আন্তর্জাতিক

ইসরায়েলকে ২০০০ পাউন্ডের হাজার হাজার বোমা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র

গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে বাইডেন প্রশাসন ইসরায়েলে বিপুল সংখ্যক যুদ্ধাস্ত্র পাঠিয়েছে। যার মধ্যে ব্যাপক বিধ্বংসী ২০০০ পাউন্ডের ১০ হাজারেরও বেশি বোমা এবং হাজার হাজার হেলফায়ার ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। অস্ত্র চালানের একটি আপডেট তালিকার ব্রিফিংয়ে এই তথ্য জানিয়েছেন দুই মার্কিন কর্মকর্তা।

শনিবার (২৯ জুন) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। 

অস্ত্র চালানের বিষয়ে প্রকাশ্যে কথা বলার অনুমোদন নেই এমন কর্মকর্তারা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, গত অক্টোবরে গাজা যুদ্ধের শুরু এবং সাম্প্রতিক দিনগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলে কমপক্ষে ১৪ হাজারটি ২০০০ পাউন্ডের এমকে-৮৪ বোমা, সাড়ে ৬ হাজার রাউন্ড ৫০০ পাউন্ডের বোমা, ৩০০০ হেলফায়ার প্রিসিশন গাইডেড এয়ার টু গ্রাউন্ড মিসাইল, এক হাজার বাংকার বাস্টার বোমা, ২ হাজার ৬০০টি এয়ার ড্রপড বোমা এবং অন্যান্য অস্ত্র পাঠিয়েছে।

যদিও কর্মকর্তারা বলেননি কবে এসব চালান করা হয়েছে, তবে অস্ত্রের মোট সংখ্যা থেকে এটি স্পষ্ট যে, অস্ত্র সরবরাহ সীমিত করার আন্তর্জাতিক আহ্বান এবং সম্প্রতি মার্কিন প্রশাসনের ইসরায়েলের জন্য শক্তিশালী বোমার একটি চালান স্থগিত করার সিদ্ধান্ত সত্ত্বেও মিত্রদের জন্য মার্কিন সামরিক সহায়তা সরবরাহে উল্লেখযোগ্য কোনো বিরতি হয়নি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুদ্ধাস্ত্র চালানের বিষয়বস্তু গাজায় এই আট মাসের তীব্র সামরিক অভিযানে ব্যবহৃত সরবরাহ পুনরায় পূরণ করতে ইসরায়েলের কী প্রয়োজন হবে, তার একটা ধারণা দিচ্ছে।

সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের অস্ত্র বিশেষজ্ঞ টম কারাকো বলেছেন, ‘যদিও একটি বড় সংঘাতে এই সংখ্যক অস্ত্র তুলনামূলকভাবে দ্রুতই শেষ হয়ে যেতে পারে, তবে এই তালিকাটি স্পষ্টভাবে ইসরায়েলি মিত্রদের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনকেই প্রতিফলিত করে।’

তিনি আরো বলেন, ‘ তালিকাভুক্ত অস্ত্রশস্ত্রগুলো ইসরায়েল হামাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বা হিজবুল্লাহর সঙ্গে সম্ভাব্য সংঘর্ষে ব্যবহার করবে।’ সরবরাহকৃত অস্ত্রের এই সংখ্যা নিয়ে করা প্রতিবেদনে গাজা যুদ্ধের শুরু থেকে ইসরায়েলে পাঠানো অস্ত্রের সর্বশেষ ও বিস্তৃত পরিসংখ্যান রয়েছে।

ইসরায়েল ও ইরান-সমর্থিত হিজবুল্লাহ গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে সীমান্তে গুলি বিনিময় করছে। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে উভয় পক্ষের মধ্যে সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

রয়টার্স জানিয়েছে, অস্ত্রের চালানের বিষয়ে হোয়াইট হাউস কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। ওয়াশিংটনে ইসরায়েলের দূতাবাসও কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

মার্কিন কর্মকর্তাদের একজন বলেছেন, গাজা সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলে পাঠানো অস্ত্রের একটি বড় তালিকার অংশ এই চালান। বাইডেন প্রশাসনের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বুধবার সাংবাদিকদের বলেছেন, ওয়াশিংটন ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলে ৬.৫ বিলিয়ন মূল্যের অস্ত্র পাঠিয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দাবি করেছেন, ওয়াশিংটন অস্ত্র সরবরাহ আটকে রেখেছে। এ কথা বারবার অস্বীকার করেছেন মার্কিন কর্মকর্তারা। তবে অস্ত্রের চালান পাঠানোয় কিছু ‘বাধা’র কথা স্বীকার করেছে তারা। বাইডেন প্রশাসন গাজার ঘনবসতিপূর্ণ রাফাহ এলাকায় শক্তিশালী বোমার পরিণতির কথা ভেবে গত মে মাসে ২০০০ পাউন্ড বোমার একটি চালান স্থগিত করেছিলেন। তবে সব অস্ত্র সরবরাহ অব্যাহত থাকবে বলে মার্কিন কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন।

গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার সামরিক অভিযানের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ক্ষোভ বেড়েছে। কারণ গাজার স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, গত ৭ অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত চলমান ইসরায়েলি হামলায় নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা ৩৭ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। ৮ মাসের বেশি সময় ধরে চলা এই যুদ্ধে ফিলিস্তিটি ভূখণ্ডটি কার্যত ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র তার দীর্ঘদিনের মিত্র ইসরায়েলকে ৩.৮ বিলিয়ন ডলারের বার্ষিক সামরিক সহায়তা দিয়ে থাকে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইসরায়েলকে সতর্ক করে অনেকবার বলেছেন যে, গাজা যুদ্ধে বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা ও আরও বেশি মানবিক সহায়তা প্রবেশের সুবিধা দিতে ইসরায়েল ব্যর্থ হলে তিনি সামরিক সহায়তায় শর্ত স্থাপন করবেন। তবে গত মাসে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে একটি সামরিক চালান স্থগিত করার বাইরে তিনি আর কোনো পদক্ষেপ নেননি।

হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইসরায়েলের প্রতি বাইডেনের আকুন্ঠ সমর্থন রাজনৈতিক দায় হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। বিশেষ করে তরুণ ডেমোক্র্যাটদের কাছে জনপ্রিয়তা হারিয়েছেন; বাইডেন এ বছর মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পুনরায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।