সাতসতেরো

ট্রাম্প যাচ্ছেন, কতটা সুরক্ষিত হোয়াইট হাউস

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ের পর দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য হোয়াইট হাউসে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিশ্বের সবচেয়ে সুরক্ষিত হাউস বলা হয় আমেরিকার প্রেসিডেন্টের বসবাসকারী এই হোয়াইট হাউসকে। এই হাউসের নানা স্তরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মানুষ ও পশু কাজ করে। এ ছাড়াও ব্যবহার করা হয় উন্নত প্রযুক্তি। হোয়াইট হাউস কতটা সুরক্ষিত চলুন জানা যাক।

বুলেটপ্রুফ উইন্ডো: আমেরিকার প্রেসিডেন্টের অফিস এবং বসবাসকারী হোয়াইট হাউসে অনেক জানালা রয়েছে। এখানে রয়েছে প্রায়  ১৪৭ টি জানালা। প্রত্যেকটি জানালাতে লাগানো রয়েছে বুলেটপ্রুফ গ্লাস। এসব সাধারণ কোনো বুলেয়প্রুফ গ্লাস নয় পৃথিবীর সবচেয়ে মজবুত এবং শক্তিশালী বুলেটপ্রুফ গ্লাস ব্যালেস্টিক গ্লাস দিয়ে তৈরি করা হয়েছে হোয়াইট হাউসের জানালার গ্লাস। যে কেউ চাইলেই কিনতে পারবেন না এই গ্লাস। আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা যখন হোয়াইট হাউসে থাকতেন তখন হোয়াইট হাউসে গুলি চালান অস্কার রাবির নামের এক ব্যক্তি। গ্লাসে গুলি চালানোর পরে বুলেটটি গ্লাসে বাঁধা পায়, গ্লাসগুলো এতই শক্তিশালী যে বুলেটটি গ্লাসের ভেতরে প্রবেশ করতে পারেনি। পৃথিবীতে অনেক রকমের বেলাস্টিক গ্লাস পাওয়া যায় এর মধ্যে সবচেয়ে উন্নতমানের হলো লেভেল ফোর। অনেকের ধারণা আমেরিকার প্রেসিডেন্টের জন্য এর চেয়ে উন্নত মানের গ্লাস লাগানো রয়েছে হোয়াইট হাউসে।

মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম: সাধারণত মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম ব্যবহার করা হয় যুদ্ধক্ষেত্রে কিন্তু আমেরিকার হোয়াইট হাউসেও ব্যবহার করা হয় মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম। দিনকে দিন আরো শক্তিশালী করা হচ্ছে হোয়াইট হাউসের নিরাপত্তা। নাইন ইলেভেনের পরে বিশেষ করে হোয়াইট হাউসের নিরাপত্তা নিয়ে বেশি জোর দেওয়া হয়। এরপর হোয়াইট হাউসের বেশ কিছু অঞ্চলকে নো ফ্লাই জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এই নো ফ্লাই জোনের মধ্যে কোনো প্লেন ঢুকে পড়লে সরাসরি মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম বিমানটিকে ধ্বংস করে দেবে। করোনার আগে মানুষ এই সম্পর্কে জানতোই না। এই মিসাইলের কাজ হচ্ছে নো ফ্লাই জোনের ভেতর ঢুকে পরা প্লেনকে সংকেত পাঠানো যেন প্লেনটি হোয়াইট হাউজের সীমানা ছেড়ে বেরিয়ে পড়ে অথবা আত্মসমর্পণ করে। নিরাপত্তা কর্মীদের যদি মনে হয় এটা বিপদজনক কিছু এবং হোয়াইট হাউসের ক্ষতি করতে পারে তাহলে তারা সঙ্গে সঙ্গে মিসাইল দিয়ে সে প্লেনটিকে ধ্বংস করে দিবে। আমেরিকার হোয়াইট হাউসের বিভিন্ন পাশে এমন সিস্টেমে মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম রাখা রয়েছে যা সাধারণ মানুষের কল্পনাতীত। পরিস্থিতি খারাপ হলে কিংবা হোয়াইট হাউসে আক্রমণ করলে এই মিসাইল সিস্টেমগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে বেরিয়ে আসবে এবং যুদ্ধও করতেও পারবে।

ইনফ্রারেড সেন্সর: আপনারা অনেক বিদেশি সিনেমাতে হয়তো ইনফ্রারেড সেন্সরের ব্যবহার দেখে থাকবেন কিন্তু হোয়াইট হাউসে এটা আসলে বাস্তবেই রয়েছে। হোয়াইট হাউসের সব জায়গাতেই ব্যবহৃত হয় ইনফ্রারেড সেন্সর। হ্যাকিং এর মাধ্যমে কেউ যদি এটা বন্ধ করতে চায় তাহলে হোয়াইট হাউসে এলার্ম বাজতে শুরু করে, সেই এলার্ম শুনে সিক্রেট সার্ভিস শত্রুদের বিরুদ্ধে একটিভ হয়ে যায় এবং কাজ শুরু করে। সর্বোচ্চ অত্যাধুনিক সিস্টেম দিয়ে পরিচালনা করা হয় এই সিস্টেমটি।

