কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী আবারও ভারত-চীন সীমান্ত ইস্যুতে নরেন্দ্র মোদির সরকারের কঠোর সমালোচনা করেছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন, লাদাখে রাজধানী নয়াদিল্লির সমান জায়গা দখলে নিয়ে নিয়েছে চীনা সেনারা।প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি চীনকে ভালোভাবে সামাল দিতে পারেননি।
হিন্দুস্তান টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, ভারতের বিরোধীদলীয় নেতা ও ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সাবেক সভাপতি রাহুল গান্ধী চারদিনের সফরে যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) ওয়াশিংটনের মর্যাদাপূর্ণ জাতীয় প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপ করেন রাহুল গান্ধী। সেখানেই এক প্রশ্নের জবাবে এমন মন্তব্য করেন তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে কংগ্রেস নেতা রাহুল বলেন, ‘আচ্ছা, যদি আপনারা বলেন যে আমাদের ভূখণ্ডের ৪ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকায় চীনা সেনা থাকার বিষয়টি ভালো, তাহলে হয়তো তিনি ভালোভাবেই পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছেন। লাদাখে দিল্লির সমান ভূমি দখল করে নিয়েছি চীনা সেনারা। আমি মনে করি এটি একটি বিপর্যয়। মিডিয়া এগুলো নিয়ে লিখতে পছন্দ করে না।’
এ সময় পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে তিনি বলেন, ‘কোনো প্রতিবেশী দেশ যদি আপনাদের ভূখণ্ডের ৪ হাজার বর্গকিলোমিটার দখল করে নেয় তাহলে আমেরিকা কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাবে? কোনো প্রেসিডেন্ট কি শুধু এই বলে দায় এড়াতে পারবেন যে তিনি ভালোভাবে সামাল দিয়েছেন? তাই আমি মনে করি না মোদি চীনকে ভালোভাবে সামাল দিয়েছেন। আমার মনে হয় আমাদের অঞ্চলে চীনা সেনাদের থাকার কোনো কারণ নেই।’
হিন্দুস্তান টাইমস জানিয়েছে, কংগ্রেস নেতা গত বছরও একই রকম অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী মোদিকে লাদাখে ভারত-চীন সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে বিরোধীদের কাছে মিথ্যা বলার জন্য অভিযুক্ত করেছিলেন।
গত বছর কারগিলে এক জনসভায় রাহুল গান্ধী বলেছিলেন, ‘চীন ভারতের ভূমি কেড়ে নিয়েছে... হাজার হাজার বর্গকিমি...এবং বিদ্রুপের বিষয় হলো ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী বিরোধীদের সাথে বৈঠকে বলেছিলেন যে, ভারতের এক ইঞ্চি জমিও নেওয়া হয়নি।’
এদিকে ভারতের ক্ষমতাশীল দল বিজেপি রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে ভারতকে অবমাননা ও চীনের প্রচারণা চালানোর অভিযোগ করেছেন।
গত রোববার যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একটি আলোচনা অনুষ্ঠানে রাহুল গান্ধী বলেন, ‘ভারত, যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমের অন্যান্য দেশগুলো বেকারত্বের সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে, অন্যদিকে চীন নয়, কারণ দেশটি বিশ্বব্যাপী উৎপাদনে আধিপত্য বিস্তার করছে।’ তিনি শিক্ষার্থীদের উৎপাদনের দিকে মনোনিবেশ করার প্রয়োজনীয়তার উপর দেন।
সাবেক কংগ্রেস সভাপতি আরও বলেন, ভারতে দক্ষতার কোনো অভাব নেই। ভারত যদি উৎপাদনের জন্য নিজেকে সারিবদ্ধ করা শুরু করে তাহলে দেশটি চীনের সাথে প্রতিযোগিতা করতে পারে।
এদিকে রাহুল গান্ধীর এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বিজেপির মুখপাত্র প্রদীপ ভান্ডারি বলেছেন, বিশ্ব চিনা যুবকদের বেকারত্বের সংকট সম্পর্কে অবগত।
বিজেপি মুখপাত্র ২০০৮ সালে কংগ্রেস সরকারের সময় চীনের সঙ্গে একটি গোপন চুক্তি উল্লেখ করে বলেন, ওই চুক্তির লাভজনক আয় রাহুল গান্ধীকে ইচ্ছাকৃতভাবে ভারতকে অপমান ও চীনের গুণগান গাওয়ার উৎসাহ যোগাচ্ছে।
আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মাও কংগ্রেস নেতার বিরুদ্ধে বেইজিংয়ের প্রচার এবং ভারতকে অবমূল্যায়ন করার অভিযোগ করেছেন। গত সোমবার সরমা রাঁচির বিরসা মুন্ডা বিমানবন্দরে আসামের মুখ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘রাহুল গান্ধী বিভিন্ন উপায়ে চীনকে প্রচার করছেন। ভারতকে অবমূল্যায়ন করে তিনি চীনকে সেরা দেশ হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করেন। কিন্তু, চীনে গণতন্ত্র নেই এবং মানুষের জন্য ধর্মীয় স্বাধীনতা নেই। কিন্তু, গান্ধী সেসব প্রসঙ্গে কোনো কথা বলেন না।।’