আন্তর্জাতিক

এবার ভারতের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলতে যাচ্ছে শ্রীলঙ্কা?

সদ্য শেষ হওয়া শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন বামপন্থী অনুরা কুমারা দিশানায়েক। মার্ক্সবাদী এই নেতার দল জনতা বিমুক্তি পেরেমুনা (জেভিপি) বরাবরই ভারতে আগ্রাসী হিসাবে দাবি করেছে। এছাড়া শ্রীলঙ্কায় ভারত সরকারের বিভিন্ন নীতির কট্টর সমালোচক ছিলেন অনুরা। সেই হিসাবে অনুরার বিজয় ভারতের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলতে যাচ্ছে বলে ধারণা করা যায়।

ভারত-শ্রীলঙ্কার কূটনৈতিক সম্পর্কে বিগত কয়েক দশকে কিছুটা উত্থান-পতন ঘটেছে। আশির দশকের শুরুতে শ্রীলঙ্কার তামিল বিদ্রোহীদের গোপনে অস্ত্র ও অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করেছিল ভারত। বিষয়টি বুঝতে পেরে একরকম বাধ্য হয়েই ১৯৮৭ সালে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট জুলিয়াস রিচার্ড জয়াবর্ধনে ভারতের সঙ্গে শান্তি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। এই চুক্তির আলোকে তামিল টাইগারদের দমনে সহায়তার হাত বাড়ায় ভারত। এসময় ভারতীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে নির্যাতন, ধর্ষণসহ বিভিন্ন অভিযোগ ওঠে। পরবর্তীতে ভারতীয় বাহিনীকে শ্রীলঙ্কার মাটি থেকে উৎখাতের জন্য দেশটির সরকার তামিল টাইগারদের সঙ্গে গোপনে আঁতাত করতে বাধ্য হয়। শেষ পর্যন্ত ১৯৯০ সালে শ্রীলঙ্কার মাটি ত্যাগ করে ভারত। 

২০২২ সালে শ্রীলঙ্কা থেকে পালিয়ে যাওয়া দেশটির তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসে এবং প্রধানমন্ত্রী গোটাবায়া রাজাপাকসে। রাজপাকসে পরিবার ছিল চীন ঘেঁষা। দেশটির বড় বড় অর্থনৈতিক প্রকল্পে চীনের বড় অংকের বিনিয়োগ ছিল। রাজাপাকসে পরিবারের বিদায়ের পর ক্ষমতায় আসনে রনিল বিক্রমাসিংহে। নতুন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ভারতের সুসম্পর্ক তৈরি হয়। অর্থনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণের জন্য শ্রীলঙ্কাকে বড় অংকের সহায়তাও দিয়েছিল ভারত।

রোববার শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন ন্যাশনাল পিপলস পাওয়ার (এনপিপি) জোটের নেতা অনুরা কুমারা দেশানায়েক। ২০২২ সালে রাজাপাকসে পরিবারকে উৎখাতে গণঅভ্যুত্থান গড়ে তুলতে সক্রিয় ছিল দিশানায়েকের দল জেভিপি। রাজাপাকসে পরিবারের পলায়নের পর রাজনীতিতে যে শূন্যতা তৈরি হয়, সেখানে বড় পরিবর্তনের ডাক দিয়েছিলেন অনুরা। তার জেভিপি ঐহিত্যগতভাবেই চীনঘেষা। অতীতে জেভিপি শ্রীলঙ্কার প্রতি ভারতের নীতির সমালোচনা করেছিল এবং এটাকে ভারতীয় সম্প্রসারণবাদ বলে আখ্যা দিয়েছিল।

দেশানায়েক তার নির্বাচনী প্রচারাভিযানের বক্তৃতার সময় ভারতীয় ব্যবসায়ী গৌতম আদানির অর্থায়নে শ্রীলঙ্কায় চলমান একটি বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিল করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।

গত সপ্তাহে তিনি বলেছিলেন, ‘বৃহৎ পরিসরের পরিপ্রেক্ষিতে আদানি প্রকল্পের ব্যয় হ্রাস করা উচিত কিন্তু এর বাস্তব চিত্র বিপরীত। এটি স্পষ্টতই একটি দুর্নীতিগ্রস্ত চুক্তি এবং আমরা অবশ্যই এটি বাতিল করব।’

প্রসঙ্গত, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সরকারের ঘনিষ্ঠজন বলে ব্যাপকভাবে পরিচিত গৌতম আদানি। স্বাভাবিকভাবেই আদানির সঙ্গে চুক্তি বাতিল করলে তার কিছুটা উত্তাপ মোদির সরকারের গায়েও লাগবে। এছাড়া চীনঘেঁষা হওয়ার কারণে দেশানায়েক স্বাভাবিকভাবেই শ্রীলঙ্কায় বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বেইজিংকেই অগ্রাধিকার দেবে। সব মিলিয়ে বলতে গেলে, শ্রীলঙ্কায় ভারতের স্বার্থ হয়তো ক্ষুন্ন হতে যাচ্ছে নতুন প্রেসিডেন্টে দেশানায়েকের আমলে।