ইউক্রেনের শীর্ষ কমান্ডার অলেক্সান্ডার সিরক্সি দাবি করেছেন, তার বাহিনী রাশিয়ার কুরস্কের অঞ্চলের অন্তত ১ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে।
মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কিয়েভের এই দাবি যদি সঠিক হয় তাহলে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে পূর্ণ-মাত্রায় রুশ আক্রমণ শুরু করার পর থেকে এটিই রুশ ভূখণ্ডে ইউক্রেনীয় সেনাদের সবচেয়ে গভীর এবং সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অনুপ্রবেশ।
কমান্ডার অলেক্সান্ডার সিরস্কি বলেছেন, সাতদিন আগে রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে আক্রমণাত্মক অভিযান শুরু করে ইউক্রেন। এই অভিযান এখনো অব্যাহত রয়েছে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, রাশিয়া অন্যদের দুয়ারে যুদ্ধ এনেছিল। এখন এই যুদ্ধ আবার রাশিয়ায় ফিরে যাচ্ছে।
এদিকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এই আক্রমণকে ‘বড় ধরনের উসকানি’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি রুশ ভূখণ্ড থেকে ‘শত্রুকে লাথি মেরে তাড়িয়ে দিতে’ রাশিয়ার সামরিক বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন।
নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে এই অঞ্চল থেকে ইতিমধ্যে ৭৬ হাজার বেসামরিক মানুষকে সরিয়ে নিয়েছে রাশিয়া। গতকালও ৫৯ হাজার মানুষকে ঘরবাড়ি ছাড়তে বলা হয়েছে।
কুরস্কের গভর্নর আলেক্সেই স্মিরনভও বলেছেন, এ অঞ্চলে প্রায় ২৮টি গ্রাম ইউক্রেনীয় বাহিনীর হাতে পড়েছে, ১২ জন বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছেন। এখানের পরিস্থিতি ‘খুব কঠিন’ বলে উল্লেখ করেন তিনি।
গত মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) হঠাৎ করেই সীমান্তবর্তী কুরস্ক অঞ্চলে আক্রমণ শুরু করে ইউক্রেনীয় সেনারা। এখন তারা রাশিয়ার ভেতরে ৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত অগ্রসর হয়েছে।
ইউক্রেনের পক্ষে বলা হচ্ছে, রাশিয়ার ভেতরে এই অভিযান ইউক্রেনীয় সেনাদের মনোবল বাড়িয়ে দিয়েছে। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, কৌশলটি ইউক্রেনের জন্য নতুন বিপদ ডেকে আনতে পারে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ব্রিটিশ সামরিক সূত্র বিবিসিকে বলেছেন, ‘ইউক্রেনের এই অভিযানের ফলে মস্কো এতটাই ক্ষুব্ধ হয়ে উঠতে পারে যে, ইউক্রেনে বেসামরিক মানুষ ও অবকাঠামোর উপর তাদের হামলা দ্বিগুণ করতে পারে।’
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সীমান্ত অঞ্চলের পরিস্থিতি নিয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে সোমবার একটি বৈঠক করেছেন। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সম্প্রচারিত হওয়া বৈঠকে তিনি বলেন, ‘শত্রুর সুস্পষ্ট লক্ষ্যগুলোর মধ্যে একটি হলো বিভেদ, কলহ, মানুষকে ভয় দেখানো, রাশিয়ান সমাজের ঐক্য ও সংহতি নষ্ট করা। এখন রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রধান কাজ হলো শত্রুকে আমাদের এলাকা থেকে তাড়িয়ে দেওয়া।’
বৈঠকে প্রেসিডেন্ট পুতিনকে কুরস্কের গভর্নর স্মিরনভ জানিয়েছেন, এ পর্যন্ত ১ লাখ ২১ হাজার রুশ নাগরিককে অঞ্চলটি থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তবে প্রায় ২ হাজার রুশ নাগরিক এই অঞ্চলে ইউক্রেনীয় বাহিনীর দখলকৃত এলাকায় রয়ে গেছে। তাদের ভাগ্যে কী ঘটেছে তা এখনো অজানা।
এদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি সোমবার রাতে এক টেলিভিশন ভাষণে বলেছেন, ‘পুতিন যদি এতো খারাপভাবে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে চান, তাহলে রাশিয়াকে অবশ্যই শান্তি স্থাপনে বাধ্য করতে হবে।’
জেলেনস্কি বলেন, ‘রাশিয়া অন্যদের জন্য যুদ্ধ এনেছিল। এটি এখন রাশিয়ায় ফিরে আসছে। ইউক্রেন সবসময় শুধু শান্তি চেয়েছে। আমরা অবশ্যই শান্তি নিশ্চিত করবো।’
ইউক্রেনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, হাজার হাজার সৈন্য এই অভিযানে নিয়োজিত রয়েছেন। রাশিয়ান সীমান্ত রক্ষীদের প্রাথমিকভাবে যে ছোট অনুপ্রবেশের কথা বলা হয়েছিল এই সংখ্যা তার চেয়েও অনেক বেশি।
ইউক্রেনের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, তাদের লক্ষ্য হলো সর্বোচ্চ ক্ষয়ক্ষতি করা এবং রাশিয়ার পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করা।
সোমবার কিয়েভে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির সাথে একটি বৈঠকের সময় মার্কিন সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম আন্তঃসীমান্ত অভিযানকে ‘সাহসী’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি ইউক্রেনকে প্রয়োজনীয় অস্ত্র সরবরাহের জন্য বাইডেন প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
ইউক্রেনীয় সেনারা কিভাবে কুরস্ক অঞ্চলে প্রবেশ করতে পেরেছে, রাশিয়ার কেউ কেউ তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। রাশিয়ার সামরিক বিষয়ক ব্লগার ইউরি পোদোলিয়াকা পরিস্থিতিকে ‘উদ্বেগজনক’ বলে অভিহিত করেছেন।
রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বলেছেন, রুশ সশস্ত্র বাহিনীর কঠোর প্রতিক্রিয়া জানাতে ‘সময় লাগবে না’।