স্বাস্থ্য

সফলভাবে আলাদা হয়েছে রিফা-শিফা, অস্ত্রোপচারে ছিলেন ৮০ চিকিৎসক

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে সফলভাবে আলাদা করা হয়েছে জোড়া শিশু রিফা ও শিফাকে। ৮০ জন চিকিৎসক ১০ ঘণ্টাব্যাপী অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে শিশু দুটিকে আলাদা করেছেন।

সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টায় ঢামেক হাসপাতালের সভাকক্ষে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে ঢামেক হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. সাহনুর ইসলাম বলেছেন, চলতি বছরের ১৪ জুন বরগুনার বেতাগী থেকে আসা মাহমুদা জোড়া লাগানো শিশু দুটিকে নিয়ে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ২১ জুন শিশু দুটিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরে মেডিক্যাল বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এক মাস পর আসতে বলা হয়। এক মাস পর শিশু দুটিকে আবার ভর্তি করা হয়। পরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে পুষ্টিজনিত সমস্যার সমাধান দিয়ে আরও এক মাস সময় দেওয়া হয়। এর পর অপারেশনের সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়। নির্ধারিত তারিখে ভর্তির পর তাদের কয়েক দফা অস্ত্রোপচার হয়।

তিনি বলেন, এর পর গত ৭ সেপ্টেম্বর ১০ ঘণ্টাব্যাপী সফল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে শিশু দুটিকে পৃথক করা হয়। পরে দুজনকে আইসিইউতে কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসের দিয়ে রাখা হয়। সেখান থেকে ৮ সেপ্টেম্বর রিফাকে ও ৯ সেপ্টেম্বর শিফাকে ভেন্টিলেটর-মুক্ত করা হয়। এর মধ্যে রিফা সম্পূর্ণ সুস্থ থাকলেও শিফা অসুস্থ ছিল। তার হার্টের সমস্যা দেখা দেয়। পরে তাকে হার্ট ফাউন্ডেশনে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে শিফার পিত্তনালীর সংযোগ খুলে যাওয়ায় আবার অস্ত্রোপচার করা হয়। শিফা বর্তমানে আইসিইউতে আছে। ওদের চিকিৎসার খরচ বহন করেছে সমাজসেবা দপ্তর, আকিজ গ্রুপ, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন কর্তৃপক্ষ, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট, বিএসএমএমইউ, বারডেম, ট্রান্সফিউশন মেডিসিন, ল্যাবরেটরি মেডিসিন এবং নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষক ও তার বাবা-মা।

ডা. সাহনুর বলেন, জন্মগত ত্রুটিগুলো শনাক্তকরণ, প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা, অপারেশনের জন্য প্রস্তুতি; কখনও কখনও এমন অবস্থায় পড়তে হয় দুজনের কাউকেই রক্ষা করা যায় না। আবার কখনও একজনকে রক্ষা করা সম্ভব হয়। শিফার ছিল জন্মগত হৃদরোগ। এমন অবস্থায়ও অস্ত্রোপচার পরবর্তী ফলাফল ভালো ছিল। এখন ওরা ভালো থাকুক সকলের প্রচেষ্টায়।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, এটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। ১৫ জুলাই থেকে যুদ্ধের মধ্যে ছিলাম। এর মধ্যে ডাক্তার সাহনুর এই শিশুদের নিয়ে দৌড়েছেন। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত লম্বা সময় নিয়ে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। সেজন্য ঢাকা মেডিকেলের চিকিৎসকদের ধন্যবাদ।

শিশুদের বাবা বাদশা মিয়া বলেন, হাসপাতালে ভর্তির পর থেকে চিকিৎসকসহ সকলের সহযোগিতা পেয়েছি। সবার কাছ থেকে আর্থিক সাহায্য পেয়েছি। হাসপাতালের পরিচালক স্যারসহ সকলের কাছে আমরা কৃতজ্ঞতা প্রাকাশ করছি।

তিনি আরও বলেন, আমাদের বাড়ি বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলায়। গত বছর ৭ জুন সিজারের মাধ্যমে জোড়া বাচ্চার জন্ম দেয় মাহমুদা। তাদের ঘরে ছয় বছর বয়সী আরেক কন্যা সন্তান আছে।