স্বাস্থ্য

মডার্ন হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুর অভিযোগ, যা বলছেন সংশ্লিষ্টরা

রাজধানীর ধানমন্ডিস্থ আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। স্বজনদের অভিযোগ, তড়িঘড়ি করে অপারেশন করাতে গিয়ে রোগীকে ভুল চিকিৎসা দিয়েছেন ডা. আবিদ হোসাইন। এর পর থেকে অভিযুক্ত চিকিৎসক চেম্বারে বসছেন না।

তারা বলেছেন, রাত ১১টায় অপারেশন করার কথা ছিল, চিকিৎসক তড়িঘড়ি করে রাত ৯টায় রোগীকে ওটিতে নিয়ে যায়। তাছাড়া, অপারেশন হওয়ার পরে ডা. আবিদ হোসাইন আমাদের সঙ্গে কোনো কথা না বলে রোগীকে আইসিইউতে পাঠিয়ে দেন। পরে জেনেছি, অপারেশনের সময় রোগীর কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়েছে।

গতকাল সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) অভিযুক্ত চিকিৎসক, অ্যানেস্থেশিয়ালজিস্ট, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ৩১ আগস্ট ৫১ বছর বয়সী কিডনি রোগী এনামুল হক রিটন মডার্ন হাসপাতালের কিডনি মেডিসিনের চিকিৎসক ডা. নাজনীন মাহমুদের অধীনে ভর্তি হন। ডা. নাজনীন রোগীর সমস্যা শুনে এবং তার পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্ট দেখে তাকে ইউরোলজিস্ট ডা. আবিদ হোসাইনের কাছে রেফার করেন।

ডা. আবিদ হোসাইন রোগী এনামুল হক রিটনকে দেখে তার অপারেশন করার সিদ্ধান্ত রোগীর স্বজনদের জানান। তাদের সম্মতিতে ডা. আবিদ হোসাইন রোগীর অপারেশনের (PCNL) সময় দেন ১ সেপ্টেম্বর রাত ১১টায়।

রোগী রিটনের স্বজনরা জানান, রাত ১১টায় সময় নির্ধারণ করা থাকলেও তিনি তড়িঘড়ি রোগীকে অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেন। নির্দিষ্ট সময়ের আগেই রাত ৯টায় রোগীকে ওটিতে নিয়ে অপারেশন করেন ডা. আবিদ। 

অপারেশন সাকসেসফুল হলেও কিছুক্ষণের মধ্যে (রাত আনুমানিক সাড়ে ৯টার দিকে) রোগীর পালস রেট মারাত্মকভাবে কমে ৪৭-৪৮ নেমে যায় এবং রোগীর বিপি পাওয়া যাচ্ছিল না বলে জানান অপারেশনের সময় থাকা অ্যানেস্থেশিয়ালজিস্ট ডা. সিরাজ।

তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, কোনো রোগীর পালস রেট ৫০ নিচে নেমে গেলে শারীরিক অবস্থা খারাপ বলে ধরা হয়। রোগীর ব্লাড প্রেসার বার বার মাপার পরও পাওয়া যাচ্ছিল না। রোগীর পালস নেই, বিপি নেই, এ অবস্থায় রোগীকে জীবন রক্ষাকারী ইনজেকশন (অ্যাড্রেনালিন, সোডিবাইকার্ব) এবং অক্সিজেন সাপোর্ট সহকারে দ্রুত তাকে ICU-তে নেওয়া হয়। নেওয়ার পথে রোগীকে CPR দেওয়া হয়।

ICU-তে নেওয়ার পরপরই রোগীকে প্রয়োজনীয় সাপোর্ট দেওয়া হয় বলে জানান মডার্ন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অপারেশন ডিরেক্টর ডা. মো. শাহ আলম। তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, রাতেই ঘটনাটা শুনেছি। যে কোনো মানুষের মৃত্যুই মর্মান্তিক, দুঃখজনক। পরদিন (২ সেপ্টেম্বর) সকালেই তদন্ত করে জানতে পারি, অপারেশনের পর রোগীর অবস্থার অবনতি ঘটলে তাকে ICU-তে নিয়ে লাইফ সাপোর্ট দেওয়া হয়। সেখানে কিছুক্ষণের মধ্যে রোগী মারা যান।

অপারেশনের পরপরই রোগীর পালস রেট কমে যাওয়ার পাশাপাশি তার বিপি না পাওয়া প্রসঙ্গে রোগীকে অপারেশন করা চিকিৎসক ডা. আবিদ হোসাইন বলেন, সুব সাধারণ অপারেশন PCNL. অপারেশন সাকসেসফুলও হয়েছে। সম্ভবত, অপারেশনের পরপরই রোগীর কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়েছে। এ কারণে অবস্থার অবনতি ঘটায় দ্রুত তাকে ICU-তে নেওয়া হয়। কিন্তু, দুর্ভাগ্যজনক বিষয় কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের কারণে রোগী মারা যান।

রোগী এনামুল হক রিটনের চিকিৎসায় সার্জন, অ্যানেস্থেশিয়ালজিস্ট, ICU চিকিৎসক বা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কারোরই দায়িত্বে অবহেলা বা গাফিলতি ছিল না বলে দাবি করেন ইউরোলজিস্ট ডা. আবেদ হোসাইন।