স্বাস্থ্য

ডেঙ্গুর প্রকোপ ব্যাপকহারে বাড়ার শঙ্কা, সংশ্লিষ্টদের উদ্বেগ

কেবল রাজধানী নয়, সারাদেশেই মাথাচাড়া দিতে শুরু করেছে ডেঙ্গু। রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু আক্রান্ত ভর্তি রোগীর বেশিরভাগ ঢাকার বাইরে থেকে আসায়, এ বিষয়ে বাড়ছে সংশ্লিষ্টদের উদ্বেগ। সামনের মৌসুমে ডেঙ্গুর প্রকোপ আরও ব্যাপক হারে বাড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন চিকিৎসকরা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা পরিচালিত প্রাক বর্ষা এডিস সার্ভেতে উঠে এসেছে, ভয়াবহ চিত্র। সার্ভেতে ১৪.৬৮ শতাংশ বাসাবাড়িতে মিলেছে এডিসের লার্ভা। গত বছর (২০২৩) একই সময়ে এই হার ছিল ৪.০৩ শতাংশ। অর্থাৎ গত এক বছরে বাসাবাড়িতে এডিসের ঘনত্ব বেড়েছে সাড়ে তিন গুণেরও বেশি।

সার্ভের এই চিত্রের মিল খুঁজে পাওয়া যায় রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে। প্রায় সব হাসপাতালে প্রতিদিনই বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। শুধু ঢাকা নয়, ঢাকার বাইরে থেকেও আসতে শুরু করেছে রোগী। যাদের অধিকাংশই জটিল অবস্থা নিয়ে রাজধানীর বাইরে থেকে আসছেন বলে জানা গেছে।

প্রসঙ্গত, চলতি মৌসুমে এরই মধ্যে সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৩ হাজারেররও বেশি। আর ডেঙ্গুতে মারা গেছে ৩৭ জন।

আসন্ন বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়বে জানিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘প্রকৃত তথ্য পেতে অপেক্ষা করতে হবে আরও অন্তত এক সপ্তাহ। তবে ডেঙ্গু রোগী বাড়ার আগেই শহর-গ্রাম সর্বত্রই মশার প্রজননক্ষেত্র ধ্বংসের আহ্বান জানিয়েছেন এসব স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।’   রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. নিয়াতুজ্জামান বলেন, তীব্র গরমের মধ্যেও আমাদের হাসাপাতালে ডেঙ্গু রোগী ছিল। সুতরাং বৃষ্টির পর ডেঙ্গুর প্রকোপ যে বাড়বে, সেটা বলাই বাহুল্য। বর্তমানে সারা দেশেই কম-বেশি বৃষ্টি হচ্ছে। তাই সামনের মৌসুমে ডেঙ্গুর প্রকোপ শুধু ঢাকায় বাড়বে না, সারা দেশেই বাড়বে বলে মনে করছি।’    এ প্রসঙ্গে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. বেনজির আহমেদ বলেন, ‘রাজধানীর বাইরে গ্রামে স্মল স্কেলে প্রজেক্ট নিতে হবে। একেক গ্রামে একেক ধরনের পদক্ষেপ নিতে হবে। এর ফলে জানা যাবে, কোনটা বেশি কার্যকর এবং সাশ্রয়ী। তারপর সেটাকে ধরে আগাতে হবে, ব্যবস্থা নিতে হবে। গ্রামের জন্য আগামী ২০ বছরের জন্য একটা পরিকল্পনা তৈরি করা দরকার। ২০ বছর পরে যেনো আমরা এটা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারি।’

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. ফরহাদ মনজুর বলেন, ‘ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রে ৯০ শতাংশ রোগীর চিকিৎসা বাড়িতেই সম্ভব। তবে কারো মধ্যে শারীরীক জটিলতা দেখা দিলে অবহেলা করা যাবে না। চলতি মৌসুমে ডেঙ্গুতে মারা যাওয়া ৩৭ জনের অধিকাংশেরই বিভিন্ন শারীরীক জটিলতা থাকার পরও হাসপাতালে নিতে দেরি করায় তারা প্রাণ হারিয়েছেন।’

এদিকে ডেঙ্গু চিকিৎসায় সারাদেশে সার্বিক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. সামন্ত লাল সেন। এ বিষয়ে আরও উদ্যোগ নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

জেনেভায় ওয়ার্ল্ড হেলথ অ্যাসেম্বলিতে অংশগ্রহণ শেষে দেশে ফিরে এক ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ডেঙ্গু চিকিৎসার জন্য ওষুধপত্র, স্যালাইনসহ হাসপাতালে সার্বিক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ডেঙ্গু মৌসুম শুরু হলে এ বিষয়ে আরও উদ্যোগ নেওয়া হবে।’

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ডেঙ্গু সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, দফতর এবং সিটি করপোরেশনের সমন্বিত উদ্যোগে কাজ করতে হবে। শিগগিরই এ বিষয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার আয়োজন করা হবে বলেও জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. সামন্ত লাল সেন।’