উন্নত জীবন যাপনের আশায় এক সময় জার্মানরাও নিজ দেশ ছেড়ে অন্য দেশে পাড়ি জমাতেন। বিশেষ করে ব্রাজিলে চলে যেতেন তারা। বিনামূল্যে চাষের জমি পাওয়া যেত বলে ব্রাজিল ছিল জার্মানদের কাছে জনপ্রিয় গন্তব্য। সাগরপথে তারা নিজ দেশ ছেড়ে অন্য দেশে পৌঁছাতেন। অনেক সময় সঙ্গে নেওয়া খাবার পথেই ফুরিয়ে যেত। অনিশ্চিত ভবিষ্যতের উদ্দেশ্যে সেই যাত্রার গল্প আর দেশ ত্যাগীদের স্মৃতি ধরে রাখার চেষ্টা করছে জার্মান। এজন্য গড়ে তুলেছে মিউজিয়াম। এমন এক ডাটাবেজ তৈরি করেছে দেশটি যেন কেউ ইচ্ছা করলে তার ছেড়ে যাওয়া পরিবারের খোঁজ করতে পারে।
উনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীতে জার্মানির বিমা হাফেন ইউরোপের অন্যতম বড় ইমিগ্রেশন বন্দর হিসেবে পরিচিত ছিল। সেখান থেকে ৭২ লাখেরও বেশি মানুষ আরো ভালো জীবন যাপনের আশায় জাহাজে চড়ে ‘নিউ ওয়ার্ল্ড’ বা নতুন পৃথিবীর উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছিলেন। উত্তর সাগর থেকে আটলান্টিক মহাসাগর হয়ে তারা আমেরিকায় পৌঁছেছিলেন। ১৯২০ থেকে ১৯৩০ সালের মধ্যে প্রায় ৭৫ হাজার জার্মান ব্রাজিলে বসবাস করার উদ্দেশ্যে দেশ ছেড়েছিলেন।যারা চলে গিয়েছেন তারা নতুন দেশে নতুন পরিবার পেয়েছেন আবার জার্মানেও পরিবারের অনন্য অনেক সদস্য রয়ে গেছেন।
ডিডবলিউ রিপোর্টার গিলারমে বেকারের পারিবারিক ইতিহাস এরকম। তার জার্মান পিতামহী ইউডার পালক পিতা মাতার সঙ্গে জাহাজে উঠেছিলেন। তার ভাই বোনরা তার আসল পিতার সঙ্গে জার্মানিতে থেকে গিয়েছিলেন।অনিশ্চিত ভবিষ্যতের উদ্দেশ্যে তার যাত্রা সম্পর্কে তিনি আরো জানতে চান।
জার্মান ইমিগ্রেশন সেন্টার নামের এক মিউজিয়ামে ইরার মতো মানুষের কাহিনী শুনে জীবন্ত করে তোলা হয়।
জার্মান ইমিগ্রেশন সেন্টারের সিমনে ব্লাসকা বলেন, ‘বেশিরভাগ মানুষই মূলত অর্থনৈতিক কারণে দেশ ছেড়েছিলেন। ১৮৩০ সালের অর্থনৈতিক সংকটে মধ্যবিত্তরা তাদের বিষয় সম্পত্তি হারিয়েছিলেন। তরুণ প্রজন্মের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ ভাইমার প্রজাতন্ত্রে কোন আশার আলো দেখেননি। অনেক পরিবারেই চাষবাস করত। অনেকেরই দক্ষিণ আমেরিকায় চাষের কাজ চালিয়ে যাওয়ার ভালো সুযোগ ছিলো। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিনামূল্যে জমি দিচ্ছিল না। সেখানে জমির দাম খুবই বেশি ছিল এবং অন্যদিকে তখনও ব্রাজিলে সেই সুযোগ ছিল।’
অনেকের এক মাসেরও বেশি সময় ধরে জাহাজে সমুদ্র পথে আটলান্টিক পেরোতেন। পথে বিভিন্ন প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই করে তাদের টিকে থাকতে হতো। কখনো খাদ্য ফুরিয়ে যেত। বিংশ শতাব্দীর বাষ্প চালিত জাহাজের যাত্রীও শিপিং কোম্পানির জন্য খাদ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল।
জার্মান ইমিগ্রেশন সেন্টারের সিমনে ব্লাসকা বলেন, ‘মানুষ বাসায় যা খেতে অভ্যস্ত ছিলেন সেই তুলনায় সেখানে প্রায়ই বিশেষ ধরনের খাদ্য পেতেন। শিপিং কোম্পানিগুলো খাদ্য তালিকা দেখিয়ে যাত্রীদের আকর্ষণ করার চেষ্টা করত। খাদ্য খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিলো। দিনে তিনবার খাবার পরিবেশন করা হতো তার মধ্যে অনেক বৈচিত্র থাকতো।’
যদিও যাত্রা শেষে সবার স্বপ্ন পূরণ হতো না। এমন কাহিনীও জাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে।
সিমনে ব্লাসকা বলেন, ‘জার্মানির এক ব্যক্তির চিঠি রয়েছে যিনি ব্রাজিলে এক খামার চালু করার চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু পঙ্গপাল তার গোটা ফসল নষ্ট করে দেয়। বিশেষ করে রাতে এক ধরনের বালুর মাছির উপদ্রবে অতিষ্ঠ হয়ে তিনি ফিরে আসেন।’
বিগত ২০০ বছরে বিভিন্ন জার্মান ভাষী অঞ্চল থেকে প্রায় তিন লাখ মানুষ ব্রাজিলে নতুন জীবন শুরু করেছেন। গিলামের পিতামহী ইটা কখনো আর জার্মানিতে ফেরেননি। তিনি নিজের ভাই বোনদেরও আর দেখতে পাননি। প্রেমার হাফেনে তার নাতি আবার তার কাহিনী জীবন্ত করে তুলছে।
তথ্যসূত্র: ডয়চে ভেলে