গত সপ্তাহে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলিজেন্স (এআই) ভিডিওতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে একটি ট্রেন্ডি জ্যাকেট ও ট্রাউজার পরে মঞ্চে বলিউডি গানের সাথে নাচতে দেখা গেছে। মোদি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ ভিডিওটি শেয়ার করে বলেছেন, ‘নির্বাচনী মৌসুমে এই ধরনের সৃজনশীলতা সত্যিই আনন্দের।’
একই মঞ্চে আরেকটি ভিডিওতে দেখা গেছে, মোদির প্রতিদ্বন্দ্বী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শাড়ির পরে নাচছেন। কিন্তু ব্যাকগ্রাউন্ডে গান নয়, বরং মমতার সেসব বক্তৃতার কিছু অংশ যেখানে তিনি দলছুট নেতাদের সমালোচনা করেছিলেন। রাজ্য পুলিশ ইতিমধ্যে এ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।
কীভাবে প্রযুক্তির ব্যবহার ও অপব্যবহার বাড়ছে এবং বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশটিতে সাধারণ নির্বাচনের সময় নিয়ন্ত্রক ও নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের জন্য কতটা উদ্বেগ তৈরি করছে এসব ভিডিও সেসব প্রতিক্রিয়া নির্দেশ করছে।
এআই ভিডিওগুলো তৈরি করা সহজ। এগুলো মধ্যে প্রায় নিখুঁত ছায়া ও হাতের নড়াচড়া রয়েছে। এসব ভিডিও কখনও কখনও প্রযুক্তি শিক্ষিত ব্যক্তিদেরও বিভ্রান্ত করতে পারে। কিন্তু এমন একটি দেশে এগুলোর ঝুঁকি অনেক বেশি যেখানে ১৪০ কোটি মানুষের মধ্যে অনেককে প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জ করা হয় এবং যেখানে প্ররোচনামূলক সামগ্রী সহজেই সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে।
জানুয়ারিতে প্রকাশিত বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের সমীক্ষা অনুসারে, ভারতে পরবর্তী দুই বছর সংক্রামক রোগ বা অবৈধ অর্থনৈতিক কার্যকলাপের তুলনায় ভুল তথ্য অনেক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।
নয়াদিল্লি-ভিত্তিক পরামর্শদাতা সাগর বিষ্ণোই বলেন, ‘ভারত ইতিমধ্যে ভুল তথ্য ছড়ানোর একটি বড় ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এআই দিয়ে তৈরি ছবি এই ঝুঁকি ১০০ গুণ বেশি গতিতে ছড়িয়ে পড়তে পারে।’
তিনি বলেন, ‘অধিকাংশ প্রবীণ প্রযুক্তি সম্পর্কে জ্ঞানী নয়, তারা ক্রমশ এআই ভিডিওগুলোর মাধ্যমে মিথ্যা তথ্যের ফাঁদে পড়ে যায়। এগুলো সম্প্রদায়, বর্ণ বা ধর্মের বিরুদ্ধে ঘৃণার জন্ম দেওয়ার মতো গুরুতর পরিণতি ঘটাতে পারে।’
ভারতের নির্বাচন কমিশন গত সপ্তাহে রাজনৈতিক দলগুলোকে ভুল তথ্য ছড়ানোর জন্য এআই ব্যবহারের বিরুদ্ধে সতর্ক করেছে। জালিয়াতি, গুজব প্রচার এবং শত্রুতাসহ অপরাধের জন্য তিন বছর পর্যন্ত জেলের শাস্তি রয়েছে এমন বিধানগুলো ব্যাপক হারে প্রচার করছে।
নয়াদিল্লির একজন ঊর্ধ্বতন জাতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, কর্তৃপক্ষ ভুয়া খবরের কারণে অস্থিরতার দিকে নিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে উদ্বিগ্ন। এআই সরঞ্জামের সহজলভ্যতা এই ধরনের ভুয়া খবর তৈরি করা সম্ভব করে তোলে, বিশেষ করে নির্বাচনের সময়। এটি মোকাবেলা করা কঠিন।