খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীদের কাছে সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ক্রিসমাস বা বড়দিন। প্রত্যেক বছর ২৫ ডিসেম্বর যিশুর জন্মদিনে বিশ্বজুড়ে বড়দিন উদ্যাপন করা হয়। কবে কখন এই দিন উদযাপন শুরু হয়েছিল তা নিয়ে দ্বিমত আছে। তবে লিখে রাখা ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, ৩৩৬ খ্রিষ্টাব্দে বিশ্বে প্রথমবারের মতো বড়দিন উদ্যাপনের কথা।
খ্রিষ্টধর্ম মতে, যিশুখ্রিষ্টের জীবনের পাঁচটি ঘটনা রয়েছে জন্ম, মৃত্যু, পুনরুত্থান, স্বর্গে আরোহণ এবং পুনরাগমন। ২৫শে ডিসেম্বর যিশু খ্রিস্টের জন্মের দিনে বড়দিন উৎসবটি পালিত হয়। যিশু খ্রিস্টের জন্ম বেথলেহেম নগরীতে। অলৌকিকভাবে জন্মগ্রহণ করেছিলেন তিনি। খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষ বিশ্বাস করে, যিশু খ্রিষ্ট মানুষের রূপ ধরে পৃথিবীতে এসেছিলেন সব পাপ থেকে মুক্তি দিতে আর মানবিক বন্ধনকে আরও সুদৃঢ় করতে। এজন্য তার জন্মদিন স্মরণ করা হয় শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড: বিশ্বজিৎ ঘোষ বিবিসিকে জানিয়েছেন, যিশু খ্রিষ্টের জন্মদিন মর্যাদার দিক থেকে এটি একটি বড় দিন। কারণ বিশ্বের বিশাল অংশের মানুষ তার দেয়া ধর্ম ও দর্শনের অনুসারী।
বাংলাদেশে আঠার ও উনিশ শতকে ইউরোপীয়রা এসে খ্রিষ্ট ধর্ম প্রচার শুরু করে। অনেক বাঙালি খ্রিষ্ট ধর্ম গ্রহণ করে এবং আঠার শতকের শেষের দিকে এই বড়দিন পালনের চর্চা শুরু করে। এবং একই সময়ে এই অঞ্চলের মানুষ ইউরোপীয়দের অনুকরণে জন্মদিন পালনও শুরু করে।
ইতিহাস বলে, ২৪ ডিসেম্বর রাতে বেথেলহেমের এক গোশালায় কুমারী মা মেরীর কোলে জন্ম হয় যিশুর। ক্যাথলিক রাজা কনস্ট্যানটাইনের আমলে তার জন্মদিন পালন শুরু হয়। এর কয়েক বছর পর পোপ জুলিয়াস ঘোষণা করেন ২৫ ডিসেম্বর উদযাপন হবে ক্রিসমাস হিসেবে পালন করা হবে। কিন্তু জুলিয়ান ও গ্রেগরিয়ান দিনপঞ্জিতে দ্বিমত রয়েছে। অনেক অর্থোডক্স ও কপ্টিক চার্চ এখনো গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের বদলে জুলিয়ান দিনপঞ্জি অনুসারে ৭ জানুয়ারি বড়দিন পালন করেন।
উল্লেখ্য বড়দিন ইউরোপে ক্রিসমাস হিসেবে পরিচিত। শব্দটি মূলত গ্রিক আর লাতিন শব্দ দ্বরা তৈরি। Cristes শব্দটি গ্রীক Christos এবং লাতিন missa থেকে এসেছে। দেখা যায় যে, প্রাচীন গ্রীসের Christos বানানের প্রথম অক্ষকটি লাতিন অক্ষর X এর সমরূপ। ইতিহাসবিদদের মতে, ষোড়শ শতাব্দীর মধ্যভাগ থেকে এক্স অক্ষরটি খ্রিস্টের নামের শব্দ সংক্ষেপ হিসেবে ব্যবহার করা শুরু হয়।