সাতসতেরো

যুক্তরাষ্ট্রের ভয়ংকর ১০ দাবানল 

যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঞ্চল ক্যালিফোর্নিয়ার মেনডোসিনো, শাসটেয়া-ট্রিনিটি, সিক্স রিভার্স, প্লুমাস কাউন্টির মানুষ বিভিন্ন সময় দাবানলের ভয়াবহতা দেখেছেন। ২০০০ সালের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে দাবানলের মৌসুম দীর্ঘায়িত হয়েছে। চলুন যুক্তরাষ্ট্রের ভয়ংকর ১০ দাবানল সম্পর্কে জেনে নেই।

আগস্ট কমপ্লেক্স (২০২০): ক্যালিফোর্নিয়ার মেনডোসিনো, শাসটেয়া-ট্রিনিটি এবং সিক্স রিভার্স জাতীয় উদ্যানজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল আগস্ট কমপ্লেক্স দাবানল। ২০২০ সালের ১৬ ও ১৭ আগস্ট বজ্রপাত থেকে সূত্রপাত হয়েছিল এটি। বলা হয়ে থাকে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় দাবানল আগস্ট কমপ্লেক্স। ৩৮টি আলাদা আলাদা জায়গায় চার মাসের বেশি সময় ধরে আগুন জ্বলেছিল। পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছিল ১০ লাখ ৩২ হাজার ৬০০ একর ভূমির গাছগাছালি ও স্থাপনা। এই দাবানলের ভয়াবহতা ছড়িয়েছিল একাধিক দেশে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলো হাজার হাজার মানুষ। অগ্নিনির্বাপণ বাহিনীর একজন কর্মী দাবানল নেভাতে গিয়ে নিহত হয়েছিলেন। একজন আহত হয়েছিলেন। আগস্ট কমপ্লেক্স দাবানলে ৯৩৫টি অবকাঠামো পুড়ে যায়। সে সময় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ছিল প্রায় ৩২ কোটি মার্কিন ডলার।

ডিক্সি (২০২১): প্লুমাস কাউন্টি দাউ দাউ করে জ্বলেছিল। ২০২১ সালে ডিক্সি দাবানলে প্রায় ৯ লাখ ৬৩ হাজার ৩০৯ একর ভূমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। ক্ষয়ক্ষতির আর্থিক পরিমাণ ছিল প্রায় ৬৩ কোটি ৭০ লাখ মার্কিন ডলার। বিদ্যুৎ সরবরাহের তারের ওপর গাছ পড়ে আগুনের সূত্রপাত হয়েছিল। ডিক্সি ১০৫ দিন ধরে চলেছিল। এতে পুড়ে গিয়েছিল ১ হাজার ৩২৯টি অবকাঠামো। আগুন নেভাতে গিয়ে অগ্নিনির্বাপণ বাহিনীর এক সদস্য মারা যান এবং তিনজন আহত হন। জানা যায়, ওই দাবানলে কোনো বেসামরিক মানুষ প্রাণ হারাননি।

মেনডোসিনো কমপ্লেক্স (২০১৮): ক্যালিফোর্নিয়া উপকূলে ছড়িয়ে পড়েছিলো দুটি আলাদা দাবানল। রিভার ফায়ার ও র‍্যাঞ্চ ফায়ার। ২৭ জুলাই থেকে শুরু করে ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দাবানলের গতি বেশি ছিল। এই দাবানলের আগুন পুরোপুরি নিভতে পরের বছর জানুয়ারি পর্যন্ত সময় লেগেছিল। দুই দাবানলে মোট ৪ লাখ ৫৯ হাজার ১২৩ একর জমির ক্ষতি হয়। দাবানলে একজন নিহত এবং তিনজন আহত হন।

এসসিইউ লাইটনিং কমপ্লেক্স (২০২০): স্যান্টা ক্লারা, আলামেডা, কন্ট্রা কোস্টা, সান জোয়াকুইন, মারসেড ও স্ট্যানিসলাউস কাউন্টিতে ছড়িয়ে পড়েছিলো এসসিইউ লাইটনিং কমপ্লেক্স দাবানল। এসসিইউ (স্যান্টা ক্লারা ইউনিট) লাইটনিং কমপ্লেক্সের নাম থেকেই এই দাবানলের সূত্রপাত হয়েছিল। ২০২০ সালের ১৬ আগস্ট বজ্রপাত থেকে দাবানলটি সৃষ্টি হয়ে তীব্র গতিতে এগিয়েছিল ১ অক্টোরব পর্যন্ত।  এরপর নিয়ন্ত্রণে আসে।  এতে কেউ প্রাণ হারাননি। আহত হয়েছিলেন ৬ জন। আর  ৩ লাখ ৯৬ হাজার ৬২৪ একর ভূমির গাছগাছালি ও স্থাপনা পুড়ে গিয়েছিল। 

