নভেল করোনাভাইরাস মানুষের নাক, মুখ দিয়ে প্রবেশ করে শ্বাসনালী হয়ে ফুসফুসে গিয়ে প্রদাহ সৃষ্টি করে। ভাইরাসটি যাতে নাক-মুখ দিয়ে প্রবেশ করতে না পারে, সেজন্য মাস্ক ব্যবহারের বিকল্প নেই। সামাজিক দূরত্ব মেনে চললেও মাস্ক ব্যবহার না করলে শরীরে ভাইরাস প্রবেশের আশঙ্কা থাকে।
রাইজিংবিডির প্রতিবেদকের সঙ্গে একান্ত আলাপে এসব তথ্য জানান ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. সুলতানা শাহানা বানু।
বৃহস্পতিবার (০৭ মে) বিকেলে ঢামেকের ল্যাবে কোভিড-১৯ রোগী শনাক্তে কার্যক্রমের এক ফাঁকে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে মাস্ক ব্যবহারের বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন তিনি।
মাস্ক ব্যবহার জরুরি কেন- জানতে চাইলে এই বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘একটা সময়ে বলা হতো সবার মাস্ক ব্যবহারের প্রয়োজন নেই। কিন্তু এখন সবারই মাস্ক ব্যবহার জরুরি। কেননা এখন কমিউনিটি ট্রান্সমিশন (করোনাভাইরাসের সামাজিক সংক্রমণ) হয়ে গেছে। একজন থেকে আরেকজনে ছড়াচ্ছে।’
সংক্রমিত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির মাধ্যমে যেকোনো বস্তুতে ভাইরাসটি পড়ে থাকতে পারে উল্লেখ করে ড. সুলতানা বলেন, ‘সেই বস্তু যদি অসংক্রমিত ব্যক্তি স্পর্শ করেন এবং সেই হাত দিয়ে তিনি চোখ, নাক, মুখ স্পর্শ করেন বা চুলকান, তাহলে বস্তু থেকে হাতের মাধ্যমে ভাইরাস ওই ব্যক্তি চোখ-নাক-মুখে লাগবে এবং সেখান থেকে শ্বাসনালী হয়ে ফুসফুসে গিয়ে প্রদাহ সৃষ্টি করবে। তাই এই রুট দিয়ে যাতে ভাইরাস প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।’
বাতাসেও যেহেতু ভাইরাসটি ছড়ায়, সেই কারণে মাস্ক ব্যবহার না করে ছয় ফিট শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখলেও বাতাসের মাধ্যমে সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে বলেও জানান এই বিশেষজ্ঞ।
ড. সুলতানা বলেন, ‘আমরা চাইলেও জনসমাগমে, বাজারে, শপিংমলে বা যানবাহনে ছয় ফিট দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব না। তাই মাস্ক ছাড়া গতি নেই। সুতরাং আমি বলবো- মাস্ক, মাস্ক এবং মাস্ক। নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে মাস্ক ব্যবহার জরুরি।’
কারা কী ধরনের মাস্ক ব্যবহার করবেন- জানতে চাইলে অধ্যাপক ড. সুলতানা বলেন, ‘যারা সংক্রমিত ব্যক্তির খুব কাছে যান; যেমন চিকিৎসকরা। এছাড়া আমরা যারা ল্যাবরেটরিতে ভাইরাস নিয়ে কাজ করি, আমাদের জন্য এন ৯৫ মাস্ক, তাছাড়া সুরক্ষা সম্ভব না। এই মাস্ক প্রয়োজনের তুলনায় কম। যে কারণে সাধারণ মানুষের এই মাস্ক পাওয়া কঠিন। সাধারণ মানুষ সার্জিক্যাল মাস্ক ব্যবহার করতে পারেন। যেটায় তিনটি লেয়ার আছে। এই মাস্কের একপাশে নীল, এক পাশে সাদা। সাদা অংশটা ভিতরের দিকে থাকবে, নীল অংশটা বাইরের দিকে। এই মাস্ক একসঙ্গে দুটি ব্যবহার করতে পারলে ভালো।’
কীভাবে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এমনভাবে পরতে হবে যাতে নাক-মুখ-থুতনির নিচ পর্যন্ত কোথাও ফাঁকা না থাকে।’’ সেই সঙ্গে চোখের সুরক্ষার জন্য চশমা বা আই প্রোটেক্টর এবং হ্যান্ড গ্লাভস ব্যবহারের পরামর্শ দেন তিনি। গ্লাভস পরলেও হ্যান্ড স্যানিটাইজারের বোতলও রাখার তাগিদ দেন। যাতে বাইরে থেকে এসে স্যানিটাইজ (পরিষ্কার) করে গ্লাভস ফেলে দেওয়া যায়।’
একটি মাস্ক বারবার ব্যবহার করা যাবে কিনা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কাপড়ের মাস্ক আধাঘণ্টা সাবান পানিতে ভিজিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে রোদে শুকিয়ে আয়রণ করে ব্যবহার করা যাবে।’
সার্জিক্যাল মাস্কও ধুয়ে ব্যবহার করা সম্ভব জানিয়ে ড. সুলতানা বলেন, ‘সার্জিক্যাল মাস্ক সবাইতো কিনতে পারেন না। পাওয়াও যায় না। দুটি একসঙ্গে ব্যবহার করলে ভেতরে যেটা ব্যবহার করা হয়, সেটি সাবান দিয়ে ধুয়ে শুকিয়ে আয়রণ করে অন্তত আরেকবার ব্যবহার করা যেতে পারে।’
তবে গ্লাভস একবারের বেশি ব্যবহার না করার পরামর্শ দেন তিনি।
ঢাকা/বকুল