আয়রন ফেন্স: আপনি যদি কখনো হোয়াইট হাউসের ছবি দেখেন তাহলে দেখবেন যে চারপাশেই রয়েছে হোয়াইট হাউজের লোহার গ্রিল। এই গ্রিলের লোহাগুলো অত্যন্ত মজবুত এবং হোয়াইট হাউসের জন্য বিশেষভাবে বানানো। এই গ্রিলের উচ্চতা ১১ ফুট এবং গ্রিলের লোহাগুলো বিশেষভাবে ধারালো। এই লোহা এতটাই মজবুত যে বোমা মারলে ওই লোহার কোন ক্ষতি হবে না। কেউ যদি লাফিয়ে এই গ্রিল অতিক্রম করতে চায় তাহলে সে আরো বিপদে পড়বে কারণ গ্রিলের পরেই রয়েছে একটি কংক্রিটের দেয়াল। অল্প সময়ের মধ্যেই নিরাপত্তা কর্মীরা সেই ব্যক্তিকে ধরে ফেলতে সক্ষম।

গার্ড ডগ: নিরাপত্তার জন্য বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কুকুরের ব্যবহার করে থাকে। হোয়াইট হাউসের নিরাপত্তার জন্য রয়েছে স্পেশাল কুকুর। ১৯৭৫ সাল থেকে হোয়াইট হাউসের সিক্রেট সার্ভিস বেলজিয়ান ম্যালিনোইস নামের এক প্রকারের কুকুর নিরাপত্তার জন্য ব্যবহার করে। এরা শান্ত স্বভাবের প্রভুভক্ত হলেও শত্রুর প্রতি এরা ব্যাপক হিংস্র। সিক্রেট সার্ভিসের কুকুর নির্বাচনের জন্য বেশ কিছু দিক বিবেচনা করা হয়। বিশেষভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এই কুকুরদের গায়ে থাকে বুলেট প্রুফ জ্যাকেট। ২০১৪ সালের এক ব্যক্তি হোয়াইট হাউসের সীমান্ত অতিক্রম করার চেষ্টা করে, নিরাপত্তা কর্মীরা দেখে বুঝতে পারে ওই ব্যক্তির কাছে কোন অস্ত্র নেই, এরপরেও একটি কুকুর ব্যক্তিটিকে ধরাশায় করে ফেলেন এবং নিরাপত্তা কর্মীরা তাকে আটক করেন।

স্নাইপার: হোয়াইট হাউসে নিরাপত্তার জন্য সব সময় সতর্ক থাকে স্নাইপাররা। ভিডিও কিংবা ছবিতে হোয়াইট হাউসের বিল্ডিং এর চারপাশেই দেখা মেলে বিভিন্ন স্নাইপারের। এরা বেশ বিচক্ষণ হয়ে থাকে। এই স্নাইপারদের কাজ হচ্ছে হোয়াইট হাউসের আশেপাশ দিয়ে যাওয়া যেকোনো ব্যক্তি বা গাড়িকে পর্যবেক্ষণ করা। কোন ব্যক্তি বা গাড়ির ওপর সন্দেহ হলে ওই মুহূর্তেই গুলি চালিয়ে দিবে স্নাইপাররা। বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত স্নাইপারদের নিশানা কখনোই ভুল হয় না।

ফুড টেস্টার: খাবারের মাধ্যমে কেউ যেন আমেরিকার প্রেসিডেন্টের কোনো ক্ষতি না করতে পারে সেজন্য রয়েছে ফুড টেস্টার। প্রেসিডেন্ট এবং তার পরিবারের জন্য খাবার তৈরি করা খাবার পরীক্ষা করে দেখেন ফুড টেস্টাররা। প্রধান শেফ যেমন রান্নার দায়িত্বে থাকে তেমনি টেষ্টরাও এর মান ও বিভিন্ন দিক পরীক্ষা করে থাকে। খাবারে কোন বিষাক্ত পদার্থ আছে কিনা সেটি বের করা তাদের প্রধান কাজ। ফুড টেস্টাররা খাবার পরীক্ষা করে অনুমোদন দিলেই তবে এটা প্রেসিডেন্ট এর জন্য হওয়ার উপযোগী বলে গণ্য হয়। খাবারের সব ঠিকঠাক রয়েছে কিনা সেটিও তারা পরীক্ষা করেন এবং প্রেসিডেন্টের জন্য বিশেষ খাবার রান্না করাও তাদের দায়িত্ব। হোয়াইট হাউসের বিশেষ কোন অতিথি যদি প্রেসিডেন্টের জন্য খাবার আনেন সেটিও পরীক্ষা করে দেখেন তারা।