ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের জ্যেষ্ঠ নেতা ও লোকসভার সদস্য শশী থারুর বলেছেন, গণবিক্ষোভের মুখে বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আশ্রয় না দিলে বিষয়টি ভারতের জন্য লজ্জাজনক হতো। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার নিয়ে ভারতের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব মন্তব্য করেন প্রবীণ এই রাজনীতিবিদ।
বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের দীর্ঘ দিনের ‘ঘনিষ্ঠ ও বন্ধুত্বপূর্ণ’ সম্পর্কের কথা তুলে ধরে শশী থারুর বলেন, ‘এই সম্পর্কের মৌলিক প্রতিশ্রুতি হচ্ছে, বাংলাদেশের জনগণের মঙ্গল; দ্বিতীয়ত বাংলাদেশ রাষ্ট্র ও এরপর কোনো বাংলাদেশি নেতা। আমরা বাংলাদেশের জনগণের সাথে আছি। আমরা ১৯৭১ সালে তাদের সাথে ছিলাম। এমনকি বাংলাদেশে যখন বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাবের সরকার ছিল না, তখনও আমরা আমাদের সম্পর্ককে সমানভাবে বজায় রাখতে পেরেছি। ভবিষ্যতেও এই সম্পর্কের কোনো অবনতি হওয়া উচিত নয়।’
নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী এবং গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটি নয়াদিল্লির জন্য উদ্বেগের কারণ নয়। আমি মুহাম্মদ ইউনূসকে ব্যক্তিগতভাবে চিনি, তিনি একজন অত্যন্ত সম্মানিত ব্যক্তিত্ব। আমি মনে করি তাকে জামায়াতে ইসলামি বা পাকিস্তানি আইএসআই-এর ঘনিষ্ঠ হিসেবে না দেখে কিছুটা ওয়াশিংটনপন্থি হিসেবে দেখা উচিত। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা কেউ পরিচিত নন। কিন্তু মনে হচ্ছে না এরা কেউই ভারতের জন্য উদ্বেগের।’
শশী থারুর বলেন, ‘ভারতের জন্য সবচেয়ে বড় উদ্বেগ যেটা তা হলো, পাকিস্তান ও চীন ঘোলা পানিতে মাছ ধরবে কিনা।’ তিনি বলেন, ‘এ ধরনের প্রেক্ষাপটে সবসময় একটি সম্ভাবনা থাকে যে আন্দোলনের সময় সহিংসতার কিছু আপত্তিকর ঘটনায় পাকিস্তানি আইএসআইয়ের হাত থাকতে পারে। চীনা তাদের প্রভাব বৃদ্ধির সুযোগ হিসেবে দেখতে পারে। তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর মুহাম্মদ ইউনূস আইনশৃঙ্খলা ও সংখ্যালঘুদের সুরক্ষায় প্রাথমিক যে বিবৃতি দিয়েছেন, তাতে ভারতের উদ্বেগের কোনো কারণ নেই।
ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর শেখ হাসিনাকে ভারতে আশ্রয় দেওয়ায় নরেদ্র মোদি সরকারের প্রশংসা করেন শশী থারুর। কংগ্রেসের জ্যেষ্ঠ এই নেতা বলেন, ‘আমরা যদি তাকে সাহায্য না করতাম, তাহলে এটা ভারতের জন্য লজ্জাজনক হতো। আমাদের বন্ধুর সাথে খারাপ ব্যবহার করলে কেউ আমাদের বন্ধু হতে চাইত না। শেখ হাসিনা ভারতের বন্ধু এবং ভারত তার বন্ধু। এবং যখন একজন বন্ধু সমস্যায় পড়েছে, আপনি তাকে সাহায্য করার আগে দুবার ভাববেন না। ভারত সরকার শেখ হাসিনাকে এদেশে নিয়ে এসে এবং তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করে সঠিক কাজটি করেছে।’
শশী থারুর বলেন, ‘শেখ হাসিনা কতদিন ভারতে থাকতে চান তা নিয়ে আমাদের উদ্বিগ্ন না হওয়াই ভালো। আপনি অতিথিকে ডেকে এনে কখন তিনি কখন বাড়ি ফিরবেন, তা জিজ্ঞেস করতে পারেন না। আমাদের গর্বিত হওয়া উচিত যে, আমরা একজন বন্ধুর পাশে দাঁড়িয়েছি যখন তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বিপদে পড়েছিল।’
সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিষয়ে ভারত সরকারের উদ্বেগ আরো জোরদার করা উচিত কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে পরস্পরবিরোধী প্রতিবেদন আসছে। অবশ্যই কিছু হামলা হয়েছে, এটা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না, কারোরই অস্বীকার করা উচিত নয়। এটা একটা সত্য। একই সাথে, এটাও শোনা যাচ্ছে যে, বাংলাদেশি মুসলমানরা হিন্দুদের ঘরবাড়ি ও মন্দির পাহারা দিচ্ছে। তাই সব খারাপ খবরের সময়ও কিছুটা ভালো খবর রয়েছে।’