আবু বকর ইয়ামিন : স্বাধীন বাংলাদেশের সঙ্গে যে নামটি ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে সেটি হচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাঙালি জাতির জনক তিনি। ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্ম ইতিহাসের এ উজ্জল নক্ষত্রের।
সাত বছর বয়সে শেখ মুজিব টুঙ্গিপাড়ার পার্শ্ববর্তী গিমাডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। পরবর্তী সময়ে মাদারীপুর ইসলামিয়া হাইস্কুল, গোপালগঞ্জ সরকারি পাইলট স্কুল ও পরে গোপালগঞ্জ মিশন স্কুলে লেখাপড়া করেন।
১৯৪২ সালে তিনি প্রবেশিকা পরীক্ষায় দ্বিতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হয়ে উচ্চ শিক্ষার জন্য কলকাতায় গিয়ে বিখ্যাত ইসলামিয়া কলেজে ভর্তি হন।
স্বনামধন্য একটি প্রতিষ্ঠান ছিল ইসলামিয়া কলেজ। তৎকালে বাংলার মেধাবী শিক্ষার্থীদের ওই কলেজে লেখাপড়ার সুযোগ হতো। ইসলামিয়া কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯২৬ সালে। ১৯৪৭ সালে নামকরণ করা হয় সেন্ট্রাল কলকাতা কলেজ নামে। ১৯৬০ সালে প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ মওলানা আবুল কালাম আজাদের নামে এর নামকরণ করা হয় মওলানা আজাদ কলেজ নামে।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৪৪ সালে আই.এ এবং ১৯৪৭ সালে বি.এ ডিগ্রি অর্জন করেন এ কলেজ থেকে।
বঙ্গবন্ধু ইসলামিয়া কলেজে পড়াকালে যে আবাসিক হোটেলে থাকতেন তার নাম ছিল বেকার হোস্টেল। ঐতিহাসিক একটি নাম। ওই হোস্টেলের ২৪ নম্বর কক্ষে থাকতেন জাতির এ মহানায়ক। সেখান থাকা অবস্থায় তিনি জড়িয়ে পড়েন মুসলিম লীগের রাজনীতির সঙ্গে। ছাত্র সংসদ নির্বাচন ও অন্যান্য কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করতেন সেখান থেকেই।
১৯১০ সালে লর্ড বেকার এই হোস্টেল প্রতিষ্ঠা করেন। তিনতলা বিরাট ভবন। কলেজের পাশের রাস্তায় তালতলা থানার কাছেই এ হোস্টেল। শেখ মুজিব তিনতলায় ২৪ নম্বর কক্ষে থাকতেন। ১৯৯৮ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উদ্যোগে বেকার হোস্টেলের ২৩ ও ২৪ নম্বর কক্ষ নিয়ে গড়া হয় বঙ্গবন্ধু স্মৃতিকক্ষ। সেই কক্ষে রাখা রয়েছে বঙ্গবন্ধুর ব্যবহূত বিভিন্ন সামগ্রী।
২০১১ সালে সেখানে একটি ভাস্কর্য স্থাপিত হয়েছিল। সেটি যথাযথ না হওয়ায় নতুনভাবে প্রতিস্থাপিত করা হয়েছে গত শনিবার (৩ আগস্ট, ২০১৯)। নতুন এ ভাস্কর্য তৈরি করেছেন ঢাকার শিল্পী লিটন পাল রনি। ৩৬ ইঞ্চি উচ্চতা এবং ২৮ ইঞ্চি প্রস্থের ১৭০ কেজি ওজনের নতুন হালকা ধূসর এ ভাস্কর্য তৈরিতে ব্যবহূত হয়েছে সিমেন্টকাস্টিং।
বেকার হোস্টেলের ২৩ ও ২৪ নম্বর কক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার সঙ্গীসাথিরা থাকতেন। সারাদেশ থেকে তার ছাত্র রাজনীতির কর্মী, ভক্ত ও অনুরাগীরা এসে দেখা করত এখানেই। হোস্টেল সুপার ছিলেন অধ্যাপক সাইদুর রহমান। ছাত্র-কর্মীদের থাকার জন্য বঙ্গবন্ধু কোনো হলঘর চাইলে তিনি কখনো না করতেন না।
ইসলামিয়া কলেজের প্রিন্সিপাল ছিলেন ড. এইচ আর. জুবেরী। বঙ্গবন্ধু যেহেতু রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন এবং নেতাকর্মীদের নিয়ে নানা কাজে ব্যস্ত থাকতেন। ফলে পড়াশুনা বা পরীক্ষায় যেসব সমস্যা হতো বিশেষ করে বি এ পরীক্ষা দেওয়ার জন্য তিনি তাকে সব ধরনের সহযোগিতা করেছিলেন। তার প্রতি সকল শিক্ষকের ছিল অপার স্নেহ ও ভালবাসা।
বেকার হোস্টেলের ছাত্র সংসদের বিভিন্ন কার্যক্রমও তিনি নিয়ন্ত্রণ করতেন। ১৯৪৫ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ইসলামিয়া কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। তবে তিন মাস পর পদত্যাগ করে জাতীয় রাজনীতিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।
শিক্ষক-শিক্ষার্থী সকলের নিকট প্রিয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন জাতির এ কাণ্ডারি। তার আদর্শ, সাহস ও চিন্তা-ভাবনার প্রতি আস্থা ও শ্রদ্ধা ছিল সবার। শোকের মাসে জাতির জনকের প্রতি অপার শ্রদ্ধা ও ভালবাসা। রাইজিংবিডি/ঢাকা/১১ আগস্ট ২০১৯/ইয়ামিন/এনএ