ক্রিক (২০২০): ক্যালিফোর্নিয়ার মধ্যাঞ্চলের সিয়েরা ন্যাশনাল ফরেস্ট এবং মাডেরা কাউন্টিতে ভয়াবহ দাবানল ছড়িয়ে পড়েছিল ২০২০ সালে। ৪ সেপ্টেম্বর দাবানল শুরু হয়ে ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত জ্বলছিলো। সেটি শতভাগ নিয়ন্ত্রণে আসতে কয়েক মাস লেগে যায়।  এতে পুড়ে যায় ৩ লাখ ৭৯ হাজার ৮৯৫ একর ভূমি। আরও পুড়ে গিয়েছিল ৮৫৬টি অবকাঠামো। তবে কেউ মারা যাননি, আহত হয়েছিলেন ২৬ জন। ক্রিক দাবানলের সূত্রপাতের কারণ এখনও অজানা। 

এলএনইউ লাইটনিং কমপ্লেক্স (২০২০): ২০২০ সালের ১৬ আগস্ট ভোরে ক্যালিফোর্নিয়ার উত্তরে অনেক জায়গায় বজ্রঝড় শুরু হয়েছিল। ৭২ ঘণ্টা ধরে চলা ও ঝড়ে ১০ হাজার ৮৪৯টি বজ্রপাতের খবর পাওয়া গিয়েছিল। ওই সব বজ্রপাতের কারণেই ক্যালিফোর্নিয়াজুড়ে প্রায় ৩৭৬টি স্থানে ছোট–বড় দাবানলের সূত্রপাত হয়েছিল। এলএনইউ লাইটনিং কমপ্লেক্স দাবানলে ৩ লাখ ৬৩ হাজার ২২০ একর ভূমি পুড়ে গিয়েছিল। এতে প্রাণ হারিয়েছিলেন ছয় বেসামরিক নাগরিক। আহত হয়েছিলেন আরও পাঁচজন।

নর্থ কমপ্লেক্স (২০২০): উত্তর ক্যালিফোর্নিয়ার প্লুমাস জাতীয় উদ্যানের ২১টি জায়গায় ১৭ আগস্ট ২০২০ তারিখে বজ্রঝড়ের কারণে হওয়া বজ্রপাত হয়েছিলো। বজ্রপাতের কারণে উত্তর ক্যালিফোর্নিয়ার প্লুমাস জাতীয় উদ্যানের ২১টি জায়গায় আগুন জ্বলতে শুরু করেছিলো। যা একসময় ভয়াবহ এক দাবানলে পরিণত হয়। ১০৯ দিন স্থায়ী হয়েছিল ওই দাবানল। এতে পুড়ে যায় ৩ লাখ ১৮ হাজার ৯৩৫ একর ভূমি। এই দাবানলে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মানুষ হতাহত হন। প্রাণ হারান ১৬ জন, আহত হয়েছিলেন প্রায় শতাধিক মানুষ।

রাশ ফায়ার (২০১২): ২০১২ সালে লাসেন কাউন্টি থেকে এই দাবানল শুরু হয়েছিল। পরে এই দাবানল নেভাদা অঙ্গরাজ্যের ওয়াশু কাউন্টিতে ছড়িয়ে পড়ে। দুই অঙ্গরাজ্য মিলিয়ে রাশ দাবানলে ৩ লাখ ১৫ হাজার ৫৭৭ একর ভূমি পুড়ে যায়। ১২ আগস্ট শুরু হওয়া এই দাবানল ৩০ আগস্ট পর্যন্ত জ্বলেছিল।

টমাস ফায়ার (২০১৭): ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার টমাস ফায়ার ভেন্টুরা ও স্যান্টা বারবারা কাউন্টিজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল এই দাবানল। এতে পুড়ে গিয়েছিল প্রায় ২ লাখ ৮১ হাজার ৮৯৩ একর ভূমি। এই দাবানল নিয়ন্ত্রণে আসে পরের বছর ১২ জানুয়ারিতে।

সিডার ফায়ার (২০০৩): ক্যালিফোর্নিয়ার ধ্বংসাত্মক দাবানলগুলোর একটি ছিল সিডার ফায়ার। এটি ২০০৩ সালের অক্টোবর ও নভেম্বরে ক্যালিফোর্নিয়ার সান ডিয়েগো কাউন্টিতে ছড়িয়ে পড়েছিল। এতে ২ লাখ ৭৩ হাজার ২৪৬ একর ভূমি পুড়ে গিয়েছিল। ঝোড়ো বাতাসের কারণে দাবানল নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছিলো না। ২০০৩ সালের ৪ নভেম্বর দাবানলটি নিয়ন্ত্রণে আসে। কিন্তু তার আগে ধ্বংস করে ২ হাজার ৮২০টি অবকাঠামো। এতে প্রাণ হারান ১৫ জন। তাদের মধ্যে একজন অগ্নিনির্বাপণ বাহিনীর সদস্য ছিলেন।

তথ্যসূত্র: রয়টার্স