সাতসতেরো

কৃপণতার জন্য পরিচিত যে ধনী নারী

অর্থ, পরিচিতি, ক্ষমতা, দাপট কোনোকিছুরই অভাব ছিল না তার। তিনি ছিলেন বিপুল সম্পত্তির মালিক। কিন্তু তার জীবন যাপন দেখে বোঝার উপায় ছিল না যে তিনি একজন ধনী নারী। তিনি এমন এক জীবন যাপন পদ্ধতি বেছে নিয়েছিলেন যা বিশ্বে হৃদয় বিদারক এক নজির স্থাপন করেছে। দুই সন্তানের জননী ছিলেন তিনি। কথিত আছে, টাকা বাঁচানোর জন্য নিজের ছেলের চিকিৎসাও ঠিকমতো করেননি। 

বলা হচ্ছে আমেরিকান ধনী নারী হেটি গ্রিনের কথা। তিনি ‘ওয়াল স্ট্রিটের রানি’ নামেও পরিচিত। জীবদ্দশায় তিনি এত পরিমাণ সম্পত্তি জমা করেছিলেন যে তার মূল্য হাজার কোটি ছাড়িয়ে যায়। 

দ্য টেলিগ্রাফের তথ্য, ১৯১৬ সালে ৮১ বছর বয়সে মারা যান হেটি গ্রিন, তখন তার কাছে আনুমানিক ১০০ মিলিয়ন ডলার নগদ অর্থ ছিল। এ ছাড়া রেলওয়ে, হোটেল, অফিস বিল্ডিং, থিয়েটার, গির্জা এবং কবরস্থান সহ প্রায় ৬,০০০টিরও বেশি সম্পদের মালিকানা অর্জন করেছিলেন। যার মূল্য ছিল প্রায় ২০০ মিলিয়নের বেশি। যা তাকে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী নারী বানিয়েছে। আজকের দিনে তার সেই সম্পত্তির আর্থিক মূল্য প্রায় ৪.৫ বিলিয়ন ডলার।

এই পরিমাণ সম্পত্তির মালিক হয়েও বসবাস করতেন একটি ছোট্ট বাসায়। জীবন যাপনের জন্য খুবই সামান্য অর্থ ব্যয় করতেন ।নিউইয়র্কে তিনি বাড়ি ভাড়া করে থাকতেন।কর দেওয়ার ভয়ে তিনি বাড়ি ক্রয় করেননি। অল্প টাকায় ভাড়া পাওয়া যায়, এমন বাড়িতে থাকতেন। জানা যায়, কর ফাঁকি দেওয়ার জন্য তিনি প্রায়ই বাড়ি বদলাতেন। 

কথিত আছে, তরুণী বয়সে কেনা অন্তর্বাস ছিঁড়ে যাওয়ার পরেও সেলাই করে-করে জীবনের শেষদিকেও পরেছেন। তিনি কালো পোশাক পরতেন। এবং পোশাকটি জীর্ণ না হওয়া পর্যন্ত নতুন পোশাক কিনতেন না। অনেকে তাকে ‘কালো ডাইনি’ নামেও ডাকেন।

হেটি গ্রিন ১৮৩৫ সালে আমেরিকায় জন্মগ্রহণ করেন। পারিবারিক সূত্রেই তিনি অনেক সম্পত্তির মালিকানা লাভ করেন। হেটি ধনী ব্যবসায়ী বাবার একমাত্র কন্যা ছিলেন। ১৩ বছর বয়সে ব্যবসায়ের কলাকৌশল রপ্ত করতে শুরু করেন হেটি। বাবার মৃত্যুর পর বিপুল অর্থের মালিকানা লাভ করেন।

সেই টাকা বিনিয়োগের জন্য মাত্র ২১ বছর বয়সে হেটি নিউইয়র্কে বসবাস করতে শুরু করেন এবং ওয়াল স্ট্রিটে টাকা বিনিযোগ করেন। সেই বয়সেই হেটি প্রতি ঘণ্টায় ৩০০ ডলার আয় করতেন।

পারিবারিক সূত্রেই ব্যবসায়িক জ্ঞান অর্জন করেছিলেন হেটি। তার বিয়েও হয়েছিল এক ধনী ব্যবসায়ীর সঙ্গে। ১৮৬৭ সালের জুলাই মাসে এডওয়ার্ড এইচ গ্রিনকে বিয়ে করেছিলেন তিনি। তবে বিয়ের পরেও নিজের ব্যবসা নিজেই দেখাশোনা করতেন এবং অর্থ ব্যবস্থাপনাও তার হাতেই ছিল।

অল্প কয়েকদিনের মধ্যে তিনি ওয়াল স্ট্রিটের অন্যতম বিনিয়োগকারী হয়ে ওঠেন। সে সময় আমেরিকার প্রায় প্রত্যেকটা রেলপথে তার অংশীদারিত্ব ছিল। অথচ রেলগাড়িতে ভ্রমণের সময় সাধারণ কামরায় ভ্রমণ করতেন।

এ ছাড়া অন্যান্য স্টক এবং সরকারি বন্ডেও যথেষ্ট আধিপত্য বিস্তার করেছিলেন। ঋণ দেওয়ার জন্য মোটা তহবিল তৈরি করেন হেটি। বহু বিনিয়োগকারীকে ঋণ দিতেন। হেটি ধীরে ধীরে বন্ধকী এবং রিয়্যাল এস্টেট ব্যবসায়ে বিনিয়োগ বাড়িয়েছিলেন। যার ফলে তার মৃত্যুর পর তার উত্তরাধিকারীরা প্রচুর সম্পত্তি পেয়ে যান।

বিপুল অর্থের মালিকানা থাকার পরেও তিনি নিজের সন্তানের চিকিৎসা পর্যন্ত করাতে চাননি বলে শোনা যায়। সমালোচকদের দাবি, হেটির কার্পণ্যের জন্য তার ছেলে ঠিকমতো চিকিৎসা পায়নি। ফলে একটি পা কেটে ফেলতে হয়েছিল। ছেলের পা ভেঙে গেলে টাকা খরচ করে চিকিৎসা না করিয়ে বিনামূল্যের চিকিৎসা খুঁজছিলেন হেটি গ্রিন।

সারা জীবন বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করেও জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত ভাড়া বাসায় থেকেছেন। তার শেষদিনগুলো কেটেছে নিউ জার্সির হোবোকেনের একটি ছোট আবাসনে। ১৯৬১ সালে ৮১ বছর বয়সে মারা যান হেটি। এরপর তার দুই ছেলে বিপুল সম্পত্তির মালিকানা লাভ করেন।