কলকাতার রাস্তায় আর দেখা যাবে না ১৫০ বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী যানবাহন ট্রাম। উঠে যাবে ট্রাম লাইন। ‘চল রাস্তায় সাজি ট্রাম লাইন’ এ কেবল গানের আবেদন হিসেবে থেকে যাবার সময় এসে গেছে। আধুনিক ব্যস্ত জীবনে প্রয়োজন ফুরিয়েছে ধীর গতির ট্রামের। এই যানবাহন ধীরে চলে কিন্তু রাস্তায় কোনো দূষণ তৈরি করে না। ট্রাম দেশ বিদেশে কলকাতাকে দিয়েছে বিশেষ পরিচিতি। কলকাতার ইতিহাসে ট্রাম এক অনন্য বৈশিষ্ট্য। প্রশংসাও কম পায়নি এই যান। তবুও বিদায় ঘণ্টা বেজে গেছে, শহরের রাস্তা তাকে ছেড়ে যেতে হবে। ঠাঁই নিতে হবে গল্পে, গানে, স্মৃতিতে!
ট্রামকে বিদায় দিচ্ছে কলকাতা ট্রামের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে, যানটি আস্তে চলে। এর জন্য দুর্ঘটনা ঘটে। জনবহুল কলকাতায় এই যানটি যানজটের কারণ হয়ে উঠেছে। সড়কে ট্রামলাইন থাকায় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ কঠিন হয়ে পড়েছে।– এই সব কারণে এবার বন্ধ করা হবে ট্রাম।
স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোর তথ্য, কলকাতা শহরে ২৭-২৮টি রুটে ট্রাম চলতো। ১৫ বছর আগেও ১২ রুটে সচল ছিল ট্রাম। শেষমেষ কলকাতায় টিকে ছিল। মাত্র ৩টি রুটে চলতো ট্রাম। টিংটিং ঘণ্টা বাজিয়ে চলতো এই যান। কাঠের সিটে বসে গল্প জমাতো কলকাতাবাসী এবং শহরে বেড়াতে আসা পর্যটকরা। নতুন কেউ শহরে বেড়াতে এলে ট্রামে চড়ে দেখতেন তিলোত্তমার সৌন্দর্য। কলকাতাবাসী চায়তো ট্রাম ‘হেরিটেজ’ তকমা পাক। কিন্তু পায়নি।
১৮৮৩ সালের দিকে ভারতের ১৫টি শহরে চলতো ট্রাম। শহরগুলো ক্রমে ব্যস্ত হয়ে পড়ে আর ট্রামের প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে আসে। যখন ট্রাম চলা শুরু হয় সেই সময়ে গরুর গাড়ি, টানা রিকশা দেখা যেত কলকাতার রাস্তায়। এখন অত্যাধুনিক ক্যাব মেট্রো চালু হয়ে গেছে। যানবাহনের সংখ্যা বাড়লেও রাস্তার সংখ্যা খুব একটা বাড়েনি। এই যখন অবস্থা তখন রাস্তা থেকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে ধীর গতির এই যানবাহন।
ট্রামকে বলা হয় ‘কল্লোলিনী তিলোত্তমার’ নস্ট্যালজিয়া। কলকাতার এই ঐতিহ্যের একটু প্রমাণ রাখার জন্য ধর্মতলা থেকে ময়দান পর্যন্ত ট্রাম চালাতে চায়ছে রাজ্য পরিবহন দপ্তর।অর্থাৎ সাড়ে ৩ কিলোমিটার রাস্তায় ট্রাম চলবে। অল্প কিছুদিন আগে টালিগঞ্জ থেকে বালিগঞ্জ রুটে ট্রাম চলাচল বন্ধ হয়। সর্বশেষ টিকে ছিল ধর্মতলা থেকে শ্যামবাজার এবং ধর্মতলা থেকে গড়িয়া হাট পর্যন্ত। এই পথে ট্রাম চলাচল বন্ধ হলে থেমে যাবে কলকাতার পরিবহন ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায়।