স্বাস্থ্য

ঢাকার ৩২ শতাংশ সরকারি হাসপাতালের টয়লেট ব্যবহার অনুপযোগী: গবেষণা

ঢাকার সরকারি হাসপাতালের ৩২ শতাংশ টয়লেট ব্যবহারেরর অনুপযোগী। ব্যবহার উপযোগী ৬৮ শতাংশ টয়লেটের ৬৭ শতাংশই অপরিচ্ছন্ন। অপরদিকে, বেসরকারি হাসপাতালগুলোর ৯২ শতাংশ টয়লেট ব্যবহার উপযোগী হলেও সেগুলোর মধ্যে ৪৪ শতাংশই সবসময় থাকে অপরিচ্ছন্ন। সম্প্রতি ঢাকার ১২টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে পরিচালিত এক গবেষণায় এমন তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি)।

মঙ্গলবার (১১ জুন) আইসিডিডিআরবি থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

আইসিডিডিআরবির গবেষকগণ ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি সিডনি, অস্ট্রেলিয়া এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের (ডিজিএইচএস) সহযোগিতায় এই গবেষণা পরিচালনা করেন।  

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ব্যবহার উপযোগী ও স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেটের অপ্রাপ্যতা কলেরা ও টাইফয়েডের মতো রোগের জীবাণু ছড়িয়ে গুরুত্বপূর্ণ জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন ব্যবস্থা এবং এর প্রাপ্যতা হাসপাতালগুলোতে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণুগুলো ছড়ানোর আশঙ্কা বেশি থাকে।

গবেষণায় হাসপাতালগুলোর বহির্বিভাগে রোগীদের জন্য টয়লেটের চেয়ে ব্যবহারকারীর অনুপাত বেশি পরিলক্ষিত হয়েছে। দেখা গেছে, সরকারি হাসপাতালগুলোতে প্রতিটি টয়লেটের বিপরীতে ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২১৪ জন। বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে টয়লেট প্রতি ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৯৪ জন। এই অনুপাত ওয়াটার এইড প্রস্তাবিত আদর্শমানের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম।

এদিকে, হাসপাতালের বহির্বিভাগে টয়লেট নির্মাণের ক্ষেত্রে ওয়াটার এইড প্রণীত নির্দেশিকা অনুযায়ী প্রতি ২০-২৫ জন রোগী বা পরিচর্যাকারীর জন্য প্রথম ১০০ জনের ক্ষেত্রে একটি করে টয়লেট এবং অতিরিক্ত প্রতি ৫০ জন রোগী বা পরিচর্যাকারীর জন্য একটি অতিরিক্ত টয়লেট থাকতে হবে। এছাড়া, সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলো বাংলাদেশ জাতীয় ওয়াশ (ওয়াটার, স্যানিটেশন অ্যান্ড হাইজিন) স্ট্যান্ডার্ড ও বাস্তবায়ন নির্দেশিকা ২০২১ অনুযায়ী, অন্তর্বিভাগে প্রতি ছয়টি বেডের জন্য একটি টয়লেটের মানদণ্ড পূরণেও ব্যর্থ হয়েছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, সরকারি হাসপাতালের অন্তর্বিভাগে প্রতিটি টয়লেটের বিপরীতে ব্যবহারকারী ১৭ জন এবং বেসরকারি হাসপাতালে এই সংখ্যা ১৯ জন। ব্যবহারের সুবিধা, সাধারণ ব্যবহার উপযোগিতা ও পরিচ্ছন্নতার অভাব দেখা গেছে। এছাড়া, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য আলাদা টয়লেট সুবিধা পাওয়া গেছে ১ শতাংশেরও কম স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে। মাত্র ৩ শতাংশ হাসপাতালে মাসিকের সময় ব্যবহৃত প্যাড এবং কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য একটি ময়লা ফেলার ঝুঁড়ি ছিল।

গবেষণায় টয়লেটের ব্যবহার উপযোগিতা সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং ইউনিসেফ ব্যবহৃত মানদণ্ড অনুযায়ী। 

প্রাপ্ত গবেষণা সম্পর্কে আইসিডিডিআরবি’র অ্যাসোসিয়েট সায়েন্টিস্ট এবং এই গবেষণার প্রধান তদন্তকারী ডা. মো. নুহু আমিন বলেন, ঢাকার হাসপাতালগুলোর প্রকৃত স্যানিটেশন পরিস্থিতি আমরা যা দেখছি তার চেয়েও খারাপ। কারণ আমরা গবেষণাটি করেছিলাম কোভিড-১৯ মহামারির ঠিক পরে। তখন অনেক হাসপাতাল কোভিড রোগীদের চিকিৎসা থেকে সাধারণ চিকিৎসা সেবার দিকে মনোনিবেশ করেছে। এর ফলে তখন রোগীর প্রবাহ এবং টয়লেট ব্যবহার কমে যেতে পারে।

তিনি বলেন, হাসপাতালে পরিচ্ছন্ন ও কার্যক্ষম টয়লেট বজায় রাখার জন্য বরাদ্দ বাড়াতে হবে। লিঙ্গভিত্তিক প্রয়োজনীয়তা এবং বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের চাহিদার উপর গুরুত্ব দিতে হবে।

বিশ্বব্যাপী নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে বড় শহরের হাসপাতালে টয়লেটের অবস্থার বৈশিষ্ট্য এবং টয়লেটের সাপেক্ষে ব্যবহারকারীর অনুপাত অনুমান করা যায় এমন গবেষণার অভাব রয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের জন্য সবার জন্য মৌলিক স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা দেশগুলোর জন্য অগ্রাধিকার। নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশে এই বিষয়ে গবেষণার ঘাটতি পূরণের সহায়ক হবে এটি। তাছাড়া, ঢাকার হাসপাতালগুলোতে অপর্যাপ্ত স্যানিটেশনের সমস্যা সমাধানের জন্য জাতীয় নীতি পরিবর্তনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।