আন্তর্জাতিক

পেজার বিস্ফোরণের ঘটনায় ইসরায়েলকে দায়ী করেছে হিজবুল্লাহ

লেবাননে সাম্প্রতিক পেজার বিস্ফোরণের ঘটনায় অন্তত ৯ জন নিহত ও প্রায় ২ হাজার ৮০০ জন আহত হয়েছেন। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, হতাহতদের মধ্যে ইরানের লেবাননস্থ রাষ্ট্রদূতও রয়েছেন। খবর বিবিসির।

বিস্ফোরণগুলো মূলত সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর সদস্যদের ব্যবহৃত পেজারগুলোতে ঘটে, যা লেবাননজুড়ে দলটির গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হয়। 

লেবাননে ইরান সমর্থিত এই সশস্ত্র গোষ্ঠীটি পেজার বিস্ফোরণের ঘটনায় তাদের ৮ যোদ্ধার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। গোষ্ঠীটি ইসরায়েলকে এই ঘটনার জন্য দায়ী করেছে এবং এটিকে ‘অপরাধমূলক আক্রমণ’ আখ্যা দিয়ে প্রতিশোধ নেওয়ার হুমকি দিয়েছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েল-লেবানন সীমান্তে প্রায় প্রতিদিনই গুলি বিনিময় হচ্ছে। হিজবুল্লাহ বলেছে, তারা হামাসের পক্ষে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। 

জাতিসংঘের মুখপাত্র বলেছেন, ‘লেবাননে সাম্প্রতিক ঘটনাটি খুবই উদ্বেগজনক, বিশেষ করে এমন সময়ে এটি ঘটলো যখন মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি খুবই অস্থির।’

মোবাইল ফোন হ্যাক বা ট্র্যাক হওয়ার ঝুঁকির কারণে হিজবুল্লাহ যোগাযোগের ক্ষেত্রে ‍পেজার ডিভাইস ব্যবহার করে থাকে। মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) স্থানীয় সময় বিকেলে রাজধানী বৈরুতসহ বিভিন্ন এলাকায় একযোগে অসংখ্য পেজার ডিভাইস বিস্ফোরিত হয়। 

এই ঘটনার পর লেবাননজুড়ে মানুষ শোক এবং হতাশায় ভুগছে। হাসপাতালে আহতদের ভিড়ে চিকিৎসকরা প্রচণ্ড চাপে আছেন। বিস্ফোরণে আহতদের বেশিরভাগেরই কোমর, মুখ, চোখ এবং হাতে মারাত্মক আঘাত লেগেছে, অনেকে হাত হারিয়েছেন। দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, আহতদের মধ্যে অন্তত ২০০ জনের অবস্থা গুরুতর।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় হিজবুল্লাহ এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘আমরা এই অপরাধমূলক আগ্রাসনের জন্য ইসরায়েলি শত্রুকে সম্পূর্ণভাবে দায়ী করছি। এই বিশ্বাসঘাতক এবং অপরাধী শত্রু অবশ্যই এই পাপপূর্ণ আগ্রাসনের ন্যায্য প্রতিশোধ পাবে।’

লেবাননের প্রধানমন্ত্রী নাজিব মিকাতিও বিস্ফোরণের জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করে বলেছেন, এ ঘটনা ‘লেবাননের সার্বভৌমত্বের গুরুতর লঙ্ঘন এবং সমস্ত মানদণ্ড দ্বারা একটি অপরাধ’ প্রতিনিধিত্ব করেছে।

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি লেবানন সরকারের কাছে ইসরায়েলি সন্ত্রাসবাদের তীব্র নিন্দা জানিয়েছৈন। 

ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্র এ ঘটনায় তাদের কোনো সম্পৃক্ততা অস্বীকার করেছে এবং ইরানকে উত্তেজনা না বাড়াতে আহ্বান জানিয়েছে।

হিজবুল্লাহ পেজারগুলো বিস্ফোরিত হওয়ার কারণ কী বলে তারা বিশ্বাস করে, তা জানায়নি।

তবে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে হিজবুল্লাহর এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বিস্ফোরিত পেজারগুলো হিজবুল্লাহ সম্প্রতি একটি নতুন চালানে পেয়েছিল। কিছু ব্যবহারকারী বিস্ফোরণের আগে পেজারগুলো গরম হয়ে ওঠার কথা জানিয়েছেন। 

এদিকে, স্কাই নিউজ অ্যারাবিয়ার খবরে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ অত্যন্ত সূক্ষ্ম পরিকল্পনার মাধ্যমে এই বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। যেসব পেজারে বিস্ফোরণ ঘটেছে সেগুলো পাঁচ মাস আগে লেবাননে যায়।

সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, লেবাননে যাওয়ার আগে এ ডিভাইসগুলো মোসাদের হাতে এসেছিল। তারা ডিভাইসটির ব্যাটারির উপর অত্যন্ত উচ্চ বিস্ফোরক পিইটিএন স্থাপন করে দিয়েছিল। এরপর দূর থেকে ব্যাটারির তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে ডিভাইগুলোতে গতকাল মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিস্ফোরণ ঘটায়।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ঘটনা হিজবুল্লাহ-ইসরায়েল সংঘর্ষে এক নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে। এতে মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি আরো গুরুতর রূপ নিতে পারে।