ভবিষ্যৎ নিয়ে ফিনল্যান্ডের মানুষেরা খুব একটা চিন্তিত নন। কারণ তাদের সুখী রাখতে তৎপর দেশটির সরকার। বিশ্বের অন্যতম পরিবেশ বান্ধব দেশের বাসিন্দাও তারা। ইউরোপের উত্তর প্রান্ত ফিনল্যান্ডের মানুষ নিজেদের জীবনযাত্রা নিয়ে অত্যন্ত সন্তুষ্ট। তারাই নাকি বিশ্বের সবচেয়ে সুখী মানুষ।
ফিনল্যান্ডের মানুষের প্রকৃতির প্রতি অগাধ শ্রদ্ধা রয়েছে। তারা প্রকৃতির কাছাকাছি থাকতে ভালোবাসে। এবং তারা অন্তর থেকে সুখী হওয়ার চেষ্টা করে। স্থানীয়দের মনোভাবই থাকে সুখী হওয়ার।
সালা হোনকাভুয়োরি একজন কন্টেন্ট ম্যানেজার। তিনি বলেন, ‘অন্তরের ইচ্ছাশক্তি, প্রতিরোধের ক্ষমতা, ও প্রকৃতির প্রতি অগাধ শ্রদ্ধার কারণে আমরা সুখী। সেই সঙ্গে সুস্বাদু খাদ্যও রয়েছে।’
সালা হোনকায়েভুয়ো সপরিবারে লেকের ধারে বসে খাওয়া দাওয়া করেন। আকান ইয়ারবি হ্রদ ফিনল্যান্ডের একেবারে উত্তরে ল্যাবলান্ড অঞ্চলে অবস্থিত।
সালা হোনকাভুয়োরি বলেন, `এইটি লা আমার খুবই পছন্দের। এই নিসর্গ আমার আত্মা ছুঁয়ে যায়। চূড়ার ওপর দাঁড়ালে বিস্তীর্ণ প্রান্তর দেখতে পাই। নিজেকে অতি ক্ষুদ্র ও তুচ্ছ মনে হয়। তখন দৈনন্দিন জীবনের সব সমস্যা দুশ্চিন্তাও তুচ্ছ মনে হয়।'
সে কারণে সালার পরিবারের একটি বাসনা রয়েছে তারা ল্যাবল্যান্ডে নতুন বাসা করতে চায়। ৩৭ বছর বয়সী এই কনটেন্ট ম্যানেজার আসলে ফিনল্যান্ডের দক্ষিণের মানুষ। স্বামী ও দুই সন্তানও ল্যাবল্যান্ডে বসবাস করতে চায়। এই দম্পতির ইচ্ছা দুই সন্তান যেন শহরে পরিবেশ থেকে দূরে প্রকৃতির মাঝেই বেশি সময় কাটাতে পারে। সে কারণে এই পরিবার পুরো অঞ্চল ঘুরে যতটা সম্ভব নির্জন জায়গার খোঁজ করছেন। রাজধানী হেলসিংকি তাদের কাছে মোটেই আকর্ষণীয় নয়। বড় কোলাহল প্রকৃতির বড়ই অভাব। ইউরোপের অন্যতম সবুজ ও আরামদায়ক রাজধানী হওয়ার পরে তারা রাজধানীতে থাকতে চান না।
ফিনল্যান্ডের প্রকৃতির পাশাপাশি সে দেশের সরকারও নাগরিকদের সুখী রাখে।
আলটো বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্রাংক মার্টেলা বলেন, ‘ফিনল্যান্ডের সংবাদ মাধ্যমে ও মত প্রকাশের অধিকার রয়েছে। অবাধ নির্বাচন হয়। দুর্নীতির মাত্রা অত্যন্ত কম। সেই সঙ্গে রাষ্ট্রের সামাজিক সহায়তার নানা ব্যবস্থা রয়েছে। যেমন শিশু, বেকার ও অবসরপ্রাপ্তদের জন্যে ভাতার ব্যবস্থা রয়েছে। এসবের ফলে মানুষের মনে একটা অনুভূতি আসে যে, রাষ্ট্র তাদের দেখাশোনা করছে। '
রাশিয়ার সঙ্গে ফিনল্যান্ডের ১০০০ কিলোমিটারের বেশি দীর্ঘ স্থলসীমান্ত রয়েছে। ইউক্রেনের ওপর হামলা চালনা এমন খামখেয়ালি প্রতিবেশীর পাশে বাস করা অস্বস্তির কারণ বৈকি।
ফিনল্যান্ডের অনেক মানুষের মতো সালা হোনকাভুয়োরির পরিবারও চিন্তিত। তিনি বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতি অবশ্যই আমাকে ভাবাচ্ছে। কিন্তু সেই কথা না ভাবার চেষ্টা করছে এবং খুব দ্রুত পরিস্থিতির উন্নতির আশা করছি। আমি মোটেই বিচলিত হতে চাই না। সেটা করলে মন খারাপ হয়ে যাবে।’
এমন পরিস্থিতি থাকা সত্ত্বেও সালা হোনকাভুয়োরি পরিবার বেশ শান্ত রয়েছে। আপাতত খেলাধুলা নিয়ে তারা ব্যস্ত। মা হিসেবে সালাস নৌ বোর্ডের মাধ্যমে নিজের সন্তানদের মধ্যে ল্যাবল্যান্ডের প্রতি ভালোবাসা আরো জাগিয়ে তুলেছেন।
অক্টোবর থেকে মে মাস পর্যন্ত অর্থাৎ প্রায় ৬ মাস কির মৌসুম চলে। কিন্তু ফিনল্যান্ডের সাওনার মৌসুম বলে কিছু নেই। উইন্টার স্পোর্টস এর পাশাপাশি সাওনায় অবসর সময় কাটানোর জন্য সাওনা মানুষের সেরা আকর্ষণ।
সালা বলেন, ‘সুখী করার জন্য সাওনার বিশাল ভূমিকা রয়েছে। আমরা প্রায় সাওনায় যাই। কখনো বড়দিন উৎসব বা মিড সামার উৎসবের মতো উপলক্ষে যাই। সকাল, দুপুর, সন্ধ্যা, কোন সময়ই অসময় নয়। সাওনা শরীর ও আত্মা শুদ্ধ করে।’
সাওনা ছাড়া কী সুখ সম্ভব? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা সুখেরই অংশ। আমাদের কাছে সাওনার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।’
সেই সঙ্গে সালা হোনকাভুয়োরির কাছেও ব্যক্তি স্বাধীনতার ও বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। ভ্রমণের জন্য তিনি একবার সন্তানদের নিয়ে ইউরোপের বাকি অংশ ভ্রমণ করতে চান। তারপর আবার ল্যাবল্যান্ডে পছন্দের হ্রদের ধারে সুখের জীবনে ফিরে আসতে চান।
সূত্র: ডয়চে ভেলে