সেনারা মিয়ানমারের সীমান্ত রাজ্য রাখাইনে আব্দুল্লাহ ও তার প্রতিবেশীদের তাদের বাড়ি থেকে বের করে নিয়ে এসেছিল। বন্দুকের মুখে তাদের ট্রাকে উঠতে বাধ্য করা হয়। চার ঘণ্টা পর ট্রাকটি তাদের সবাইকে নিয়ে একটি সামরিক ঘাঁটিতে যায়। সকালে তাদের সবাইকে একজন সামরিক কমান্ডারের সামনে দাঁড় করানো হয়। কমান্ডার তাদের একটি স্থানীয় বিদ্রোহী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর হয়ে লড়াই করার নির্দেশ দেন।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের তথ্য অনুসারে, ফেব্রুয়ারি থেকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এক হাজার রোহিঙ্গাকে সেনাবাহিনীতে যুক্ত করেছে বিদ্রোহীদের সঙ্গে লড়াইয়ের জন্য।
সেনাবাহিনীর পক্ষে লড়াইয়ে যোগ দেওয়া থেকে বাঁচতে দুই সপ্তাহ ধরে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন আব্দুল্লাহ।
তিনি বলেন, ‘জেনারেল আমাদের বলেছিলেন যে, আরাকান আর্মি (বিদ্রোহী গোষ্ঠী) এলাকায় আক্রমণ করেছে এবং আমাদের নিজেদের রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদেরই। কারণ সেনাবাহিনী যখন আমাদের এলাকায় আক্রমণ করেছিল তখন সাধারণ মানুষ মারা যাচ্ছে।’
মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী রাখাইনে স্থানীয় বৌদ্ধ রাখাইন জাতিগোষ্ঠীর সমন্বয়ে গঠিত আরাকান আর্মির কাছে বেশ কয়েকটি এলাকা হারিয়েছে।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, বিদ্রোহীদের সঙ্গে যুদ্ধে হতাহত এবং যুদ্ধক্ষেত্রে থেকে পালিয়ে যাওয়া সেনাদের শূন্য স্থান পূরণ করতে মিয়ানমার সরকার সামরিক বাহিনীতে তরুণদের যোগদান বাধ্যতামূলক করেছে। সরকারের লক্ষ্য প্রতি মাসে পাঁচ হাজার নতুন নিয়োগ দেওয়া। নতুন নিয়োগ আইনটি শুধুমাত্র মিয়ানমারের নাগরিকদের জন্য প্রযোজ্য হওয়ার কথা ছিল এবং তাত্ত্বিকভাবে রোহিঙ্গাদের জন্য নয়। কারণ রোহিঙ্গাদের অধিকাংশই মুসলিম জাতিগত সংখ্যালঘু। ১৯৮২ সালের একটি আইনের মাধ্যমে তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছিল।
রোহিঙ্গারা জানিয়েছে, তারা যে এলাকায় বাস করে তা কে নিয়ন্ত্রণ করে তার উপর নির্ভর করে উভয় পক্ষই তাদের যুদ্ধের জন্য চাপ দিচ্ছে। কিন্তু অনেকের ভয় তাদের কেবল মানব ঢাল হিসাবে ব্যবহারের জন্য যুদ্ধক্ষেত্রে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে।
আব্দুল্লাহ বলেন, ‘আমি ঘাঁটিতে অসংখ্য মৃতদেহ দেখেছি এবং যে সেনারা ছয় মাস ধরে প্রশিক্ষণ নিয়েছিল তারা যদি যুদ্ধে নিহত হয়, তাহলে আমরা মাত্র ১০ দিনের প্রশিক্ষণের পরে কীভাবে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়াই করব? এটি অসম্ভব। আমি নিশ্চিত ছিলাম যে আমরা লড়াই করে মারা যাব।’
আবদুল্লাহ অন্যদের পালানোর জন্য প্ররোচিত করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তারা ভয় পেয়েছিল যে তাদের পরিবারকে হয়তো এর জন্য শান্তি দেবে সেনাবাহিনী। শেষ পর্যন্ত, রাখাইনের পরিস্থিতির কারণে আব্দুল্লাহ পালিয়ে বাংলাদেশে চলে যান।