আন্তর্জাতিক

সিঙ্গাপুরে মন্ত্রীর বিরুদ্ধে বিরল দুর্নীতি মামলায় অভিযোগ গঠন

সিঙ্গাপুরে সাবেক পরিবহনমন্ত্রী এস ইশ্বরনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে অভিযোগ গঠন করেছে দেশটির একটি আদালত। এশিয়ার শীর্ষ অর্থনৈতিক কেন্দ্র সিঙ্গাপুরের দুর্নীতি বিরোধী সংস্থা বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) বলেছে, কয়েক দশকের মধ্যে একজন মন্ত্রী জড়িত সবচেয়ে হাই-প্রোফাইল দুর্নীতির মামলায় অভিযোগ গঠন করেছে আদালত।

সিঙ্গাপুরের করাপ্ট প্র্যাকটিসেস ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো (সিপিআইবি) এক বিবৃতিতে বলেছে, গত বছরের জুলাইয়ে গ্রেপ্তার হওয়া সাবেক পরিবহনমন্ত্রী ইশ্বরন, প্রভাবশালী হোটেল ব্যবসায়ী ওং বেং সেংয়ের কাছ থেকে প্রায় ৪ লাখ সিঙ্গাপুর ডলার (প্রায় ৩ লাখ মার্কিন ডলার) কিকব্যাক পেয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ওংয়ের ব্যবসায়িক স্বার্থকে এগিয়ে নিয়ে ইশ্বরন আংশিকভাবে হয়েছেন বলে তারা প্রমাণ পেয়েছেন।

ওং হোটেল প্রপার্টিজ লিমিটেডের (এইচপিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক। এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে এইচপিএলের বিলাসবহুল হোটেল ও রিসোর্ট রয়েছে। সিঙ্গাপুরে ফর্মুলা ওয়ান গ্র্যান্ড প্রিক্স রেসিং ইভেন্ট চালু করতে সহায়তা করেছিলেন ওং। গ্র্যান্ড প্রিক্সের স্টিয়ারিং কমিটির উপদেষ্টা ছিলেন ঈশ্বরান।

সিপিআইবি বলেছে, ইশ্বরানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও ন্যায়বিচারের পথে বাধা সহ মোট ২৭টি অভিযোগ রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে প্রকাশিত তার পদত্যাগপত্রে ঈশ্বরান বলেছেন, তিনি দুর্নীতির অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং নিজেকে নির্দোষ প্রমাণিত করার দিকে মনোনিবেশ করবেন। 

দুর্নীতির দায়ে দোষী সাব্যস্ত হলে সাবেক পরিবহনমন্ত্রী ইশ্বরানের ১ লাখ সিঙ্গাপুর ডলার বা সাত বছরের জেল হতে পারে।

দুর্নীতির তদন্তের অংশ হিসেবে গত বছরের জুলাই মাসে হোটেল ব্যবসায়ী ওংকেও করা হয়েছিল। পরবর্তীতে ইশ্বরন ও ওং- দুজনই জামিন পান। ওং বিরুদ্ধে এখনও চার্জ গঠন করা হয়নি।

রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, দুর্নীতির এই মামলাটি সিঙ্গাপুরকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছে। বিশ্বের বাণিজ্যের অন্যতম কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত এ নগররাষ্ট্র বিশ্বে সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে পরিচিত। দেশটির রাজনৈতিক নেতাদের দুর্নীতি ও কেলেঙ্কারিকে জড়িত হওয়ার ঘটনা বিরল।

সিঙ্গাপুরে বেসামরিক কর্মীদের দুর্নীতিকে নিরুৎসাহিত করার জন্য উচ্চ বেতন দেওয়া হয়।

৬১ বছর বয়সি ইশ্বরান ২০০৬ সালে জুনিয়র মন্ত্রী হিসেবে প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুং লি-এর মন্ত্রিসভায় যোগ দিয়েছিলেন এবং ২০২১ সালের মে মাসে পরিবহনমন্ত্রী হওয়ার আগে সরকারের বাণিজ্য ও যোগাযোগ বিভাগে ছিলেন। 

সিঙ্গাপুরে একজন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে সর্বশেষ দুর্নীতির মামলাটি ১৯৮৬ সালে ছিল। সেসময় জাতীয় উন্নয়ন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগে তদন্ত করা হয়েছিল। তবে আদালতে অভিযোগ আনার আগেই ওই মন্ত্রী মারা যান।

২০২৫ সালে দেশটিতে নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। গত বছরের আগস্ট মাসে প্রধানমন্ত্রী লি স্বীকার করেছিলেন, তার ক্ষমতাসীন পিপলস অ্যাকশন পার্টির (পিএপি) ভাবমূর্তিতে দুর্নীতির ঘটনাটি আঘাত করেছে।

নভেম্বরে পিএপির এক সম্মেলনে ইশ্বরানের মামলার কথা উল্লেখ করে লি বলেছিলেন, পিএপিকে অবশ্যই ‘সিঙ্গাপুরবাসী এবং বিশ্বকে দেখাতে হবে যে অর্ধ শতাব্দী সরকারে থাকার পরেও, পিএপির মান আগের মতোই উচ্চ রয়েছে।’