সাতসতেরো

কুখ্যাত মোসাদের সফলতা যেভাবে শুরু হয়

১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পরের বছর ‘মোসাদ’-এর জন্ম। শুরুতে এই নাম  ছিল না। ইসরায়েলের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ডেভিড বেনগুরিয়ান নিজস্ব তত্ত্বাবধায়নে তৈরি করেন ‘সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স ফর কোওর্ডিনেশন। পরে ১৯৫১ সালে এর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘Central Institute for Intelligence and Special Oparations সংক্ষেপে মোসাদ। সংস্থাটির গুরুদায়িত্ব গ্রহণ করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী। ইসরায়েল সরকার প্রতিবছর মোসাদের জন্য বরাদ্দ দেয় ২. ৭৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি। আনুমানিক সাত হাজারের বেশি মোসাদ সদস্য পৃথিবীতে ছড়িয়ে রয়েছে। 

শুরুতেই মোসাদ আরব দেশগুলোতে গুপ্তচরবৃত্তির কাজ শুরু করে। পরবর্তীতে আরব-ইসরায়ের যুদ্ধে আরবদের পরাজয়ের পেছনে মোসাদের ছিল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। শুধু দেশ নয় ইসরায়েলের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে এমন ব্যক্তি, সংগঠন বা সংস্থার জন্য মোসাদ আবির্ভূত হয় মৃত্যুদূত হয়ে! টার্গেট পিপলকে হত্যা করে মুহূর্তে গায়েব হয়ে যায়। মোট আটটি বিভাগের সমন্বয়ে কাজ পরিচালনা করে মোসাদ। এগুলো হচ্ছে, তথ্য সংগ্রহ বিভাগ, রাজনৈতিক যোগাযোগ বিভাগ, স্পেশাল অপারেশন, সাইকোলজিক্যাল, গবেষণা ও তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ। 

মোসাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজটি করে তথ্যসংগ্রহ বিভাগ। এই কাজের জন্য গুপ্তচরদের দেওয়া হয় বিশেষ প্রশিক্ষণ। ফলে যেকোন কাজে এবং যেকোন পরিবেশে সহজে মানিয়ে নিতে পারে তারা। যে দেশগুলো ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেয়নি সে সব দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক যোগাযোগ রক্ষাকে অগ্রাধিকার দেয় মোসাদের রাজনৈতিক যোগযোগ বিভাগ। সংস্থাটির সাইকোলজিক্যাল বিভাগের কাজ হচ্ছে প্রতিপক্ষের নামে প্রোপাগান্ডা ছড়িয়ে দেওয়া। এ ছাড়া প্রতিপক্ষ দেশে রাজনৈতিক সমস্যা সৃষ্টি করে মোসাদ। সংস্থাটি ইসরায়েলের পক্ষে জনমত তৈরিতে নানা কৌশল অবলম্বণ ও প্রয়োগ করে দেশে-দেশে। মোসাদের আরেকটি গুরুত্বপূণ কাজ হচ্ছে গুপ্তহত্যা।  এই টিমের প্রধান কাজ ফিলিস্তিনের মুক্তি আন্দোলনের নেতারা। এর পাশাপাশি আরব দেশগুলোতেও গুপ্তহত্যা মিশন পরিচালনা করে মোসাদ। বিশেষ করে ইরানের পারমানবিক প্রকল্পে কাজ করা বিজ্ঞানীদের সরিয়ে দিতে চায় মোসাদ। তার কারণ, ইরান পারমানবিক শক্তিতে এগিয়ে গেলে দেশটি ইসরায়েলের অস্তিত্বের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। মোসাদ ইউরোপ, আমেরিকা, দক্ষিণ আমেরিকা এবং এশিয়াতেও স্বক্রিয়ভাবে কাজ করে। 

মোসাদের উল্লেখযোগ্য প্রধান সাফল্য আসে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর। ১৯৬০ সালে হিটলারের অন্যতম সহযোগী আইখম্যানকে আর্জেন্টিনা সরকারের চোখ ফাঁকি দিয়ে ইসরায়েলে নিয়ে আসার পর মোসাদ অর্জন করে ইসরায়েলের প্রশাসন ও জনপ্রশাসনের অগাধ আস্থা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির পরাজয়ের পর আইখম্যান পালিয়ে গিয়েছিলেন আর্জেন্টিনা। আর সেখান থেকেই তিনি মোসাদের হাতে ধরা পড়েন। আর্জেন্টিনার স্বাধীনতার ১৫০ বছর উপলক্ষ্যে ইসরায়েল থেকে একটি প্রতিনিধি দল আর্জেন্টিনায পৌঁছায় তাদের নিজস্ব বিমানে। পরে আইখম্যান এবং মোসাদের সদস্যদের বিমানের ক্রুদের পোশাক পরিয়ে আর্জেন্টিনা থেকে ইসরায়েলে নিয়ে আসা হয়। ইসরায়েলের আদালতে বিচারের পর আইখম্যানকে দেওয়া হয় মৃত্যুদণ্ড। মোসাদের এই প্রথম সাফল্য ‘অপারেশন ফিনালে’ হিসেবে পরিচিত। এই সাফল্যে হলোকাস্টের সময় স্বজন হারানো ইহুদিদের হৃদয়ে জায়গা করে নেয় মোসাদ। এই সংস্থাটি ইসারেয়েলের অদৃশ্য রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে।