আন্তর্জাতিক

মোদির শপথ আজ, প্রস্তুত দিল্লি

টানা তৃতীয় মেয়াদে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে যাচ্ছেন নরেন্দ্র মোদি। বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবেন তিনি। আজ রোববার (৯ জুন) সন্ধ্যায় নয়াদিল্লিতে রাষ্ট্রপতি ভবনে তার শপথ অনুষ্ঠান হবে। একই দিন শপথ নেবেন তার মন্ত্রিসভার সদস্যরাও। 

হিন্দুস্তান টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, নরেন্দ্র মোদিকে এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। শনিবার (৮ জুন) রাষ্ট্রপতি ভবনের এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘ভারতের সংবিধানের ৭৫(১) অনুচ্ছেদের আওতায় রাষ্ট্রপতি তার ক্ষমতাবলে নরেন্দ্র মোদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত করেছেন।’

প্রজ্ঞাপনে আরো বলা হয়, ‘রাষ্ট্রপতি ভবনে আজ সন্ধ্যা ৭টা ১৫ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রিপরিষদের অন্য সদস্যদের দপ্তর ও গোপনীয়তার শপথ পড়াবেন রাষ্ট্রপতি।’

শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান উপলক্ষে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে দিল্লিতে। রাজধানীতে হাই অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। নরেন্দ্র মোদির শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সাত দেশের রাষ্ট্র নেতারা। অন্যরা হলেন—শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংঘে, মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জু, সিসিলিসের ভাইস প্রেসিডেন্ট আহমেদ আফিফ, মরিশাসের প্রধানমন্ত্রী প্রবীন্দ কুমার জুগনাথ, নেপালের প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কমল দাহাল প্রচন্ড এবং ভুটানের প্রধানমন্ত্রী সেরিং তোবগে। এছাড়াও এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে ৮ হাজারের বেশি বিশিষ্টজনকে।

মোদির শপথ উপলক্ষে অনুষ্ঠানস্থল ও আশেপাশে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পাঁচটি আধাসামরিক সংস্থাসহ, এনএসজি কমান্ডো, ড্রোন এবং স্নাইপার নিয়ে বহুস্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে। শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান চলার সময় যেকোনো অপরাধমূলক বা সন্ত্রাসী হুমকি রোধ করতে দিল্লিতে নো-ফ্লাই জোন ঘোষণা করা হয়েছে। এই বিধিনিষেধ ৯ থেকে ১০ জুন পর্যন্ত কার্যকর থাকবে।

বিদেশি অতিথিদের হোটেলে বিশেষ প্রোটোকলসহ বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। বিশেষ নিরাপত্তার আওতায় রয়েছে লীলা, তাজ, আইটিসি মৌর্য, ক্ল্যারিজেস এবং ওবেরয়ের মতো নামি হোটেলগুলো। অতিথিরা হোটেল থেকে অনুষ্ঠানস্থলে যাবেন নির্দিষ্ট পথে। এ সময় বিভিন্ন রাস্তা বন্ধ এবং ডাইভারশন করা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ছাড়া সীমান্তেও শুরু হয়েছে কড়া নজরদারি।

দ্য ইন্ডিয়ার এক্সপ্রেসের মতে, নরেন্দ্র মোদির নতুন মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে কতজন মন্ত্রী শপথ নেবেন সে বিষয়ে এখনও স্পষ্ট কোনো ইঙ্গিত নেই। তবে কমপক্ষে ৩০ সদস্যের শক্তিশালী মন্ত্রিসভা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এদিকে লোকসভার বিরোধীদলীয় নেতার আসনে বসতে যাচ্ছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। গতকাল এ পদে রাহুলের নাম অনুমোদন করে কংগ্রেসের সর্বোচ্চ নির্বাহী ফোরাম কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটি (সিডব্লিউসি)। রাহুল এ দায়িত্ব নিলে এক দশক পর বিরোধীদলীয় নেতা পাবে ভারতীয় পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ।

২০১৪ সাল থেকে ভারতীয় পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ বিরোধীদলীয় নেতাশূন্য ছিল। কারণ, লোকসভায় বিরোধী নেতা হওয়ার জন্য কোনো একক দলকে ৫৪৩ আসনের অন্তত ১০ শতাংশ পেতে হয়। কিন্তু গত দুই লোকসভার নির্বাচনে কংগ্রেস বা অন্য কোনো দল তা পূরণ করতে পারেনি। এবার কংগ্রেস ৯৯টি আসন পাওয়ায় সেই খরা দূর করতে পারে। 

এবারের নির্বাচনে উত্তর প্রদেশের রায়বেরেলি ও নিজের কেন্দ্র কেরালার ওয়ানাড় থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন রাহুল গান্ধী। উভয় আসনেই বিপুল ভোটে বিজয়ী হন কংগ্রেসের সাবেক এ সভাপতি।

ভারতের ১৮তম লোকসভা নির্বাচনে ৫৪৩ আসনের মধ্যে বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (এনডিএ) জিতেছে ২৯৩টি। ২৩২ আসন পেয়েছে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টাল ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স (ইন্ডিয়া)। লোকসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে প্রয়োজন ২৭২ আসন। এনডিএ জোটগতভাবে এর চেয়ে বেশি আসন পেলেও এবার দল হিসেবে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারায় বিজেপি। তারা দল হিসেবে পেয়েছে ২৪০ আসন। ফলে টানা তৃতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসতে নরেন্দ্র মোদিকে এবার জোটের শরিকদের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে।