আন্তর্জাতিক

কেন মোদিকে বুকে জড়িয়ে ধরছে যুক্তরাষ্ট্র?

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে একসময় যুক্তরাষ্ট্র এড়িয়ে চলতো। ‘ধর্মীয় স্বাধীনতার গুরুতর লঙ্ঘনের জন্য’ প্রায় এক দশক যুক্তরাষ্ট্রে তার প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল। ৯ বছর আগে অবশ্য সেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়েছে। এরপর থেকে মোদিকে ধীরে ধীরে বুকে টেনে নিতে শুরু করে ওয়াশিংটন। তবে বাইডেন আমলে সেই মোদিকে আরও ঘনিষ্ঠভাবে বুকে টেনে নেওয়া হয়েছে। 

বুধবার দুদিনের সফরে যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছেছেন নরেন্দ্র মোদি। বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশটির নেতা এই রাষ্ট্রীয় সফরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে দেখা করবেন। এই সফরে দুই দেশের প্রতিরক্ষা, বাণিজ্য ও প্রযুক্তি সম্পর্ককে আরও জোরদার করা হবে এবং দুই দেশকে সংযুক্তকারী ‘পারিবারিক ও বন্ধুত্বের উষ্ণ বন্ধনকে’ আরও দৃঢ় করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। বুধবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দফতরে আন্তর্জাতিক যোগ দিবস উদযাপনেরও নেতৃত্ব দেবেন মোদি। পরের দিন তিনি কংগ্রেসে ভাষণ দেবেন। এটি যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্রদের জন্য সংরক্ষিত সম্মান। একসময় যেই মোদির প্রবেশই নিষিদ্ধ ছিল, সেই মোদিকে এতো নিবিড়ভাবে বুকে টেনে নেওয়ার কারণ কী?

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে ইউনাইটেড স্টেটস ইনস্টিটিউট অফ পিস (ইউএসআইপি) এর দক্ষিণ এশিয়ার সিনিয়র উপদেষ্টা ড্যানিয়েল এস মার্কি বলেছেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে প্রতিযোগিতার বিশ্ব ব্যবস্থায়’ ভারতকে একটি ‘কৌশলগত অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত রাষ্ট্র’ হিসাবে দেখছে ওয়াশিংটন। ভূ-রাজনীতিতে মানবাধিকার নিয়ে উদ্বেগকে ‘এখন পিছনের আসনে বসানো হয়েছে।’

মোদি সরকারের বিরুদ্ধে মানবাধিকার ও ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা লঙ্ঘনের মতো গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। ২০০২ সালে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন মোদি। হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গায় তার ভূমিকা নিয়ে চলতি বছরের শুরুতে বিবিসির তথ্যচিত্রের সম্প্রচার ভারতে বন্ধ করে দিয়েছিল বিজেপি সরকার। চলতি সপ্তাহে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এক বিবৃতিতে, মোদি-বাইডেনের বৈঠকের সময় মানবাধিকারের বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিতে হোয়াইট হাউজের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিল। কিন্তু মঙ্গলবার হোয়াইট হাউজ সাফ জানিয়েছে, বৈঠকে মানবাধিকার ইস্যুতে মোদিকে কোনো কথাই বলবেন না বাইডেন।

গত বছর আউটলুক ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের ৫০ লাখের বেশি অভিবাসী রয়েছে এবং এই সংখ্যা বেড়েই চলছে। দেশটিতে ১৮ লাখ ভারতীয় বংশোদ্ভূত রয়েছেন যারা যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে ভোট দেন। অভিবাসীদের মতোই এই ভোটারদের সংখ্যা বাড়ছে। ভারতীয় ভোটারদের কাছে টানার চেষ্টা সাবেক রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প করেছিলেন। জাতীয়তাবাদী নরেন্দ্র মোদি যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী ভারতীয়দের কাছে বেশ জনপ্রিয়। তাই বর্তমান প্রেসিডেন্ট বাইডেনও চান ভারতীয় ভোটারদের মন জয় করতে। 

যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের একটি বড় উৎপাদনকারী হচ্ছে চীন। আঞ্চলিক বিরোধের কারণে এখন চীনের কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে চাইছে যুক্তরাষ্ট্র। ওয়াশিংটন এখন চাচ্ছে, ভারতে তাদের বিভিন্ন পণ্য উৎপাদনের কারখানা স্থাপন করতে। মার্কিন উৎপাদনকারীদের চীনের পরিবর্তে ভারতে কারখানা স্থাপন করতে উৎসাহ দিচ্ছে বাইডেন প্রশাসন। মোদি সরকারও যুক্তরাষ্ট্রকে মুক্ত হস্তে সেই সুবিধা দিতে যাচ্ছে।

ভারতের সমরাস্ত্রের একটি বড় সরবরাহকারী হচ্ছে রাশিয়া। বাইডেন প্রশাসন চাচ্ছে, রাশিয়াকে ভারতের কাছ থেকে হটিয়ে দিতে। বাইডেন-মোদির বৈঠকে ভারতে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা ও অস্ত্র বিক্রি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এবং বিনিয়োগ সম্পর্কিত বিভিন্ন চুক্তি করা হবে। নিজের অর্থনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য তাই স্বভাবতই, মোদিকে মমতার সঙ্গে বুকে জড়িয়ে ধরতে যাচ্ছেন বাইডেন।