গুনিতে গুনিতে শ্রাবণ কাটিল, আসিল ভাদ্র মাস, /বিরহী নারীর নয়নের জলে ভিজিল বুকের বাস।/ আজকে আসিবে কালকে আসিবে, হায় নিদারুণ আশা,/ ভোরের পাখির মতোন শুধুই ভোরে ছেয়ে যায় বাসা।’