আন্তর্জাতিক

শেখ হাসিনার দেশত্যাগ, যা বলছে বিশ্ব সংবাদমাধ্যম

শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে তীব্র গণঅভ্যুত্থানের মুখে সোমবার (৫ আগস্ট) দুপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে তার বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে দেশ ছেড়েছেন। সোমবার এ নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম খবর প্রকাশ করেছে।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বরাত দিয়ে দ্য গার্ডিয়ান বলছে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন এবং দেশ ত্যাগ করেছেন। ৫০ বছরেরও বেশি সময় আগে জন্ম নেওয়া দক্ষিণ এশিয়ার দেশটিতে কিছু ভয়াবহ সহিংসতার মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর দেশত্যাগের পর সেনাবাহিনী ক্ষমতা গ্রহণ করেছে।

আল জাজিরা বাংলাদেশি গণমাধ্যমের বরাতে জানিয়েছে, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন এবং দেশ ছেড়েছেন। এর কিছুক্ষণ পর সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, শেখ হাসিনার একজন ব্যক্তিগত সহযোগী আল জাজিরাকে জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারে দেশ ছাড়ার পর প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসস্থান গণভবনে হাজারো মানুষ ঢুকে পড়ে।

অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) নিজস্ব সূত্রের বরাতে বলছে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার পদত্যাগ করেছেন। হাজার হাজার বিক্ষোভকারী সামরিক কারফিউ অমান্য করে তার ১৫ বছরের ক্ষমতার অবসান ঘটিয়েছেন এবং তার সরকারি বাসভবনে হামলা করেছে।

স্থানীয় মিডিয়ার বরাতে এপি আরও জানিয়েছে, শেখ হাসিনাকে তার বোনের সঙ্গে একটি সামরিক হেলিকপ্টারে আরোহনের বিষয়টি দেখানোর পরপরই বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের বিষয়ে রাষ্ট্রপতির নির্দেশনা চাওয়ার পরিকল্পনা ঘোষণা করেন।

‘বিক্ষোভের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন’ এমন শিরোনাম দিয়ে বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কয়েক সপ্তাহের প্রচণ্ড সরকারবিরোধী বিক্ষোভের পর পদত্যাগ করেছেন। কারণ, হাজার হাজার মানুষ পদত্যাগের দাবিতে তার সরকারি বাসভবনে হামলা চালায়।

৭৬ বছর বয়সী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যেই একটি ‘নিরাপদ স্থানে’ যাওয়ার জন্য দেশ ছেড়েছেন। তার একজন ব্যক্তিগত উপদেষ্টা বলেছেন, জনতা তার সরকারি বাসভবনে পৌঁছানোর আগেই তিনি দেশত্যাগ করেছেন।

বোনকে সঙ্গে নিয়ে শেখ হাসিনার দেশত্যাগের খবর প্রকাশ করা হয়েছে এএফপিতে। সংবাদমাধ্যমটি বলছে, নিরাপদ আশ্রয়ের উদ্দেশে তিনি বাংলাদেশ ছেড়েছেন। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের বরাতে এএফপি বলেছে, হাজারো মানুষ গণভবনে ঢুকে পড়েছে।

রয়টার্স বলছে, শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়েছেন। বাংলাদেশও ছেড়ে গেছেন। সিএনএননিউজ ১৮ এর বরাত দিয়ে অপর খবরে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার ঢাকা থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় শহর আগরতলায় অবতরণ করেন। 

ভারতীয় গোয়েন্দা সূত্রের বরাত দিয়ে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারত হাসিনাকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা প্রস্তাব দিতে প্রস্তুত।

ভারতীয় সংবাদপত্র আনন্দবাজারের খবরে বলা হয়, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইস্তফা দিয়েছেন। বোন রেহানাকে নিয়ে তিনি ঢাকার বাসভবন তথা ‘গণভবন’ ছেড়েছেন। তাকে কপ্টারে করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে নিরাপদ আশ্রয়ের উদ্দেশে। বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টারটি উড়িয়ে নিয়ে গিয়েছেন এয়ার কমোডর আব্বাস। তিনি ১০১ স্কোয়াড্রনের সদস্য। দিল্লিতে যেতে পারেন হাসিনা। সেখান থেকে যেতে পারেন লন্ডনে।

বাংলাদেশে সেনাবাহিনীর অধীনে অন্তর্বর্তী তদারকি সরকার গঠিত হচ্ছে। একটি সূত্রের দাবি, তার আগে বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর তরফে প্রধানমন্ত্রী হাসিনাকে সময় বেঁধে দেওয়া হয় ইস্তফা দেওয়ার জন্য। ৪৫ মিনিট সময় তাঁকে দেওয়া হয়েছিল বলে একটি সূত্রের দাবি। তবে, অন্য একাধিক সূত্রের দাবি, পুরো বিষয়টিই হয়েছে সেনাবাহিনী এবং দিল্লির সঙ্গে আলোচনার সাপেক্ষে। তারপরেই হাসিনা ইস্তফা দিয়েছেন।

সংবাদপত্রটির অপর খবরে বলা হয়েছে, পড়ুয়াদের বিক্ষোভ-আন্দোলন দমন করতে লাঠি-গুলি-হুঙ্কার— প্রায় সব অস্ত্রই ব্যবহার করেছিল আওয়ামী লীগ সরকার। কিন্তু, শেষ রক্ষা হলো না। গণবিক্ষোভের জেরে শুধু প্রধানমন্ত্রিত্ব থেকে ইস্তফা দেওয়াই নয়, বাংলাদেশও ছাড়তে হলো শেখ হাসিনাকে। প্রসঙ্গত, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নিজের বাসভবনে সপরিবার শেখ মুজিবুর রহমানকে খুন করা হয়েছিল। আর কাকতালীয়ভাবে প্রায় ৫০ বছর পরের এক আগস্টে দেশ ছাড়তে হলো মুজিবকন্যা হাসিনাকে।