সাতসতেরো

‘চব্বিশের বাংলাদেশ’: বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের প্রামাণ্য দলিল

আধুনিক বিপ্লবের প্রধান তাত্ত্বিক ভ্লাদিমির লেনিনের মতে পুরোনো রাষ্ট্রব্যবস্থা টিকে আছে পুঁজিবাদী শ্রেণি ও সরকারি আমলাদের ষড়যন্ত্রে। নিজেদের স্বার্থ জিইয়ে রাখতে এরা রাষ্ট্র নামক ব্যবস্থাকে ব্যবহার করে। ফলে নানাবিধ উপায়ে শোষণের শিকার হয় সাধারণ মানুষ। সরকার ও সাধারণের মধ্যে বৈষম্যের দেয়াল তৈরি হয়। এতে সুবিধা ভোগ করে বিশেষশ্রেণি।

ক্ষমতাসীন মহল যখন পুরোনো কায়দায় দেশ শাসনে ব্যর্থ হয় এবং দেশের মানুষ সাবেকি কায়দা মেনে নিতে অস্বীকার করে, তখনই সৃষ্টি হয় বৈপ্লবিক পরিস্থিতি। প্রতিটি নাগরিক বিদ্রোহ, প্রতিটি গণ-আন্দোলন, প্রতিটি বিপ্লবের প্রধান কারণ বৈষম্য।

অতিসম্প্রতি গণ-আন্দোলন দেখেছে বাংলাদেশ। ছাত্র-জনতার বিদ্রোহের মুখে দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী সরকার প্রধান শেখ হাসিনা। দেশের দায়িত্ব নিয়েছে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। তবে একদিনের আন্দোলন বা সংগ্রামে এ পরিবর্তন আসেনি।

কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে নিরীহ ছাত্র-আন্দোলনকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছিল এ অভ্যুত্থান। আন্দোলন নিয়ন্ত্রণ করতে দমন-নিপীড়ন চালিয়েছে সরকার। ফলে ব্যাপক প্রাণহানীর মধ্য দিয়ে এসেছে পটপরিবর্তন। শহর থেকে গ্রাম, সারাদেশে লেগেছিল রাজনীতির উত্তাল হাওয়া। সবই আমাদের জানা।

তবুও মানুষ বিস্মৃতিপরায়ণ, তাই ইতিহাস লিখে রাখতে হয়। নইলে নদীর মতো পলি জমে ইতিহাস চাপা পড়ে যায়। অতিরঞ্জন বা বিরোধীদের হস্তক্ষেপেও ইতিহাস বিকৃত হতে পারে। একজন দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে সেই অগ্নিগর্ভ সময় মলাটবন্দি করেছেন লেখক ও সাংবাদিক মেসবাহ য়াযাদ।

পেশাগত কারণে এই আন্দোলনকে তিনি পাখির চোখে দেখেছেন। সশরীরে উপস্থিত ছিলেন রণক্ষেত্রে পরিণত হওয়া এলাকাগুলোতে। প্রতিবেদন সংগ্রহ করতে গিয়ে ঝুলিতে পুরেছেন সরকারের প্রতি মানুষের ক্ষোভের কারণ। সেসবই তিনি লিখেছেন তার ‘চব্বিশের বাংলাদেশ’ গ্রন্থে।

কোটা আন্দোলনের প্রথম দিন থেকেই শুরু হয়েছে এই দিনলিপি। ১৪ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত এর ব্যাপ্তিকাল। পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে লিপিবদ্ধ করেছেন রোজকার রোজনামাচা। প্রসঙ্গত উঠে এসেছে বৃটিশ শাসনামল, ১৯৫২, ৬৯, ৭১, ৭৫, ৯০, ২০১৩, ২০১৮ সালের ঘটনাপ্রবাহ। শুধু আন্দোলন আর সরকার পরিবর্তন নয়, অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ের অরাজকতাও উঠে এসেছে এই বইয়ে। লিপিবদ্ধ আছে আওয়ামী সরকারের মন্ত্রী ও নেতাদের গ্রেপ্তারজনিত তথ্য। 

পরবর্তী প্রজন্মকে সঠিক তথ্য জানাতে বইটি ভূমিকা রাখবে।  সেইসঙ্গে আন্দোলন চলাকালে নেটওয়ার্ক পরিষেবা বন্ধ থাকায় সব তথ্য সাধারণের জানার কথা নয়। রাজধানী ঢাকা থেকে অনেক দূরের জেলা বা মফস্বল শহরের মানুষের পক্ষে তাই সঠিক সংবাদ জানা অনেক ক্ষেত্রে সম্ভব হয়নি। প্রকৃতঅর্থে কী ঘটেছিল তখন ঢাকায়, জানতে হলে পড়তে হবে ‘চব্বিশের বাংলাদেশ’। 

সেই সময়ের গল্পের পেছনের গল্প, মানুষের গল্প, অমানুষের গল্প, ক্ষমতার গল্প, অক্ষমতার গল্প, সাধারণের গল্প, অসাধারণের গল্প— একজন মাঠের সংবাদকর্মী হিসেবে অভিজ্ঞতার গল্প সময়ের প্রামাণ্য দলিল হিসেবে মলাটবন্দি করার প্রয়াস এই গ্রন্থ।

বইটি প্রকাশ করেছে সাহিত্যদেশ। প্রচ্ছদ এঁকেছেন বিপুল শাহ। বইটির মূল্য ৪০০ টাকা। পাওয়া যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন বুকশপে। রকমারি ডটকমসহ বিভিন্ন অনলাইন বুকশপ থেকেও বইটি অর্ডার করা যাবে।