আন্তর্জাতিক

হামাসের সঙ্গে যুদ্ধে ইসরায়েলের ৬০০ সেনা নিহত

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় হামাসের বিরুদ্ধে পাঁচ মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা চলমান যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ৬০০ ইসরায়েলি সেনা নিহত হয়েছেন। সোমবার (১ এপ্রিল) ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে। খবর আল জাজিরার। 

আইডিএফ জানিয়েছে, গাজায় গত ২৪ ঘণ্টায় অভিযানের সময় আরও এক ইসরায়েলি সেনা নিহত হয়েছেন। ২০ বছর বয়সী ওই সেনার নাম নাদাভ কোহেন। এ নিয়ে গাজায় গত ৭ অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত ৬০০ ইসরায়েলি সেনা নিহত হয়েছেন।

উল্লেখ্য, গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের দাবি, ওই হামলায় প্রায় ১২০০ ইসরায়েলি নিহত ও দুই শতাধিক ইসরায়েলিকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে গেছে হামাস যোদ্ধারা। এর জবাবে সেদিন থেকেই গাজায় বিমান হামলা ও পরে স্থল অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, পাঁচ মাসের বেশি সময় ধরে চলা ইসরায়েলি হামলায় ইতিমধ্যে প্রায় ৩৩ হাজার ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও প্রায় ৮০ হাজার মানুষ।

জাতিসংঘের মতে, গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি এবং ওষুধের তীব্র সংকটের মধ্যে ভূখণ্ডের ৮৫ শতাংশ বাসিন্দা অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছে। সেই সঙ্গে অঞ্চলটির ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। 

জাতিসংঘ জানিয়েছে, দীর্ঘ এ সময় ধরে চলা সংঘাতের কারণে মানবিক সংকটে দিন পার করছেন ফিলিস্তিনিরা। এছাড়াও খাবার, পানি, ওষুধ ও প্রয়োজনীয় মানবিক সহায়তার অভাবে উপত্যকাটির ২৩ লাখেরও বেশি বাসিন্দা চরম ক্ষুধা ও ভয়াবহ অপুষ্টিতে ভুগছেন।

গত সপ্তাহে জাতিসংঘের কর্মকর্তারা সতর্ক করে জানান, গাজায় দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে এবং এটি হবে মানবসৃষ্ট। ইসরায়েল গাজায় আন্তর্জাতিক ত্রাণ সহায়তা প্রবেশে বাধা দেওয়ায় এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।

গত শুক্রবার জাতিসংঘের শীর্ষ আদালত দুর্ভিক্ষ এড়াতে ইসরায়েলকে গাজায় নিরবচ্ছিন্ন ত্রাণ সরবরাহ চালু করার নির্দেশ দিয়েছেন। তার আগে গত সোমবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ ইসলামের পবিত্র রমজান মাসে গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবিতে একটি প্রস্তাব পাস করেছে।

তবে হামাস এই প্রস্তাবকে স্বাগত জানালেও, ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছে এবং ফিলিস্তিনি ছিটমহলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। 

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) গণহত্যার অভিযোগ রয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে আইসিজে একটি অন্তর্বর্তী রুল জারি করে তেল আবিবকে গণহত্যামূলক কাজ বন্ধ করতে এবং গাজার বেসামরিক নাগরিকদের মানবিক সহায়তা প্রদানের গ্যারান্টি দেওয়ার ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেয়।

এদিকে গত শুক্রবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের গণহত্যামূলক যুদ্ধের মধ্যেই তেল আবিবকে নতুন করে কয়েকশ কোটি ডলার মূল্যের বোমা এবং যুদ্ধবিমান সরবরাহ করার অনুমোদন দিয়েছে।

রেডিও তেহরানের অনলাইন সংস্করণ পার্স টুডে বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন অস্ত্র সহায়তা গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যা অভিযানকে জোরদার করবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

নতুন অস্ত্র প্যাকেজে দুই হাজার পাউন্ডের এমকে৮৪ সিরিজের এক হাজার ৮০০ এর বেশি বোমা এবং ৫০০ পাউন্ডের এমকে৮২ সিরিজের ৫০০ বোমা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ইসরায়েল গত কয়েক মাসে গাজায় এ ধরনের ধ্বংসাত্মক বোমা ব্যাপকভাবে ব্যবহার করেছে, ফলে ব্যাপক প্রাণহানি ঘটেছে গাজাবাসীর। এসব বোমা ছাড়াও গাজার ওপর বোমা ফেলতে মার্কিন সরকার ইসরায়েলকে দেবে ২৫টি এ-৩৫এফ মডেলের যুদ্ধবিমান।

মার্কিন সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স বাইডেন প্রশাসনের এই পদক্ষেপকে ‘অশ্লীল’ বলে নিন্দা করেছেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ এক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নেতানিয়াহুর (ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী) কাছে বেসামরিক লোকদের ওপর বোমা হামলা বন্ধ করার অনুরোধ জানাতে পারে না। কেননা পরের দিনই তাকে আরও দুই হাজার পাউন্ডের হাজার হাজার বোমা পাঠায় যা পুরো শহরের ব্লকগুলোকে সমতল করতে পারে। এটা সভ্যতা বিবর্জিত নোংরা কাজ।’

মার্কিন ও ইসরায়েলি সূত্রগুলোর দেয়া তথ্য অনুযায়ী, গাজায় ইসরায়েলের চলমান আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর থেকে মার্কিন সরকার ইসরায়েলকে ২৩০টি কার্গো-বিমান ও ত্রিশটি জাহাজ বোঝাই করে অস্ত্র পাঠিয়েছে।