স্বাস্থ্য

‘শিশুদের লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্টেশনের সব ব্যবস্থা নেওয়া হবে’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেছেন, শিশুদের লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্টেশনের সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর এটা নিশ্চিত করতে পারলে বিদেশে যাওয়ার রোগীর প্রবণতা আরও কমে আসবে এবং বৈদেশিক মুদ্রারও সাশ্রয় হবে।

শনিবার (২৭ জানুয়ারি) শহিদ ডা. মিলন হলে আয়োজিত ‘শিশুদের লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন ও নতুন জীবনের প্রত্যাশা’ নিয়ে সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসন একাধিক ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্ল্যান্ট, বড়দের লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট, নিয়মিত চোখের কর্নিয়া প্রতিস্থাপন, বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন, টেস্টটিউব বেবির জন্মদান, স্টেম সেল থেরাপি, নিয়মিত কিডনি প্রতিস্থাপনসহ জটিল রোগের চিকিৎসাসেবা প্রদান অব্যাহত রেখেছে। স্বল্পমূল্যে এসব চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। এতে করে চিকিৎসাব্যয়ের জন্য ডলারের ওপর চাপ কমছে।

সেমিনারে জানানো হয়, বাংলাদেশের জনসংখ্যার প্রায় তিন ভাগের এক ভাগ শিশু, এই শিশুদের মধ্যে যারা নবজাতক তাদের মধ্যে একটা বৃহৎ অংশ জন্ডিসে ভোগে। পিত্তনালীর জন্মগত ত্রুটির কারণে যে জন্ডিস হয় তার একটা বড় অংশ হয় বিলিয়ারি অ্যাট্রেসিয়ার কারণে। বিলিয়ারি অ্যাট্রেসিয়া নাম একটি জন্মগত রোগ। বিপিয়ারি অ্যাট্রেসিয়া পিত্তনালীর একটি জন্মগত রোগ যা লিভারের ভেতর ও বাইরে বিস্তৃত থাকতে পারে। বিলিয়ারি অ্যাট্রেসিয়া রোগে জন্মগতভাবে পিত্তনালী তৈরি হয় না। এই রোগে লিভারে উৎপাদিত পিত্তরস পিত্তনালীতে আসতে পারে না। যার ফলে উৎপাদিত পিত্ত লিভারে জমা হয়ে বিভিন্ন জটিলতা তৈরি করে। পরবর্তীতে সঠিক চিকিৎসা না হলে লিভার নষ্ট হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটে। অতীতে বিলিয়ারি অ্যাট্রেসিয়াকে একটি দুরারোগ্য ও প্রাণঘাতী রোগ হিসেবে বিবেচনা করা হত। কিন্তু জাপানি সার্জন ডা. মোরিও কাসাই কর্তৃক উদ্ভাবিত পদ্ধতি কাসাই পোর্টোয়েন্টরোস্টমি ব্যবহার করে সারা পৃথিবীর লাখ লাখ বিলিয়ারি অ্যাট্রেসিয়া আক্রান্ত শিশুর জীবন বাঁচানো সম্ভব হয়েছে।

তারা বলেন, বিলিয়ারি আট্রেসিয়া বেগের মূল চিকিৎসা লিভার প্রতিস্থাপন। এ রোগে আক্রান্ত শিশুদের জন্মের ৬০-৭০ দিনের মধ্যে কাসাই অপারেশন করতে পারলে লিভার নষ্ট হওয়ার প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হয়। কাসাই অপারেশন পরবর্তী সময়ে শতকরা ৬০ ভাগ রোগীর ৬ মাসের মধ্যে জন্ডিস কমে যায়। যারা ২ মাসের মধ্যে চিকিৎসা নিতে পারে না অথবা অপারেশন পরবর্তী যাদের জন্ডিস কমে না তাদের দ্রুত লিভার ট্রান্সপ্লান্টেশনের প্রয়োজন হয়।

বক্তারা বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে অতি অল্প খরচে দীর্ঘদিন ধরে কাসাই অপারেশন সম্পন্ন করে আসছে। যার ফলাফল আশাব্যঞ্জক। ভবিষ্যতে এসব শিশুসহ অন্যান্য বিলিয়ারি অ্যাট্রেসিয়ায় আক্রান্ত বাচ্চাদের লিভার প্রতিস্থাপন প্রয়োজন হবে। কিন্তু লিভার প্রতিস্থাপন একটি ব্যয়বহুল চিকিৎসা। ইউরোগে এর খরচ প্রায় ২ কোটি টাকা, ভারতে প্রায় ৬০-৭০ লাখ এবং বাংলাদেশে আনুমানিক ২০-৩০ লাখ টাকা খরচ হবে। এ কারণে শিশু যকৃত প্রতিস্থাপন আমাদের তথা শিশু সার্জারি বিভাগের বর্তমান স্বপ্ন। যা পূরণের জন্য আমাদের দরকার একটি উপযুক্ত অবকাঠামো, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, প্রশিক্ষণ, দক্ষ জনশক্তি। 

সেমিনারে আরও বলা হয়, বিএসএমএমইউ’র শিশু সার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে এম জাহিদ হোসেনের সহায়তায় কাসাই অপারেশনের যাত্রা শুরু। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদের প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় শিশুদের লিভার প্রতিস্থাপন শুরু করতে শিশু সার্জারি বিভাগ দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। আমাদের প্রিয় সন্তানদের হাসিমুখ চিরস্থায়ী হোক। আসুন শিশুদের এই দীর্ঘ ক্লান্তিকর যাত্রায় আমরা সহযাত্রী হই। বিনা চিকিৎসায় কোন শিশুর হাসি মুছে যেতে দেব না, এ প্রত্যাশা করি।

এতে সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পেডিয়াট্রিক সার্জারি (শিশু সার্জারি) বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. একেএম জাহিদ হোসেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন শিশু সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. সুশংকর কুমার মণ্ডল ও সহকারী অধ্যাপক ডা. এস এম সাইফুল ইসলাম।